×

আন্তর্জাতিক

পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ইউক্রেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৩, ০৯:৫৭ এএম

পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ইউক্রেন

ছবি: সংগৃহীত

রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে কিয়েভ প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওলেকসি দানিলভ। দেশটির গোয়েন্দা প্রধানও এ বিষয়ে তাগাদার কথা জানিয়েছেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর সম্প্রতি রাশিয়ায় ক্রমবর্ধমান হারে হামলার ঘটনা বাড়ছে। সাধারণত ইউক্রেন সীমান্ত লাগোয়া রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে শিগগিরই বড়সড় আক্রমণ শুরু করার কথা জানালেও এর কোনো নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করেননি ওলেকসি দানিলভ। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এটা কাল, পরশু বা সপ্তাহখানেকের মধ্যেই শুরু হতে পারে। সতর্ক করে তিনি বলেন, এই পাল্টা-আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ইউক্রেন সরকারের ভুল করার কোনো অধিকার নেই কারণ এটি একটি ‘ঐতিহাসিক সুযোগ যা আমরা হারাতে পারি না’।

ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সেক্রেটারি হিসেবে দানিলভ প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির যুদ্ধ মন্ত্রিসভার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন। বিবিসিকে দেয়া তার বিরল সাক্ষাৎকার মাঝপথে একবার বিঘ্নিতও হয়, সে সময় তার ফোনে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির একটি বার্তা আসে, যাতে তাকে পাল্টা-আক্রমণ নিয়ে আলোচনার একটি বৈঠকে হাজির হতে বলা হয়।

সাক্ষাৎকারে দানিলভ বাখমুত শহর থেকে ওয়াগনারের কিছু যোদ্ধাকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বলেও নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ওই ভাড়াটে রুশ বাহিনীকে অন্য ৩টি স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওই সেনা প্রত্যাহারের মানে এই নয় যে তারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ থামাচ্ছে। বেলারুশে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন শুরু নিয়ে ‘অস্থির হচ্ছেন না’ জানিয়ে দানিলভ বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য কোনো খবরই নয়।’

রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা-আক্রমণ শানানোর পরিকল্পনার কথা ইউক্রেন কয়েক মাস ধরেই বলে আসছে। কিন্তু সেনাদের প্রশিক্ষিত করতে এবং পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম পেতে তাদের সময় লাগছিল। আর এই সময়ের মধ্যে রাশিয়াও তাদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পাল্টা-আক্রমণের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। তাদের ধারণা, কিয়েভ সরকারের ইউক্রেনের জনগণ ও পশ্চিমা মিত্রদের এটি দেখানো দরকার যে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা লাইন ভাঙতে, যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যত যে সামরিক অচলাবস্থা আছে তার অবসান ঘটাতে এবং নিজেদের কিছু ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে তারা সক্ষম।

দানিলভ জানিয়েছেন, তাদের সশস্ত্র বাহিনী তখনই আক্রমণ শুরু করবে, যখন কমান্ডারদের হিসাবে ‘যুদ্ধের ওই পর্যায়ে সবচেয়ে ভালো ফল করার সম্ভাবনা আছে’ বলে মনে হবে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী পাল্টা-আক্রমণের জন্য প্রস্তুত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় প্রস্তুত, যেমনটা আমরা যে কোনো সময়ে আমাদের দেশের প্রতিরক্ষায় প্রস্তুত থাকি। এটা সময়ের ব্যাপার নয়। আমাদের বুঝতে হবে যে, ঈশ্বর আমাদের দেশকে সত্যিকারের স্বাধীন, বড় ইউরোপীয় দেশ হতে যে ঐতিহাসিক সুযোগ দিয়েছে, আমরা তা হারাতে পারি না। দীর্ঘ সময় ধরে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বাখমুত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেও অবস্থান নেন দানিলভ। শহরটি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টায় ইউক্রেনের বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্বীকারও করে নেন তিনি।

একই সুর ইউক্রেনের গোয়েন্দা প্রধানের : রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করার বিষয়ে তাগাদার কথা জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল কিরিলো বুদানভ। জাপানের সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে-কে গত মঙ্গলবার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রাশিয়ার দখলে থাকা ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করার মতো সব সামর্থ্য রয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর। এরই মধ্যে আমরা ন্যূনতম অস্ত্র ও সরঞ্জাম পেয়ে গেছি। আমি শুধু বলতে পারি শিগগিরই এই আক্রমণ শুরু হবে।

বুদানভ বলেন, আমাদের সেনাবাহিনীর ওপর চালানো ৯০ শতাংশ হামলা প্রতিহত করা হচ্ছে। কিন্তু সরঞ্জাম কেন্দ্র ও পুনর্গঠনে থাকা সেনাদের ওপর রুশ হামলার কারণে কিয়েভের পাল্টা আক্রমণ পরিকল্পনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের আরো অস্ত্রের প্রয়োজন। আমাদের যুদ্ধবিমান প্রয়োজন। আশা করি আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় এই সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছে।

রাশিয়ায় তেল পাইপলাইনের ভবনে ড্রোন হামলা : রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় পসকভ অঞ্চলের একটি তেল পাইপলাইনের প্রশাসনিক ভবনে ড্রোন হামলা হয়েছে। দুটি ড্রোনের আঘাতে ওই ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে গতকাল শনিবার আঞ্চলিক গভর্নর মিখাইল ভেদেরনিকভ জানিয়েছেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর স¤প্রতি রাশিয়ায় ক্রমবর্ধমান হারে হামলার ঘটনা বাড়ছে।

গভর্নর মিখাইল ভেদেরনিকভ বলেন, শনিবার সকালের দিকে নেভেলস্কি জেলার লিটভিনোভোর কাছে তেল পাইপলাইনের প্রশাসনিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, দুটি মনুষ্যবিহীন যানের হামলায় ভবনটির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লিটভিনোভোর গ্রামটির অবস্থান বেলারুশের সীমান্তের কাছে।

এর আগে, শুক্রবারও রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ক্রাসনোদারের কেন্দ্রস্থলের বিভিন্ন ভবনকে লক্ষ্য করে দুটি ড্রোন হামলা হয়। এতে একাধিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাশিয়ার বেলগোরোদে হামলায় মার্কিন সাঁজোয়া যান : ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাশিয়ার বেলগোরোদ অঞ্চলে গত সোমবার বড় ধরনের সশস্ত্র হামলা হয়। হামলায় ব্যবহৃত যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যান ‘হামভি’র ছবিও প্রকাশ করেছে মস্কো। যদিও বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে বাইডেন প্রশাসন। বেলগোরোদে হামলার পেছনে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর ‘নাশকতাকারী’ দলকে দায়ী করছে রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, নাশকতাকারী গোষ্ঠী পিছু হঠে আবার ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে ফিরে গেছে। হামলাকারীদের মধ্যে প্রায় ৭০ জনকে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল বলে দাবি করছে ক্রেমলিন। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ বলেন, ‘হামলায় ব্যবহৃত মার্কিন সরবরাহকৃত সাঁজোয়া যানের ছবি সামাজিক যোগাযোগ বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করা হলেও ছবিগুলোর সত্যতা নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘যুদ্ধ কীভাবে পরিচালনা করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ইউক্রেন। রুশ ভূখণ্ডে হামলাকে আমরা কখনো সমর্থন করিনি।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App