×

সারাদেশ

সিলেটের মেয়র হতে চান ব্যবসায়ী, ভূমিহীন, স্বশিক্ষিতও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৩, ০৮:১৭ পিএম

সিলেটের মেয়র হতে চান ব্যবসায়ী, ভূমিহীন, স্বশিক্ষিতও

মেয়র প্রার্থী। ছবি: সংগৃহীত

# ছালাহ উদ্দিন রিমনের ৫ মামলা # শাহজাহান মিয়া ও আব্দুল মান্নান খান ভূমিহীন # নজরুল ইসলাম বাবুল, সামছুন নুর তালুকদার ও আব্দুল মান্নান খান স্বশিক্ষিত

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে স্বশিক্ষিত তিনজন, দুইজন ভূমিহীন মেয়র প্রার্থীসহ এ পদের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১১ প্রার্থী। এদের মধ্যে ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৭ প্রার্থী, দুইজন শিক্ষক, অপর দুইজন অবসরপ্রাপ্ত পেনশনার ও লন্ডনি আইনজীবী। সম্প্রতি সিসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের জমা দেয়া ১১ জনের হলফনামা তর্জমা করে এ তথ্য জানা গেছে।

১১ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মনোনয়ন বৈধ হওয়া মেয়রপ্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা) ও জাকের পাটির মো. জহিরুল আলম (গোলাপ ফুল), মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু (স্বতন্ত্র) ও মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন (স্বতন্ত্র)। তাদের মধ্যে বাছাইয়ে বাদ পড়লেও আপিলে ভাগ্য ঝুলে আছে সামছুন নুর তালুকদার, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান, মাওলানা জাহিদ উদ্দিন, মো.শাহজাহান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফার।

ঋণখেলাপি, প্রস্তাবক-সমর্থকরা অন্য এলাকার বাসিন্দা, আয়কর রিটার্ন জমা না দেওয়াসহ নানা কারণে এসব মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদির জানিয়েছেন।

হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, এইচএসসি পাস আব্দুল হানিফ কুটু পেশায় ব্যবসায়ী। বছরে তিনি আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজ নামে রয়েছে ১৭ লাখ ৭০ হাজার এবং স্ত্রীর নামে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার গাড়িও আছে। স্বর্ণালঙ্কার নিজ নামে ২ লাখ ও স্ত্রীর নামে আছে ২ লাখ টাকার। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রি ও আসবাবপত্র নিজ নামে এক লাখ টাকার। তবে স্থাবর সম্পদ ও ব্যাংকে দায়দেনা এবং মামলা নেই।

মাধ্যমিকের গণ্ডী পার না হলেও মেয়র হতে চান চাঁদপুর জেলার স্থায়ী বাসিন্দা স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. জহিরুল আলম। নগরের লালদিঘীরপাড়ে ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন অষ্টম শ্রেণি। স্বর্ণের ব্যবসায় তার বছরে আয় ২০ লাখ ও নির্ভরশীলদের থেকে ৭ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ ২০ লাখ টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১০ লাখ টাকা, নিজ নামে আছে ৪ ভরি স্বর্ণ এবং ইলেক্ট্রনিক সামগ্রি ও আসবাবপত্র দেখিয়েছেন ৯ লাখ টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে বাড়ি আছে ২টি। তবে পরিমাণ ও দাম উল্লেখ করেননি। ব্যাংকে দায়দেনা ও মামলা নেই তার।

পেশায় শিক্ষক মৌলানা জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী দাওরায়ে হাদিস টাইটেল পাস। তিনি একটি মাদরাসার প্রিন্সিপাল, শিক্ষকতা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। অস্থবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ ২০ হাজার টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে এক লাখ টাকা। আসবাবপত্রের মধ্যে ফ্রিজ ১টি, খাটপালং সোফা উল্লেখ করলেও দাম দেখাননি। স্থাবর সম্পদ বলতে দেখিয়েছেন অকৃষি জমি ৫০ শতক ও ১টি বাড়ি। তবে ব্যাংক দায়দেনা নেই।

