×

সারাদেশ

প্রতীক পেয়েই প্রার্থীরা মাঠে : দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৩, ১১:০৬ এএম

প্রতীক পেয়েই প্রার্থীরা মাঠে : দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি

ছবি: সংগৃহীত

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪ মেয়র প্রার্থীসহ ১৭৯ জনের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় থেকে শুরু করে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদের মাঝে এ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন তার সম্মেলন কক্ষে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দের কাগজ তুলে দেন।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক নৌকা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আব্দুল আউয়াল হাতপাখা, জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু লাঙ্গল ও জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন গোলাপফুল প্রতীক পেয়েছেন। প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী এবং কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমে পড়েন। নিজের পক্ষে রায় নিতে ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় খুলনা নূরনগর এলাকায় নির্বাচন ভবনে বিভাগীয় নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে আসনে মেয়র প্রার্থীরা। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দলীয় মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক সকাল পৌনে ১০টায় প্রতীক নিতে আসেন রিটার্নিং কর্তকর্তার সম্মেলন কক্ষে। সেখান থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নগরীর নিউ মার্কেট বাজারে দোকানদার ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে তার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।

এ সময় তিনি নিউ মার্কেটসহ আশপাশের এলাকার নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। খুলনার উন্নয়নের জন্য, সাধারণ মানুষের নাগরিক সেবা দেয়ার লক্ষ্যে নৌকা মার্কায় ভোট চান তালুকদার আব্দুল খালেক।

গণসংযোগকালে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ১২ জুন নির্বাচনে আমি পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হলে খুলনায় স্মার্ট স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু করা হবে। তিনি বলেন, বিএনপি খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে কিছুই দেয়নি। এ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে প্রতারণাা করেছে। আওয়ামী লীগ যে প্রতিশ্রুতি দেয়, সেটা বাস্তয়ান করে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি করেছেন। রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে সবকিছুর চিত্র পাল্টে দিয়েছেন। আগামীতে খুলনাকে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী।

গণসংযোগকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, দপ্তর সম্পাদক মাহাবুবুল আলম সোহাগ, তসলিম উদ্দীন আশা ও যুবলীগ নেতা শফিকুর রহমান পলাশ। তালুকদার আব্দুল খালেক ৩১নং ওয়ার্ডের মোক্তার হোসেন সড়কের হাজী আব্দুল মালেক মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন।

নামাজ শেষে ওই এলাকায় সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। বিকাল ৫টায় দৌলতপুর দিবানৈশ কলেজে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করেন তালুকদার আব্দুল খালেক। মাগরিবের নামাজের পর খুলনা প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়ামে খুলনা অঞ্চলের রোটারিয়ানদের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন তিনি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির ও দলীয় মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল সকাল সাড়ে ১০টায় রিটার্নিং কর্তকর্তার সম্মেলন কক্ষে প্রতীক নিতে আসেন। হাতপাখা প্রতীক নিয়ে বেলা ১১টায় তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েন। নগরীর ফুলবাড়ি গেট, দৌলতপুর বাজার, নতুন রাস্তা খালিশপুর, নিউমার্কেট, ডাকবাংলা, সোনাডাঙ্গা ও রুপসাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন মেয়র প্রার্থী আব্দুল আউয়াল।

এ সময় বেশ কয়েকটি স্থানে পথসভায় বক্তৃতাও করেন তিনি। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, নগরবাসী একজন সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত এবং আল্লাহভীরু লোককে নিজেদের নগরপিতা হিসেবে বেছে নেবে। দেশবাসী আজ পরিবর্তন চায়। আর এ পরিবর্তনের সূচনা খুলনা থেকেই শুরু হবে, ইনশাআল্লাহ। এ সময় তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত উন্নত সিটি গড়তে খুলনা সিটিতে আল্লাহভীরু মেয়র নির্বাচিত করতে হবে। অতীতে যারাই ক্ষমতায় ছিল তারাই সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকের মাধ্যমে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। নগরবাসীর সমস্যা লাঘবে ব্যর্থ হয়েছেন বারবার।

জলাবদ্ধতা, মশকনিধন ও দূষণমুক্ত নগর গড়তে পারেননি তারা। আগামী ১২ জুন সিটি নির্বাচনে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করলে নগরকে একটি মডেল নগরীতে পরিণত করব ইনশাআল্লাহ। জনসংযোগকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কেসিসির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগরের প্রধান পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী পরিচালক আলহাজ মুফতি আমানুল্লাহ, সমন্বয়নকারী মুফতি ইমরান হুসাইন, নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট শেখ হাসান ওবায়দুল করিম, অর্থ সমন্বয়নকারী আবু গালিব, সহসমন্বয়নকারী রবিউল ইসলাম তুষার, মিডিয়া সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল নোমান, ফেরদৌস গাজী সুমন, গণসংযোগ সমন্বয়কারী মো. সাইফুল ইসলাম, সহমিডিয়া সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল-মামুন, সহমিডিয়া সমন্বয়ক এম এ সাদী, প্রকাশনা সমন্বয়কারী মাহাদী হাসান মুন্নাসহ থানা ও ওয়ার্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও খুলনা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি দলীয় মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু সকাল পৌনে ১১টায় প্রতীক নিতে আসেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সেখান থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন জাতীয় পার্টির এই কেন্দ্রীয় নেতা। শফিকুল ইসলাম মধু বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর ডাকবাংলা এলাকা থেকে শুরু করেন নির্বাচনী প্রচারণা। জুমার নামাজের পর থেকে রাত পর্যন্ত তিনি বৈকালীর মোড়, খালিশপুর, দৌলতপুর বাজার, রেলগেট, ফুলবাড়ী গেট, বয়রা বাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি রিকশাচালাক, দোকানদারসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

খুলনা নগরীর জলাবদ্ধতা দূরকরণসহ উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু। গণসংযোগকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য দিদার বক্স, বাবু সুনীল শুভ রায়, কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পদক মাওলানা এস এম আল জোবায়ের, খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক কে এম হাদিউজ্জামান, অধ্যাপক গাউসুল আজম, তৈয়মুর হোসেন শাহিন মো. রাসেল।

সকাল সোয়া ১০টায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতীক নিতে আসেন জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন। এ সময় তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিনের কাছ থেকে গোলাপফুল প্রতীকের কাগজ নেন। তবে প্রতীক পেয়েই তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় নামেননি। আজ শনিবার সকাল থেকে গণসংযোগের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রচারণার কার্যক্রম শুরু করবেন বলে জানান জাকের পার্টির এই মেয়র প্রার্থী।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাজনৈতিক দলের ৪ মেয়র প্রার্থীর প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। বেলা ১১টার পর থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সাধারণ ৩১টি ওয়ার্ডের ১৩৬ জন ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের ৩৯ জন প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। তিনি আরো জানান, প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে চলছে কিনা তা মনিটরিং করার জন্য শুক্রবার থেকেই মাঠে কাজ করছেন ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারাও বিষয়টি মনিটরিং করবেন।

উল্লেখ্য, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার মোট ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ ও নারী ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন। এবারের নির্বাচনে ২৮৯টি কেন্দ্রে ভোট নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App