×

সারাদেশ

মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় চাই যুগোপযোগী পরিকল্পনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৩, ১১:২৬ এএম

মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় চাই যুগোপযোগী পরিকল্পনা

ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে বৈশ্বিক অস্থিরতার আঁচ দেশের অর্থনীতিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। তাই বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীল খাতকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে একটি শিল্প ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই।

ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্বায়ন পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে দেশের বেসরকারি খাতকে দৃঢ় অবস্থানে স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টির জন্য একটি সুদূরপ্রসারী, বাস্তব ও যুগোপযোগী পরিকল্পনার প্রতিফলন বাজেটে থাকবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ট্রিলিয়ন ডলার বা লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি হতে যাচ্ছে। কিন্তু রাজস্ব বোর্ডের অনেক ঘাটতি আছে। তাদের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, দেশে জ্বালানি সংকটে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ডলারের অস্থিরতায় ঋণপত্র খোলা ও পণ্য আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে মূল্যস্ফীতিও বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাই এসব সমস্যা বিবেচনায় নিয়েই আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের দাবি জানান তিনি।

এফবিসিসিআইয়ের বাজেট প্রস্তাবনায় রয়েছে- এলডিসি হতে উত্তরণ পরবর্তীতে কাস্টমস, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও আয়কর সংক্রান্ত যেসব ধরনের বিধি-বিধান ও পদ্ধতি ডব্লিউটিও/ডব্লিউসিও এবং আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ থাকবে না- সেগুলো চিহ্নিত করা এবং প্রয়োজনীয় আইনি ও পদ্ধতিগত সংস্কারের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়ন। এছাড়া রাজস্ব প্রশাসনে ব্যবসাবান্ধব ও করদাতা সহায়ক প্রয়োজনীয় সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ জোরদার করা এবং আমদানি শুল্ক, আয়কর এবং মূসকের বিষয়ে বিদ্যমান বিধি-বিধানের ব্যবসা এবং শুল্ক-করবান্ধব সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা ইত্যাদি। এসবের সমাধান না হলে ব্যবসার প্রসার আশানুরূপভাবে ঘটবে না বলে মনে করছে সংগঠনটি।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করতে ব্যবসায় খরচ কমানো উচিত। সেইসঙ্গে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, সবরকম পরিবহন খরচ কমানো, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ নানা ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি। এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাবনায় রয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে বিনিয়োগ, দেশীয় শিল্প ও সেবা এবং কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পকে (সিএমএসএমই) শুল্ক করের যৌক্তিক প্রতিরক্ষণ। ক্ষেত্র বিশেষে অব্যাহতি বা বন্ড সুবিধা দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ভিত্তিতে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, রপ্তানি বাজার স¤প্রসারণ ও বহুমুখীকরণ। নিত্যপণ্য মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা। করনীতি, কর পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে কর নেট বা কর জাল স¤প্রসারণ। স্বেচ্ছায় কর প্রতিপালন হার বৃদ্ধিপূর্বক রাজস্ব আদায় তথা কর জিডিপির অনুপাত বাড়ানো। আয় ও কর্মসংস্থান বাড়িয়ে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানো, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষা এবং শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো।

অন্যান্য প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে- রাজস্ব আদায় এবং নীতি কার্যক্রম আলাদা করে এনবিআরে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বিভাগ গঠন, মুদ্রা পাচারে সহায়ক ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা পরিপন্থি বিদ্যমান ট্যারিফ মূল্য ও মিনিমাম ভ্যালুসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন রহিত করে এর পরিবর্তে বিনিময় মূল্য সিস্টেম চালু করা। প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকদের প্রদত্ত বন্ড সুবিধার বাইরে অন্যদের জন্য কেন্দ্রীয় বন্ড ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। জমি ক্রয়, নির্মাণ এবং শিল্প ও সেবা খাতের ইউটিলিটি বিলসহ সব উৎপাদনশীল খাতের যাবতীয় প্রশাসনিক সেবা সম্পূর্ণ পরোক্ষ করমুক্ত রাখা। আমদানি শুল্কের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি, তালিকাভুক্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, মৌলিক এবং দেশে উৎপাদন হয় না এমন কাঁচামালের শুল্কহার ১ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে তালিকাভুক্ত পণ্য বা সেবায় নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা। জ্বালানি সাশ্রয় ও পরিবেশবান্ধব গাড়ির শুল্কহার কমানো।

এছাড়া মূসকের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যন্ত ভ্যাট অফিসের কার্যক্রম স¤প্রসারণ করে সক্ষম ভ্যাটদাতাদের ভ্যাটজালের আওতায় আনা। আমদানিকৃত উপকরণের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ আগাম কর ধাপে ধাপে রহিত করা। নিম্ন আয় এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যবহার্য পণ্য, সাধারণ পণ্য পরিবহন, নিত্যপণ্য ও সেবা, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্পের কাঁচামাল বা উপকরণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রিসাইক্লিং, টেন্ডারবহির্ভূত সরাসরি পণ্য মেরামতসহ অন্যান্য খাতে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি দেয়া। রিটার্ন দাখিল, রিফান্ড, অডিটসহ সব কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অটোমেশন নিশ্চিত করা। এসএমই শিল্প বিকাশ ত্বরান্বিত করতে প্রিন্টিং শিল্প, প্যাকেজিং ও বাইন্ডিং সরবরাহকারীদের উৎসে আয়করের বাইরে আনা, সবরকম নিত্যপ্রয়োজনীয় তালিকাভুক্ত ভোগ্যপণ্যকে উৎসে করের আওতামুক্ত রাখা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App