×

সাহিত্য

দ্রোহী কথামালায় গানে নজরুল জয়ন্তী উদযাপন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৩, ০৯:২৬ পিএম

দ্রোহী কথামালায় গানে নজরুল জয়ন্তী উদযাপন

শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আয়োজন

দ্রোহী কথামালায় গানে নজরুল জয়ন্তী উদযাপন

নজরুল জয়ন্তীর ছবি

দ্রোহী কথামালায় গানে নজরুল জয়ন্তী উদযাপন
দ্রোহী কথামালায় গানে নজরুল জয়ন্তী উদযাপন

ছবি: ভোরের কাগজ

দ্রোহী কথামালায় গানে নজরুল জয়ন্তী উদযাপন

একক বক্তৃতা, নজরুল পুরস্কার প্রদানসহ নানা আয়োজনে বাংলা একাডেমি নজরুল জয়ন্তী উদযাপন করেছে

সাম্য ও দ্রোহী কথামালায়, গানে, আবৃত্তি আর অসাম্প্রদায়িকতার বাণী উচ্চারণের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে চির বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের ১২৪তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার নজরুল জয়ন্তীতে সরকারি আয়োজনের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যাপক বর্ণিল আয়োজন ছিল এবারও। জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জয়ন্তী প্রধান আয়োজন ছিল স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল, দরিরামপুর, কুমিল্লা, দৌলতপুর ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও ছিল বর্ণাঢ্য আয়োজন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে কবির সমাধিতে রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান। একটানা পাঁচ ঘন্টাব্যাপী শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় জাতীয় কবির সমাধি।

[caption id="attachment_433787" align="alignnone" width="1600"] নজরুল জয়ন্তীর ছবি[/caption]

কবির ১২৪তম জয়ন্তীর দিনে গতকাল সকাল সাড়ে সাতটায় সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে রাজধানীতে কবির জন্মবার্ষিকী পালনের সূচনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারসহ সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ জাতীয় কবির সমাধিতে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। পরে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে কবির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। সমাধিতে অন্যান্য যে সব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়, সেগুলো হচ্ছে- সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুব লীগ, ছাত্রলীগ, বাংলাদেশের কমিউিনিষ্ট পার্টি, বাসদ, বিএনপি, জাসদ, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, জাতীয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর, নজরুল ইন্সটিটিউট, নজরুল একাডেমি, মানিকগঞ্জ সমিতি-ঢাকা, ঢাবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্র , জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু কবিতা পরিষদ, রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদ, ডাকসু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্র সংসদ, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সংসদ, এফ রহমান হল ও ঋষিজসহ বিভিন্ন সংগঠন।

ছায়ানটে দুই দিনের নজরুল উৎসব

[caption id="attachment_433788" align="alignnone" width="1600"] নজরুল জয়ন্তীর ছবি[/caption]

‘হে পার্থ সারথী বাজাও বাজাও শঙ্খ’ সম্মেলক নৃত্যের মধ্য দিয়ে ছায়ানটের দুইদিব্যাপী নজরুল উৎসবের শুরু হয়। এরপর কথন পর্বে অংশগ্রহন করেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা সারোয়ার আলী। এরপর ‘আমি বেলপাতা জবা দেব না’, ‘ওগো অন্তর্যামী ভক্তের তব’, ‘মসজিদেরি পাশে আমার কবর দিও ভাই’, ‘এখনো ওঠেনি চাঁদ’, ‘কাণ্ডারি গো কর কর পার’, ‘নাইবা পেলাম আমার’, ‘তুমি আরেকটি দিন থাকো’, ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায়’, ‘তোমার বুকের ফুলদানিতে’, ‘ভীরু এ মনের কলি’, ‘মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে’, ‘আসিছেন হাবীবে খোদা’, ‘পলাশ ফুলের গেলাস ভরি', ‘আমার নয়নে কৃষ্ণ নয়ন তারা’, ‘কে গো নীর-ভরণে’ ‘ও-কে যায়’, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী’, ‘যে নামে মা ডেকেছিল’, ‘সৃজন ছন্দে আনন্দে নাচো নটরাজ’সহ নজরুলের কবিতা, একক ও সম্মেলক গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি, গানে গানে ছায়ানট আয়োজনের প্রথমদিনে উচ্চারিত অসাম্প্রদায়িকতার বানী। দুই দিনব্যাপী এ উৎসবে ছায়ানটের শিল্পী ছাড়াও আমন্ত্রিত শিল্পীরাও অংশ নেন। ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত এই উৎসবের আয়োজনটি ছায়ানটের ফেইসবুক পাতায় দেখা যাবে।

