×

সারাদেশ

অলিগলিতে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৩, ১০:০৫ এএম

অলিগলিতে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার

বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণাযুদ্ধে ভোটের মাঠ জমে হয়ে উঠলেও তাতে সাড়া নেই ভোটারদের। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবারের সিটি নির্বাচনে ভোটের মাঠে না থাকলেও দল নিরপেক্ষ সাধারণ ভোটাররা এই ইস্যুতে অনেকটাই নীরব ভূমিকা পালন করছেন। এমনকি ভোটের দিন তারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন কিনা তা নিয়েও অনেকে সংশয়ে রয়েছেন। এ অবস্থায় ভোটের দিন অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি উদ্বেগজনকহারে কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন অভিজ্ঞ মহল। তবে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে নানা কৌশল অবলম্বন শুরু করেছেন। অবশ্য অপর ছয় মেয়র প্রার্থী সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে আশঙ্কা করলেও সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা। নগরবাসীকে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

এদিকে ভোট সুষ্ঠু করতে বরিশালে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য বরিশালে এসেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। শনিবার বিকালে তিনি বিমানযোগে বরিশালে আসেন।

নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের পর বরিশাল নগরী সেজেছে ভিন্ন রূপে। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই পোস্টার। রাস্তায় রাস্তায় মাইকিং। কোথাও আবার শোভাযাত্রা। অলি-গলিতে নির্বাচনী প্রচার বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। সাড়ে ৪ বছর পর আবারো নির্বাচনী স্বপ্ন পূরণে নেমেছেন ৭ মেয়র, ১১৬ সাধারণ কাউন্সিলর ও ৪২ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী। প্রতিদিন পথসভা, জনসভা, উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। তবে বেশি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

দেখা গেছে, কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত অবধি মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোট প্রার্থনায় ভোটারের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে এসব কর্মকাণ্ডে যোগ দিয়েছে ভাড়াটে কর্মীরাও। সিটি ভোটকে ঘিরে রাজনীতির মাঠও এখন সরগরম। অথচ সবকিছুর পরও ভোটের মাঠে সাধারণ ভোটারের আগ্রহের কোনো প্রতিফলন নেই। চায়ের দোকানগুলোতে দৃশ্যমান হচ্ছে না ভোটের সরব আলোচনা। কেউ কেউ বলছেন বিএনপি নির্বাচনে না আসায় নির্বাচনী মাঠে জনগণের মধ্যে তেমন কোনো উদ্দীপনাও দেখা যাচ্ছে না। তবে তারা থাকলে ভোটের মাঠ জমজমাট হয়ে উঠত বলে মনে করেন তারা।

বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, গত ১০ বছরে বরিশাল নগরীকে অনেক পিছিয়ে নেয়া হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলে কোথাও কোথাও বুক সমান পানি জমে যায়। এখনো অনেক স্থানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। বরিশালবাসীকে যে অবহেলা করা হয়েছে তা দুঃখজনক। সবচেয়ে বেশি জুলুম করা হয়েছে অতিরিক্ত মাত্রার ট্যাক্স বসিয়ে দিয়ে। নির্বাচিত হতে পারলে হোল্ডিং ট্যাক্স মানুষের সহনীয় পর্যায়ে করা হবে।

তিনি আরো বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে উন্নয়নের যে কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন তা থেকে বরিশাবাসী বঞ্চিত রয়েছে। শুধু তাই নয়, এখানে মাদকের রয়েছে ভয়াবহ অবস্থা। নির্বাচিত হতে পারলে নগরী হবে মাদকমুক্ত। সৃষ্টি করা হবে নতুন কর্ম সংস্থান। পরিবেশ তৈরি করা হবে শিল্প কারখানা স্থাপনের। আমাদের পূর্বপুরুষ যারা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন তাদের আদর্শ অনুসরন করেই চলবে বরিশাল সিটি করপোরেশন।

জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, ডুবন্ত নৌকায় কেউ উঠবে না। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনারা দেখেছেন কিভাবে জনগণ নৌকাকে ডুবিয়ে দিয়েছে। এছাড়া মির্জাগঞ্জ ও নাজিরপুরের উপনির্বাচনেও নৌকা ডুবে গেছে। জনগণ ভোট দিতে পারলে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেবে না। বিগত ১৫ বছর বরিশালের ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি। এবার সুযোগ পেলে ভোটের বাক্স লাঙলে ভরে যাবে। তিনি আরো বলেন, আমার কালোটাকার পাহাড় নেই, আছে বুকভরা সাহস ও ভালোবাসা। গুন্ডা আর মস্তানির রাজনীতি আমি করি না। আমি মানুষের রাজনীতি করি, মানুষের পাশে থাকতে চাই। আমি আপনাদের কর্মচারী ও সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, গণসংযোগের সময় মানুষ যেভাবে আমাকে আশ্বস্ত করছে তাতে আমার মনে হচ্ছে মানুষ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিগত প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনগুলোর কারণে আমরা ফলাফল হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত শঙ্কামুক্ত নই। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে নির্বাচন কমিশনের ওপর সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আমাদের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সুতরাং যাতে ভোটে কারচুপির সুযোগ না পায় সেক্ষেত্রে নগরবাসীকে সজাগ থাকতে হবে।

ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন বলেন, এই সরকারের আমলে দেশের কোথাও সুষ্ঠু ভোট হয়নি। তাছাড়া নির্বাচন কমিশনও তাদের আজ্ঞাবহ। সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ হলে নগরবাসী ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন দাবি করে তিনি বলেন, নির্বাচিত হতে পারলে অবহেলিত নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়েই নগরীর উন্নয়ন করা হবে। নগরভবন থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত।

এদিকে শনিবার বিকালে বরিশালে এসে পৌঁছেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আজ রবিবার সকাল ১০টা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন সিইসি। এছাড়া দুপুর আড়াইটায় বরিশাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক করবেন সিইসি। এরপরই তিনি ঢাকায় ফিরে যাবেন। সিইসির একান্ত সচিব মো. রিয়াজ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App