×

মুক্তচিন্তা

মনের যত্ন নিন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৩, ১২:২৮ এএম

মনের যত্ন নিন

ছোট একটা জীবন। যে জীবন নিয়ে কত আয়োজন, আমোদ-উল্লাস। ছোট এই জীবনে আমরা আমাদের পরিবার-পরিজন, সমাজের কাছেই নির্ভরশীল। যখন এই সমাজের মানুষ, পরিবারের মানুষ আমাদের খুব একা করে দেয়, যখন জীবনকে খুব অসহায় লাগে, একরাশ বিষণ্নতা চেপে ধরে দিনের পর দিন তখন আমরা হতাশ হয়ে যাই- কী করব! মুখে হাসি নিয়ে আমরা নিত্যদিনের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করি, মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমরা একা হয়ে যাই, বলা যেতে পারে নাটক করে চলছি। কিন্তু জীবনের সঙ্গে কখনো নাটক করে চলা যায় না, আমরা ছিটকে পড়ি দুনিয়ার সব কোলাহল থেকে, আনন্দ উপভোগ করা থেকে, আমি আমার থেকে, বুঝতেই পারি না কখন যে অন্ধকারের গহিনে তলিয়ে যাচ্ছি। সমাজের কোণে ছিটকে পড়া বৃদ্ধাশ্রমের প্রবীণরাও বেছে নেন কখনো আত্মহননের পথ। দেশে ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন। আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৪০ জন বা ৬৪ শতাংশই স্কুল পর্যায়ের। কলেজ পর্যায়ে ১০৬ জন শিক্ষার্থী। সমমান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৪ জন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী এই এক বছর আত্মাহুতি দিয়েছে বলে উঠে এসেছে আঁচলের সমীক্ষায়। তাদের একটি জরিপে উঠে আসে যে, যারা দিনে ৩-৭ ঘণ্টা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে তাদের ৮৮ ভাগই বিষণ্নতায় আক্রান্ত। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ হতাশ হলে কোনো কোনো সময়ে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারে না। তখন তিনি নিজেকে একা মনে করেন এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আপাতদৃষ্টিতে অন্যদের কাছে মৃত্যুর কারণ ছোট মনে হলেও এ ক্ষুদ্র কারণই ওই মুহূর্তে ওই ব্যক্তির জন্য অনেক বড় কারণে পরিণত হয়। সমাজে বসবাস করা নানা ধরনের মানুষকে নানাভাবেই বৈষম্য ও মানসিক হয়রানির ভেতর দিয়ে যেতে হয় অর্থাৎ যারা খাটো, মোটা, কালো, প্রতিবন্ধী বা আর্থিক সংকটে ভুগছেন। তাদের অবস্থা বোঝার মানুষ হয়তো পাওয়া না গেলেও কটূক্তি ও ঠাট্টা-তামাশার মানুষ অনেক। দেখা যায় পারিবারিক দূরত্ব, আত্মীয়-স্বজনদের নিত্যদিনের কটূক্তি আমাদের যেমন আত্মহত্যার দিকে টেনে নেয় তেমনি মাদকের প্রতিও আসক্ত করে। প্রেম কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি, দীর্ঘদিনের মান-অভিমান এমনকি দিন দিন বাড়তে থাকা পরকীয়াও আত্মহত্যার জন্য দায়ী। যে পরিবার ছাড়া আমরা অচল সে পরিবারে যখন কলহ থাকে দীর্ঘদিন ধরে, তখন তৈরি হওয়া একাকিত্ব আত্মহত্যাকে বরণ করে নেয়। আমাদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা কমে যাচ্ছে, সৃজনশীলতা হারাচ্ছি, তথ্যপ্রযুক্তিগত দিক থেকে আমরা এগিয়ে গেলেও আমাদের মধ্যে সম্পর্কগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে পারি আমরাই। আমরাই পারি আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ নিতে, আপদে-বিপদে পাশে দাঁড়াতে। পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কগুলো ভালো রাখা উচিত। ফেল কিংবা এ প্লাস না পেলেই যে সে আর কখনো ভালো ফলাফল আনতে পারবে না এমন ধারণাগুলো বদলানো উচিত। কারো অবস্থান দেখে তাকে ছোট করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা আমরা মানুষের শোভা পায় না। যখন কেউ খুব একা হয়ে যায় সে আরো একা থাকতে চায়, সব আনন্দ, আমেজ, হুল্লোড়ময় পরিবেশ সে এড়িয়ে চলে, এই সময়গুলোতে এসব মানুষদের কখনো একা ছেড়ে না দিয়ে আসুন তাদের সমস্যাগুলোকে বুঝতে চেষ্টা করি, সমাধানের চেষ্টা করি। পাশাপাশি পরিবার, রাষ্ট্র ও সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে। দেশে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। কাউন্সেলিংয়ের সুবিধা বাড়াতে হবে। সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে হবে। স্বপ্ন একবার ভেঙে গেলে পুনরায় চেষ্টা করুন, এগিয়ে যান নতুন সম্ভাবনার দিকে। প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসুন। অনেক সম্ভাবনার সুযোগ আপনার রয়েছে, তাই আপনি ভাবতে পারেন না যে আপনি হেরে গেছেন। যুদ্ধ আমাদের সবার জীবনেই, তবে সেই যুদ্ধ জীবনে বেঁচে থাকার, টিকে থাকার। আমাদের জীবনের চূড়ান্ত সফলতা হলো বেঁচে থাকা।

সুমাইয়া আকতার : শিক্ষার্থী, বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App