×

খেলা

টানা চতুর্থ শিরোপা ঘরে তুলে কিংসের ইতিহাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৩, ১০:৪০ এএম

টানা চতুর্থ শিরোপা ঘরে তুলে কিংসের ইতিহাস

ম্যাচ জিততে পারলেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শিরোপা নিজেদের, এমন সমীকরণ সামনে রেখে নিজেদের মাঠে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে লড়তে নামে বসুন্ধরা কিংস। ১০ গোলের নাটকীয়তা শেষে তারা ৬-৪ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে টানা চতুর্থবারের মতো শিরোপা জেতে। এই জয়ের মধ্য দিয়ে প্রথম দল হিসেবে টানা চারটি শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়েছে কিংস। বিপিএলে দিনের অন্যান্য ম্যাচের মধ্যে উত্তরাকে ১-০ গোলে হারায় চট্টগ্রাম আবাহনী। তাছাড়া মোহামেডান বনাম ঢাকা আবাহনীর ম্যাচটি শেষ হয় ১-১ গোলের সমতায়।

শক্তিশালী বসুন্ধরা কিংসের শিরোপাজয়ের উদযাপন করতে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন সমর্থকরা। তাই বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার অর্ধেকেরও বেশি ভরে গিয়েছিল লাল জার্সিতে। শেষ পর্যন্ত ইতিহাস গড়তে সক্ষমও হয় কিংস। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলে প্রথম দল হিসেবে টানা চারটি লিগ শিরোপা জয় করে ক্লাবটি। এর আগে ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার শিরোপার মালিক হয়েছিল আবাহনী। এরপর ১৯৮৬-৮৮ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার শিরোপা ঘরে তোলে মোহামেডান। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ চালু হয়। এরপর টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী। টানা তিনবার শিরোপা ঘরে তোলার রেকর্ড একাধিক দলের দখলে থাকলেও এবার প্রথম দল হিসেবে টানা চারটি শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে বসুন্ধরা কিংস।

লিগ শিরোপা জয়ের পর কিংস কোচ অস্কার ব্রুজেন স্বস্তির সঙ্গে বলেন, ‘কঠিন একটা মৌসুম ছিল। অনেক ম্যাচ, প্রতিযোগিতা ছিল। চোট, জাতীয় দলের খেলা, টানা খেলার অবসাদও ছিল- আমাদের এগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে। তবে আমি মনে করি, মৌসুমের অধিকাংশ সময় আমরা শীর্ষে ছিলাম এবং প্রিমিয়ার লিগ ও স্বাধীনতা কাপ জেতায় মৌসুম নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট থাকতে পারি।’

টানা চার শিরোপা জয় করে সামনে এএফসির লক্ষ্যের কথা জানিয়ে কিংস মিডফিল্ডার সোহেল রানা বলেন, ‘এটা জীবনের বিশেষ একটা অর্জন। ফুটবল খেলাটা ছেড়ে দেয়ার পর এই স্মৃতি জীবনের সঙ্গে থাকবে। টানা চারবার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া, এটা বাংলাদেশে প্রথম; তো এটার সাক্ষী হতে পেরে অবশ্যই নিজের কাছে ভালো লাগছে। যে লক্ষ্যে বসুন্ধরা দল গড়েছে, সে লক্ষ্য সফল হয়েছে। এখন সামনে এএফসি কাপ। আমাদের এখন লক্ষ্য এএফসি কাপে ভালো করা।’

