×

জাতীয়

চির বিদ্রোহীর জন্মজয়ন্তী আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

চির বিদ্রোহীর জন্মজয়ন্তী আজ

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৯৯ সালের দিনটিতেই বাংলার সাহিত্যাকাশে অগ্নিবীণা হাতে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটে সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের। বিদ্রোহী কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত এই কবির লেখনী বাংলা সাহিত্যের গতিপথ পাল্টে দেয়- তৈরি হয় বিদ্রোহ-প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ধারা, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়ে এখনও বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রেখে চলেছে। নজরুল ছিলেন সাম্যের চেতনায় উদ্বুদ্ধ মানুষ। ছিলেন ধ্যানে-জ্ঞানে, নিঃশ্বাসে-বিশ্বাসে, চিন্তা-চেতনায় পুরোদস্তুর অসাম্প্রদায়িক।

তার রচনায় ধ্বনিত হয়েছে শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির বার্তা। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধেও তিনি ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। কবিতার পাশাপাশি বাংলা গানের ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনিই প্রথম বাংলা গজলের প্রবর্তন করেন এবং একে উত্তর ভারতীয় রাগসংগীতের দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করেন। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও তিনি কখনো আপস করেননি। মাথা নত করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি, অর্থ-বিত্ত ও বৈভবের কাছে। ‘চির উন্নত মম শির’ বলে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। জাতীয় কবির চেতনা ও আদর্শ চিরভাস্বর হয়ে আছে আমাদের জীবনে।

কবির ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। শৈশবেই পিতৃহারা নজরুলকে বাধার দুর্লঙ্ঘ পর্বত পাড়ি দিতে হয়। তার সম্পর্কে যথার্থই লিখেছেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর :‘আয় চলে আয় রে ধূমকেতু/ আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,/ দুর্দিনের এই দুর্গশিরে/ উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’

ছোটগল্প, উপন্যাস ও নাটক লিখলেও নজরুলের মূল পরিচয় কবি হিসেবে। তিনি প্রায় তিন হাজার গান রচনা এবং সুর করেছেন, যা নজরুলসঙ্গীত হিসেবে পরিচিত। বাংলা সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তিনি ইসলামী সঙ্গীত বা গজলের নতুন এক ধারাও সৃষ্টি করেছেন। কাজী নজরুলের রচিত ‘চল চল চল’ বাংলাদেশের রণসঙ্গীত। তিনি ১৯টি রাগের সৃষ্টি করেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

মধ্যবয়সে কাজী নজরুল পিকস্ ডিজিজে আক্রান্ত হন এবং এক সময় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ১৯৭২ সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং জাতীয় কবির মর্যাদা দেন। ১৯৭৬ সালে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয়। তাকে ‘একুশে পদকেও’ সম্মানিত করা হয়। একই বছরের ২৯ আগস্ট তার মৃত্যু ঘটে।

জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এক বাণীতে বলেছেন, নতুন প্রজন্ম নজরুল-চর্চার মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে এবং দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করবে। ক্ষণজন্মা কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকের কঠিন শাসন কবির বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করতে পারেনি। নিজের ওপর ছিল তার গভীর আত্মবিশ্বাস এবং সত্যের প্রতি তার ছিলো অবিচল আস্থা। তিনি বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে নজরুলের কবিতা ও গান।

জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। সরকারি-বেসরকারি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলো প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। এবারও ‘অগ্নিবীনার শতবর্ষ: বঙ্গবন্ধু চেতনার শানিতরুপ’ প্রতিপাদ্যে তিন দিনব্যাপী নজরুল জয়ন্তীর মূল অনুষ্ঠান হচ্ছে কবির স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহের ত্রিশালের দরিরামপুরে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

কর্মসূচি : নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার সংগঠন নানা কর্মসূচি নিয়েছে। এতে রয়েছে সকালে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, শোভাযাত্রা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এ ছাড়া ভোর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন নজরুল সমাধিসৌধে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাবেন জাতীয় কবিকে। দিবসটি উপলক্ষে ছায়ানট দুইদিনের নজরুল-উৎসবের আয়োজন করেছে। এই উৎসবে পরিবেশিত হবে একক ও সম্মেলক গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি। বাংলা একাডেমি সকাল ৮টায় কবির সমাধিতে এবং একাডেমির নজরুল মঞ্চে স্থাপিত নজরুল প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা জানাবে। শিল্পকলা একাডেমি সকালে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা এবং সন্ধ্যায় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App