×

সারাদেশ

সিলেটে বিরামহীন প্রচারণায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৩, ০৯:০৯ এএম

সিলেটে বিরামহীন প্রচারণায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী

ছবি: সংগৃহীত

পর্যটন নগরী সিলেটজুড়ে এখন নির্বাচনী আমেজ। পাড়া-মহল্লার অলিগলি থেকে শুরু করে চায়ের স্টল- সর্বত্রই চলছে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা এখনো শুরু না হলেও মতবিনিময় আর গণসংযোগে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠেই রয়েছেন প্রার্থীরা। ভোটাররাও প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া শুরু করে দিয়েছেন। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্তরা কতটুকু কাজ করেছেন, আর যারা নির্বাচনে নতুন আসছেন তারা কতটা যোগ্য- এমন আলোচনাই ভোটারদের মুখে মুখে।

তবে বর্তমান মেয়র বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় মেয়র পদে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বাবুল। এর মধ্যে নির্বাচনী মাঠে সবচেয়ে বেশি সরব রয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আগেই দেশে এসে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। দল তাকে মনোনীত করার পর কাজে আরো গতি বেড়েছে। এই মুহূর্তে প্রচার-প্রচারণায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিরামহীন প্রচারণার ধারে-কাছেও নেই অন্য মেয়র প্রার্থীরা। ফলে অনেকেই আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে ভবিষ্যৎ মেয়র ধরে নিয়ে নানা হিসাব কষতে শুরু করে দিয়েছেন।

সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আর যে ৫ প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তারা হলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল হানিফ কুটু, ব্যবসায়ী সামছুন নূর তালুকদার, আবদুল মান্নান খান ও মো. সালাহ উদ্দীন রিমন।

মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গত রমজান মাস থেকেই ধারাবাহিক প্রচারণা শুরু করেছেন। তিনি রুটিন মাফিক বিভিন্ন কমিটি করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুরুর দিকে তিনি সর্বপ্রথম তার দলের নেতাকর্মী নিয়ে বেশ কয়েকটি সভা করে নির্বাচনী রোড ম্যাপ তৈরি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি সিলেটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ব্যবসায়ী, পরিবহন নেতা, বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা এবং সিলেট নগরীতে বসবাসরত বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন সিলেট সফরে এসে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এবং বিভিন্ন উপকমিটি গঠন করেন। একই সঙ্গে নির্বাচনী এলাকাকে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করে দেন। এসব অঞ্চলের দায়িত্ব পালন করছেন সিলেট জেলা ও মহানগরীর দায়িত্বশীল নেতারা। অঞ্চলভিত্তিক এসব প্রচারণায় নৌকা প্রতীকের গতি বেড়েছে বলে মনে করেন নেতারা। এদিকে আনোয়ারুজ্জামানকে নিয়ে সিলেট আওয়ামী লীগ এখন ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা প্রার্থীকে নিয়ে দিন-রাত মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। লক্ষ্য তাদের একটাই, নৌকাকে বিজয়ী করা।

এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল প্রচারণায় শুরুতেই তার নির্বাচনী কমিটি নিয়ে হোঁচট খেয়েছেন। নগরীর বাইরে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মী এনে গঠন করেছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা নগরীর জন্য পুরোটাই অপরিচিত মুখ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট মহানগরীতে জাতীয় পার্টির শক্তিশালী কোনো কমিটি নেই। ওয়ার্ড পর্যায়ে নেই কোনো কমিটি। সিলেট নগরীতে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব অনেকটাই বিলীন হওয়ার পথে। নজরুল ইসলাম বাবুল মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক। কিন্তু গত দুই বছরেও তিনি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। মহানগরীর ওয়ার্ড পর্যায়ে জাতীয় পার্টির কোনো কর্মী নেই। দীর্ঘদিন থেকেই সিলেটে জাতীয় পার্টির এই দৈন্যদশা। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই তিনি নগরীর বাইরে থেকে অপরিচিত লোকজন এনে কমিটি করেছেন। তাদের নিয়েই তিনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব চরমে। এরই মধ্যে মাহবুবুর রহমান নামে এক নেতাকে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জাপার ভাইস চেয়ারম্যান সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এরই মধ্যে আনোয়ারুজ্জানের সভায় উপস্থিতি হয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। এ নিয়েও জাতীয় পার্টিতে তোলপাড় চলছে। সামনে অবস্থা আরো টালমাতালের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী।

সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোটি টাকার মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খোদ জাতীয় পার্টির নেতারা। কোটি টাকার বিনিময়ে মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বাবুলকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ উঠেছে জাতীয় পার্টির ভেতর থেকে। স¤প্রতি সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এমন অভিযোগ তোলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। তার সঙ্গে সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির আরো অনেক নেতা উপস্থিত ছিলেন এবং এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। এরপর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হলে যে জবাব তিনি দিয়েছিলেন তা সন্তোষজনক না হওয়ায় ২১ মে রবিবার তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

জানা গেছে, জাতীয় পার্টিতে মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে যারা পরিচিত তারা পৃথক একটা বলয় তৈরি করছেন। সেই বলয়ের নেতাকর্মী নির্বাচনী ময়দানে নজরুল ইসলাম বাবুলের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবেন, কাজ করবেন। তাদেরই একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাউন্সিলর নির্বাচনে যে ব্যক্তি হেরেছে, অন্য দল থেকে আসা তেমন মানুষকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়াটাই তো হাস্যকর। আর জাতীয় পার্টি এমন হাস্যকর কাজে বরাবরই অভ্যস্ত। ভাগ্যে যা-ই থাকুক, আমরা এবার পার্টির হাস্যকর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভোটের মাঠেই প্রতিবাদ জানাব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App