টানা চতুর্থ শিরোপা ঘরে তোলার রেকর্ড গড়তে ভালোই লড়াই করতে হয়েছে কিংসের খেলোয়াড়দের। নিজেদের মাঠে খেলা হলেও তাদের প্রতিপক্ষ শেখ রাসেল লড়াই করেছে সমানে সমানে। শিরোপা জিততে কিংসের একমাত্র লক্ষ্য ছিল জয়। এই লক্ষ্যে শুরু থেকেই আক্রমণ চালায় দলটি। এর সুবাদে ম্যাচের ৬ মিনিটের মধ্যেই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড দোরিয়েলতনের গোলে লিড পায় কিংস। লিড পেয়ে আরো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে এর আগে টানা তিনবারের শিরোপাজয়ী দলটি। কিংসের চাপে কোণঠাসা না হয়ে সমানে সমানে লড়াই চালায় শেখ রাসেল। বল দখলে রাখতে না পারলেও তাদের আক্রমণ ছিল বেশি ধারালো। ২৬তম মিনিটে সুজন বিশ্বাসের দুর্দান্ত গোলে ম্যাচ সমতায় ফেরায় শেখ রাসেল। এর ১২ মিনিট পরই দীপক রায়ের গোলে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় দলটি। এতক্ষণ দাপট দেখাতে থাকা কিংস এক গোলে পিছিয়ে পড়ার পর সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটেই তারা কাক্সিক্ষত গোলের দেখা পায়। এবার গোল করেন রবিনহো। এর ১ মিনিট পরই ৩-২ ব্যবধানে দলকে এগিয়ে নেন কিংসের তরুণ ফরোয়ার্ড মোরসালিন। বিরতির আগে আর কোনো গোল হয়নি।

বিরতির পর পুরো সময়টা ছিল দোরিয়েলতনের। ৫০তম মিনিটে তিনি নিজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ গোলটি করেন। এরপর এই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ৬৫তম মিনিটে পূর্ণ করেন হ্যাটট্রিক। শেখ রাসেলের জালে ৭৬তম মিনিটে শেষ গোলটিও করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে পড়া ম্যাচে তারা ৬-৪ গোলের জয় পেয়ে ৩ ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা নিশ্চিত করে। চেষ্টা চালিয়ে পরাজয় ঠেকাতে না পারলেও রেকর্ড গড়েই মাঠ ছাড়ে শেখ রাসেল। প্রথম দল হিসেবে তারা কিংসের জালে চারটি গোল দেয়। পুরো ম্যাচজুড়ে শেখ রাসেলের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা চারটি শট নিয়েছিল। যার মধ্যে তিনটিই লক্ষ্যভেদ করতে পেরেছে। আর শেষ গোলটি পেনাল্টি থেকে করেন ইকেচুকু।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের আরেক ম্যাচে উত্তরার বিপক্ষে খেলতে নামে চট্টগ্রাম আবাহনী। ম্যাচটি পুরো সময়জুড়েই ছিল আবাহনীর দখলে। বল দখলে রেখে অনেকগুলো আক্রমণ করতে পারলেও তারা গোলের দেখা পাচ্ছিল না। কেননা উত্তরার খেলা ছিল রক্ষণাত্মক। বল দখলের লড়াইয়ে দুজন আক্রমণভাগের খেলোয়াড়কে নিয়োজিত করে বাকি খেলোয়াড়রা দৃঢ়তার সঙ্গে পাহাড়া দিয়েছে নিজেদের রক্ষণ। তবে শেষ পর্যন্ত একের পর এক আক্রমণের সুবাদে একটি গোল করে চট্টগ্রাম আবাহনী। দলটির হয়ে ম্যাচের ৮৬ মিনিটে গোল করেন রায়হান। তার একমাত্র গোলেই ১-০ ব্যবধানে জয় পায় চট্টগ্রাম আবাহনী।

দিনের অন্য ম্যাচটি সমতায় শেষ করে ঢাকা আবাহনী ও মোহামেডান। বল দখলের সঙ্গে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে সমানে সমানে লড়াই করে দুই দল। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে মোডামেডানের এক আক্রমণে বাধা দিতে গিয়ে ডি-বক্সের ভেতর ফাউল করে বসেন আবাহনীর এক ডিফেন্ডার। সঙ্গে সঙ্গেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট কিক থেকে গোল করে মোডামেডানকে এগিয়ে নেন দিয়াবাতে। দ্বিতীয়ার্ধে খেলা গড়ায় মাঝমাঠে। দুই দলই বল দখলে রেখে মাঝমাঠে খেলা সীমাবদ্ধ রাখে। তবে ঢাকা আবাহনীর খেলোয়াড়রা ম্যাচ সমতায় ফেরানোর সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। তাদের অপেক্ষাও শেষ হয় একটি পেনাল্টি পেয়ে। ম্যাচের ৮৩তম মিনিটে এলিটা কিংসলে স্পট কিক থেকে গোল করে আবানীকে ১-১ গোলের সমতায় ফেরায়। শেষ পর্যন্ত আর এই স্কোরলাইনে পরিবর্তন আসেনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App