শিল্পকলা একাডেমি

[caption id="attachment_433786" align="alignnone" width="1214"] শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আয়োজন[/caption]

সকাল সাড়ে ৭ টায় কবির সমাধিতে শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আয়োজন। পরে সন্ধ্যা ৬টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আলোচক ছিলেন প্রাবন্ধিক পীযূষ কান্তি বড়ূয়া। বর্তমান সমসাময়িক সময়েও নজরুলের বানী অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, কবি নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাণী ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে বজ্র্রকন্ঠে আওয়াজ তুলেছেন তা এ প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয়। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমরা বরাবরই কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ও কবি নজরুল ইসলাম, এই দুই মনিষীর জন্মদিন উদযাপনের অপেক্ষায় থাকি। আমাদের চেতনার সাথে মিশে আছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল। তাদের দর্শন চিন্তা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বিদ্রোহী নজরুলের সাহসকে পাথেয় করেই আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। আলোচনা শেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু সংগীত দল পরিবশেন করে ‘দাও শৌয্য দাও ধর্য্য’, শিশু নৃত্য দল পরিবেশন করে দলীয় নৃত্য ‘শুকনো পাতার নূপুর পায়ে’। ‘আমার কৌফিয়ত’ শিরোনামে কবিতা, পরিবেশন করেন মাহিদুল ইসলাম। বিজন মিস্ত্রী পরিবেশন করেন কবি নজরুলের গান ‘আমার আপনার চেয়ে’, মিরাজুল জান্নাত সোনিয়া পরিবেশন করেন একক সংগীত’ তোমার কুসুম বন’ ও ‘আমি আসিয়াছি ভুলে’। ‘জয় হোক, জয় হোক’ দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন সরকারী সংগীত কলেজ এর শিল্পীবৃন্দ। মুনমুন আহমেদ ও অনিক বোস এর দল ‘মম মায়াময় স্বপনে’ ও ‘আমি নূপুরের ছন্দ’ এবং ‘রাঙ্গামাটির পথে লো’ সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন। পরে মীর বরকত আবৃত্তি করেন ‘ভোরের পাখি’। একক সংগীত পরিবেশন করেন সঞ্জয় কবিরাজ; শামিমা পারভিন শিমু পরিবেশন করেন ‘আধ খানা চাঁদ/ওগো অন্তর জামি’; শারমীন সাথি ইসলাম পরিবেশন করেন ‘বাধিয়া দুইজনে/তোমারেই আমি চাহিয়াছি প্রিয়’ এবং সুমন চৌধুরী পরিবেশন করেন ‘যাহা কিছু মম’। সুইটি দাসের নৃত্য পরিবেশনায় ছিলো ‘গরজে গম্ভীর গগনে কম্বু’ ও ‘সৃজন ছন্দে’ এবং মুনমুন আহমেদ এর দল পরিবেশন করেন ‘রিমঝিম রিমঝিম ঝিম ঘনদেয়া বরষে।’ টিটু মুনসী আবৃত্তি করেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ‘বিদ্রোহী’। ‘নাচের নেশায় ঘোর লেগেছে’ ও ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পীরা। সবশেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু সংগীত দল পরিবেশন করেন ‘একি অপরূপ’ এবং ‘মনের রং লেগেছে’ শিরোনামে নৃত্য। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন তামান্না তিথি।

বাংলা একাডেমি

[caption id="attachment_433790" align="alignnone" width="1600"] একক বক্তৃতা, নজরুল পুরস্কার প্রদানসহ নানা আয়োজনে বাংলা একাডেমি নজরুল জয়ন্তী উদযাপন করেছে[/caption]

 ‘অগ্নিবীণার শতবর্ষ : বঙ্গবন্ধুর চেতনায় শাণিতরূপ’ এই প্রতিপাদ্যে নজরুল বিষয়ক একক বক্তৃতা প্রদান করেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট-এর নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এ ছাড়া সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়া বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে স্থাপিত নজরুল প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা শোভাযাত্রা করে কবির সমাধিতে ফুল দেন। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App