সিসিকে আলোচিত মেয়র প্রার্থী স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন। প্রতিবার মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। স্বশিক্ষিত রিমন ৫ মামলার আসামি। স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের একটি মামলায় খালাস পেয়েছেন। এছাড়া বিচারাধীন মামলা আছে ৩টি, গ্রাম আদালতে রয়েছে আরও একটি। ব্যবসায়ী হলেও কৃষিখাতে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৬০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ নগদ আছে ১ লাখ ৭৫ হাজার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ১৬ হাজার টাকা। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রি দেখিয়েছেন আরও ১ লাখ টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১৫ শতক কৃষি জমির মালিক তিনি। মূল্য দেখিয়েছেন ৬০ লাখ টাকা। ব্যাংকে দায়দেনা নেই এই প্রার্থীর।

পেশায় শিক্ষক নগরের মুফতিবাড়ি দরগাহ মহল্লাহ বাসিন্দা মো. শাহজাহান মিয়া নিজেকে ভূমিহীন দেখিয়েছেন হলফনামায়। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ নেই এই প্রার্থীর। কেবল শিক্ষকতা থেকে আয় দেখিয়েছেন ৭০ হাজার টাকা। তবে ব্যাংকে দায়দেনা নেই।

স্বশিক্ষিত মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খানও মেয়র প্রার্থী। পেশার স্থলে দেখিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত পেনশনার। নিজের ও নির্ভরশীলদের কোনো আয় দেখাননি তিনি। অস্থাবর সম্পদ বলতে হাতে আছে নগদ ১০ হাজার টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে একলাখ টাকা। তবে স্থাবর সম্পদ নেই। স্ত্রীর ৫ ভরি স্বর্ণ এবং নিজের নামে আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রি দেখিয়েছেন ১ লাখ টাকার। কোনো দায়দেনা ও মামলা নেই।

বিএসসি ডিগ্রিধারী মোস্তাক আহমেদ রউফ মোস্তফা পেশার স্থলে দেখিয়েছেন গ্রামে কৃষি, শহরে পারিবারিক ব্যবসা এবং ব্যক্তিগতভাবে একজন আইনজীবী, লন্ডনে আইনপেশায় যুক্ত। কৃষিখাতে বছরে আয় দেখিয়েছেন ৫ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ২০ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ১০ লাখ, নির্ভরশীলদের আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ টাকা। বৈদেশিক মুদ্রা পাউন্ড দেখালেও পরিমাণ উল্লেখ করেননি। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৭ লাখ এবং নির্ভরশীলদের নামে ৩ লাখ টাকা। তার মোটরসাইকেল আছে ২টি, নিজনামে দেখিয়েছেন গলার হার, কানের দুল এবং ইলেক্ট্রনিক সামগ্রি ও আসবাবপত্র। তবে পরিমাণ ও মূল্য উল্লেখ করেননি। কৃষিখাত দেখিয়েছেন পৈতৃক। ব্যাংকে দায়দেনা ও মামলা নেই।

পেশায় ব্যবসায়ী সামছুন নুর তালুকদার প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি। পড়ালেখা ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ আছে ৩ লাখ টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আরও ৩ লাখ। স্ত্রীর ২ ভরি স্বর্ণ, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রি, আসবাবপত্র দেখালেও মূল্য উল্লেখ করেননি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে কৃষি জমি নিজ নামে ৩০ শতক ও অকৃষি ৪ শতকের বাড়ি। তবে ব্যাংকে দায়দেনা নেই।

এছাড়া আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান পেশায় ব্যবসায়ী এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ অনার্স। স্বশিক্ষিত হলেও শিল্পপতি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বাবুলের আছে ৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন এলএলবি। হলফনামায় ট্রাভেল ব্যবসা দেখিয়েছেন তিনি।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ২৩ মে। এই দুই সিটিতে মনোনয়নপত্র বাছাই হয় ২৫ মে, বৃহস্পতিবার। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিলের সময় ২৬ থেকে ২৮ মে, শুক্র থেকে রবিবার। আপিল নিষ্পত্তি ২৯ থেকে ৩১ মে, সোম থেকে বুধবার। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন, বৃহস্পতিবার। প্রতীক বরাদ্দ ২ জুন, শুক্রবার এবং এই দুই সিটিতে ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ জুন, বুধবার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App