×

সারাদেশ

উৎসব-উৎকণ্ঠার ভোট আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৩, ১২:৫৮ এএম

উৎসব-উৎকণ্ঠার ভোট আজ

ফাইল ছবি

কে হচ্ছেন গাজীপুরের নগরপিতা ৪৮০ ভোটকেন্দ্রের ৩৫১টিই ঝুঁকিপূর্ণ লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

অপেক্ষার পালা শেষ। নানা কারণে জাতীয়ভাবে আলোচিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে উৎসব-উৎকণ্ঠার ভোট আজ বৃহস্পতিবার। সাধারণ ভোটারদের ভোটে নির্ধারিত হবে কে হচ্ছেন রাজধানী লাগোয়া দেশের সবচেয়ে বড় এই শিল্পনগরীর নগরপিতা। দিনশেষে জানা যাবে কারা হচ্ছেন সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর। বহু প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনের দিকে শুধু গাজীপুরবাসী নয়, দৃষ্টি রয়েছে দেশি-বিদেশি সব মহলের।

নির্বাচন ঘিরে কয়েকদিন ধরেই নগরজুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার পুরো সময় ছিল সুষ্ঠু পরিবেশ। ঘটেনি তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা। এ নিয়ে সব মহলে স্বস্তি রয়েছে। নির্বাচন কমিশনও বলছে- সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রার্থীরাও সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তবু শঙ্কা কাটছে না ভোটারদের। বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

জানা যায়, ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে গাজীপুর সিটির নির্বাচন। এই নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮ জন। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান, জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির রাজু আহমেদ ও গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম। এছাড়া ৩ স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হলেন- সরকার শাহানুর ইসলাম, জায়েদা খাতুন ও হারুন অর রশিদ। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিলে ৩২৬ প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ ও মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি ও ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ৩৫১টি কেন্দ্রকেই গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এই নির্বাচনের ৪৮০টি কেন্দ্রের সবকটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়া হবে। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ১০ হাজার ৯৭০ জন। প্রিসাইডিং অফিসার ৪৮০, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৩৪৯৭ এবং পোলিং অফিসার ৬৯৯৪ জন। আজ আজমত উল্লা খান ভোট দেবেন নগরের ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গী দারুস সালাম মাদ্রাসা কেন্দ্রে। জায়েদা খাতুন ভোট দেবেন ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কানায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। ভোট নেয়া শুরু হবে সকাল ৮টায়, বিরতিহীনভাবে চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান ও দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের মধ্যে। সবার দৃষ্টিও এই দুজনের দিকে। এ লড়াইয়ে বাড়তি মাত্রা পেয়েছে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও আজমত উল্লা খানের মধ্যকার দীর্ঘদিনের ‘শীতল বিরোধ’। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও তাদের মধ্যকার এই দ্ব›দ্ব নিরসন করতে পারেননি। আর এই বিরোধ গড়িয়েছে নির্বাচনী মাঠেও। ফলশ্রæতিতে জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হলেও তার পক্ষে অঘোষিতভাবে অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন। এসব নেতাকর্মী প্রকাশ্যে আজমত উল্লার সঙ্গে থাকলেও ভেতরে ভেতরে জাহাঙ্গীরের হয়ে কাজ করছেন। এছাড়া কোনো প্রার্থী না থাকায় বিএনপি-জামায়াতের ভোটও দেয়াল ঘড়িতে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ এই বিরোধের কারণে নৌকার পালে খানিকটা ধাক্কা লাগারও শঙ্কা এবং সংশয় রয়েছে।

আজকের ভোটকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কাও কম নয়। কারণ উৎসবমুখর নির্বাচনী প্রচারণায় জাহাঙ্গীরের মায়ের গাড়িবহরে হামলা হওয়ায় ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে কিছুট শঙ্কা রয়েছে। এর পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে একই দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় সংঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার ঘাটতিতে থাকা নির্বাচন কমিশনের সামনে এই নির্বাচন একটা পরীক্ষাও বটে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গাসিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে একটা বার্তা দেয়ার সুযোগ আছে ইসির সামনে।

এদিকে এই নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী আজমত উল্লা ও জায়েদা খাতুন জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। আজমত উল্লা খান বলেন, নির্বাচনকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণ ভোটে আমি জয়ী হব।

অন্যদিকে, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে জায়েদা খাতুন বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকেই আমার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ধরপাকড়, গণগ্রেপ্তার ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমি মরে গেলেও মাঠ ছাড়ব না। ভোটের দিন ভোটাররা সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিতে পারলে আমি বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করব। জায়েদা খাতুনের মতো জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনিও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরও নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে আশঙ্কার কথা জানান।

তবে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে শঙ্কার কথা বলা হলেও নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব দুশ্চিন্তা উড়িয়ে দিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোটের প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, নির্বাচনের দিন সিটি করপোরেশনজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে ৫৭ ওয়ার্ডে ৭৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন। র‌্যাবের ৩০ টিম, বিজিবিরি ১৩ প্লাটুন, পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স ১৯টি ও মোবাইল টিম ৫৭টি থাকবে নির্বাচনী নিরাপত্তার দায়িত্বে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য থাকবে।

গতকাল নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণে এসে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। আলাদা চ্যালেঞ্জ নয়, সব নির্বাচনই সমান গুরুত্ব দিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রে সিসিক্যামেরা বসানো হয়েছে। সকাল থেকে সব মনিটরিং করা হবে। একদিন আগে মঙ্গলবার এই নির্বাচনের তদারকির দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে অনেক অভিযোগ থাকলেও ভোটের সার্বিক পরিবেশে কমিশন এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট। নির্বাচনী এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে নামানো হয়েছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে কাউকে রেহাই দেয়া হবে না।

গতকাল নগরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তার ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মো. আনিসুর রহমান বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেবে। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে। আশা করছি, ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন। গাজীপুর পুলিশ কমিশনার মোল্লা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ৩৫১টি কেন্দ্রকে অতিগুরুত্বপূর্ণ ধরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় আমরা ছাড় দেব না।

নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট অথবা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। আমরা কঠোর অবস্থানে আছি, কঠোর অবস্থানেই থাকব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App