×

মুক্তচিন্তা

শেখ হাসিনার সাহস জনগণকে বুঝতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৩, ০২:৪০ এএম

সব সময় একজন শেখ হাসিনা সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে কথা বলে আসছেন এবং বলছেন। এই সাহস ও দৃঢ়তা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস ও বর্বরোচিত ঘটনা থেকেই অর্জন বলে অনেকেই মনে করেন। বিশ্বাস করেন। বিশেষ করে যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের মহান স্থপতি হিসেবে মান্য করেন এবং সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকে চেতনায় ধারণ করেন, তাদেরই এই বিশ্বাস। কোনো যুক্তিতর্কের অবকাশ নেই যে, জাতির পিতাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করার বিষয়টি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক ঘটনা হিসেবে স্থান পেয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার নিকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে রয়ে গেছে। যে বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাকে সেই বাঙালি জাতির কতিপয় বিশ্বাসঘাতক স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে তারই দেহ রক্তাক্ত করবে, এটা হত্যাকাণ্ডের পূর্ব পর্যন্ত বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। সাধারণ বাঙালিরা বিশ্বাস করতে পারেনি। কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না, মেনে নেয়া যায়নি। তারপরও ঘটনাটি ঘটেছে। এমন নৃশংস হত্যাযজ্ঞে যেই বিষয়টি সেই দিন প্রতীয়মান হয়েছিল তা হলো- ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হলেও, বিজয় পতাকা উড়লেও আদতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশটা কোনোভাবেই পাকশত্রæমুক্ত ছিল না। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই অপ্রিয়, অনাকাক্সিক্ষত সত্যটা বের হয়ে এসেছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমন আরো একটা অপ্রিয় সত্য ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বের হয়ে আসে। সেই দিন আবারো দৃশ্যমান হয় এমন একটি অপ্রিয় সত্য তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে জঘন্য বর্বরোচিত হত্যার পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে। দেশটা যে পাকশত্রæ ও প্রাদেশিক চেতনার কতিপয় বিশ্বাসঘাতকের আবরণে রয়ে গেছে, সেটা প্রতীয়মান হয় শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলার মধ্য দিয়ে। তিনি ভাগ্যক্রমে নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার বেষ্টনীতে প্রাণে বেঁচে গেলেও সেই দিন অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। এভাবে তাকে বহুবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, চেষ্টা চলেছে। অনেকে মনে করেন, শেখ মুজিবুর রহমানের বংশকে নির্মূল করার ষড়যন্ত্র আজো চলছে এবং তার সঙ্গে যুক্ত থাকছে আন্তর্জাতিক স্বার্থপরতা ও চক্রান্ত। অধিক শোক মানুষকে কঠিন করে তোলে, পাথর করে দেয়, এমন প্রবাদ সমাজে প্রচলিত। এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি, সহজাত আচরণ। বাবা, মা, ভাই ও পরিজনদের নির্মমভাবে হত্যা করার বিষয়টি খুব স্বাভাবিকভাবে তাকে কঠিন থেকে কঠিনতর করে তুলবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি কেবল যে বাবা, মা, ভাই ও পরিজনের হত্যার বিচার বিষয়ে অনড় ছিলেন তা নয়, তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে বরাবরই ছিলেন। এটা তার ব্যক্তিস্বার্থপরতার বিষয় নয়, বাঙালি ও বাংলাদেশের অস্তিত্ব সুরক্ষায় বলিষ্ঠ উদ্যোগ, পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়, যা বঙ্গবন্ধুর পর তার সুযোগ্য কন্যা হিসেবে তিনিই পেরেছিলেন। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, শেখ হাসিনার সাহসের পরিচয় বেশি দৃশ্যমান ছিল, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচারের বিষয়ে তার আপসহীন অবস্থান প্রসঙ্গে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করার সময়ে আন্তর্জাতিক চাপ তার ওপর পড়লেও তিনি আপসের খাতায় নাম লেখাননি। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ইতিহাসে কোনো সরকারপ্রধানের এমন আপসহীন মনোভাব সম্ভবত নেই। তরুণদের কাছে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের জনগোষ্ঠীর কাছে তার এই সাহস ও দৃঢ়তা অনন্য মাত্রা হিসেবে যুক্ত হয়ে গেছে। বিদেশি শক্তিকে তোয়াক্কা না করার এই মনোভাব তার ব্যক্তিসত্তাকে যতটা না প্রকাশ করে, তার অধিক প্রকাশ করে তার জাতিসত্তাকে। আর এই জায়গাতেই তার স্বতন্ত্রতা, এখানেই তিনি একজন শেখ হাসিনা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করে এলেন। ৩টি দেশই উন্নত বলা যায়, বিশ্বকে পরিচালনায় কমবেশি ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে বিশ্বজুড়ে এক ধরনের আপসকামিতা, হুজুরি মনোভাব রয়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রকে উন্নয়নশীল ও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো সমীহ করে চলে, মেনে চলে। কারণ তো রয়েছেই। আবার যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের ওপর, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের ওপর খবরদারি করার মানসিকতা থেকে কখনোই সরে আসে না, আসতে দেখা যায় না। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সেটা মানবাধিকার প্রশ্নে। র‌্যাব বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গঠিত একটি সংস্থা। জঙ্গি সংগঠন ও মাদক ব্যবসায়ী, প্রতারকদের কাছে র‌্যাব একটা আতঙ্কের নাম। এই জাতীয় অপরাধীদের নির্মূলে র‌্যাবের ভূমিকা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে স্বস্তির বারতা নিয়ে আসছে। কঠিন কোনো সমস্যায় মানুষ এখন র‌্যাবের শরণাপন্ন হয়। সম্পূর্ণ বিষয়টাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আচমকা যুক্তরাষ্ট্রের এই নাক গলানোর আচরণটি বেখাপ্পা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অনেকেই মনে করে। কারোর কারোর ধারণা, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব জিইয়ে রাখতে এবং মাদক ব্যবসায়ের ক্ষেত্র বানাতে যুক্তরাষ্ট্রের এ এক কৌশল এবং এর পেছনে সম্ভবত বাংলাদেশের কোনো বিশ্বাসঘাতক শ্রেণি যুক্ত থাকতে পারে। সফর শেষে শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, যে দেশ বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের দেশ থেকে কোনো কিছুই কেনা হবে না। তার এই হুঁশিয়ারি বক্তব্য দেশের মর্যাদাকর অবস্থানকে দৃঢ় করলেও দেশের অভ্যন্তরে অবস্থানরত ভিনদেশীয় এজেন্টদের খুশি করতে পারেনি। শেখ হাসিনার এই বক্তব্য তার দেশের সার্বভৌমত্ব, সংবিধান এবং মর্যাদাকর অস্তিত্বের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে, যা একটি দেশের জন্য জরুরি ও অপরিহার্য। দেশের নিরাপত্তা কেবল অস্ত্রবাজি করে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, সম্ভব নয় আধিপত্য বিস্তারকারী কোনো রাষ্ট্রের তোষামোদী করে। একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন সুচিন্তিত বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্ব, যা শেখ হাসিনা সব সময় দিয়ে আসছেন। নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে কোনো কিছু কেনা হবে না, এত শক্ত কথা বলার সাহস বোধহয় বিশ্বজুড়ে একমাত্র শেখ হাসিনারই আছে। এর আগে পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে তিনি শক্ত অবস্থান নিয়ে লড়েছেন। প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশ কোনো দুর্নীতি করেনি। এতে দেশের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার হয়েছে। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে দেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। এ এক যুগান্তকারী ইতিহাস। আর এসব কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারেন কিনা, সেই বিষয়ে সাধারণের মনে প্রশ্ন জেগেছে। তার সফরের পর আরো একটি সিদ্ধান্ত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সৌদি আরবসহ ৬টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তার প্রশ্নে অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ। সরকারের পক্ষে যুক্তি ছিল, রাষ্ট্রদূতদের চলাচলের জন্য বাংলাদেশে এখন নিরাপদ পরিবেশ বিরাজ করছে। এছাড়া অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী ব্যবহারে যে অতিরিক্ত ব্যয় তা বহন করা বর্তমান সময়ের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সম্ভব নয়। তবে কোনো দেশের অ্যাম্বাসি ও রাষ্ট্রদূতের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মীর প্রয়োজন পড়ে তাহলে তারা আবেদন করে এবং নিজস্ব খরচে তা করতে পারে। খুবই প্রাসঙ্গিক ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। কেউ কেউ বলেছেন, বাংলাদেশে যেভাবে রাষ্ট্রদূতরা নিরাপত্তাকর্মী দ্বারা সমাদৃত ও সুরক্ষিত থাকেন, অন্য দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে সেভাবে সমাদর কিংবা সুরক্ষিত করে রাখে না। আমার মনে করি বাংলাদেশের যোগ্যতা ও মর্যাদা সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, যেই দেশ যে রকম আচরণ দেখাবে বাংলাদেশের প্রতি, সেই দেশ ঠিক সে রকম আচরণই ফেরত পাবে এবং ফেরত দেয়া উচিতও। খুব অবাক হয়েছি এবং হচ্ছি, বিএনপির যুক্তরাষ্ট্র প্রীতি দেখে। রাষ্ট্রদূতদের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এবং নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপির রাজনীতি মোটেও ভালো লাগছে না। রাষ্ট্রদূতদের অতিরিক্ত নিরাপত্তার বিষয়ে ভারত কিন্তু বাদ যায়নি। যে ভারত বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম বন্ধুরাষ্ট্র। অন্য রাষ্ট্রের প্রতি শেখ হাসিনার হুঁশিয়ারি বাংলাদেশের মর্যাদা ও অস্তিত্ব রক্ষার্থেই। শেখ হাসিনার কোনো ব্যক্তিস্বার্থ নয় এটা। এ বিষয় নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দেশের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। দলীয় রাজনীতি নিয়ে মতাদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষায় প্রকৃত দেশপ্রেম থাকা জরুরি। যেটা হতে হবে আপসহীন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত। সাধারণ জনগণকে বুঝতে হবে, একজন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও মর্যাদা রক্ষায় কতটা আপসহীন। তার জীবনের মায়ার চেয়েও দেশ বড়, দেশের মানুষ বড়। তার হাতকে শক্তিশালী করতে না পারলে দেশের অস্তিত্বেও সংকট বাড়বে বৈকি। আসুন বলি, শাবাশ শেখ হাসিনা! স্বপ্না রেজা : কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App