×

মুক্তচিন্তা

শিল্পায়নে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রামবাংলা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৩, ১২:২৫ এএম

গ্রামের স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশ এখন আর চোখে পড়ে না। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। বাঁশঝাড়গুলো উজাড় হয়ে গেছে। শরৎকালে কাশবনগুলো আগেকার মতো মুগ্ধতা ছড়ায় না কিংবা পাতা ঝরা ফাগুনের উষ্ণ আলিঙ্গন অনুভূতি জাগায় না। সন্ধ্যাবেলায় যে পাখিগুলো নীড়ে ফিরে আসত, তা চোখে পড়ে না। সবই যেন বিলীন হয়ে যাচ্ছে শিল্পায়নের ছোঁয়ায়। সবকিছু শহুরে খাঁচায় বন্দি জীবন। বেরসিক জীবনকে সবাই চলমান পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। যে কৃষক কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা এখন কারখানায় কাজ করে সংসার চালান। খুবই অল্পসংখ্যক কৃষক ঐতিহ্যগতভাবে তাদের পেশাকে ধরে রেখেছেন। তাই ধান চাষ হলেও শীতকালীন ফসলের আবাদ কমে আসছে। ফলে অনেক কৃষিজমি পতিত থেকে কৃষি অর্থনীতি ব্যাহত হচ্ছে। শিল্পায়নের ছোঁয়ায় সেখানকার অবস্থায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। উন্নয়ন হয়েছে রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ির। আগের তুলনায় ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বেড়েছে বহুগুণে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ কল-কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। নিস্তব্ধ গ্রামগুলো এখন ব্যস্ততায় ভরপুর। কিন্তু শীতল স্নিগ্ধ বাতাস দূষিত করে তুলছে শিল্পায়নের ডামাডোলে। বায়ুদূষণ, পানিদূষণ সেখানকার মনোরম পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে। নদীর পানি দূষিত হয়ে কালছে রং ধারণ করছে। ছোট ছোট খালগুলো অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে। তাই নদী কিংবা খালে মাছের দেখা পাওয়া ভার। মূলত জীবিকার তাগিদে আমরা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য হারাতে বসেছি। প্রশান্তিময় গ্রামবাংলার পরিবেশ সেখানে নেই। হেমন্তকালে নতুন ধানের পিঠা বানানোর আমেজ অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। শীতকালে এখন আর যাত্রাপালা হয় না। বৈশাখ কিংবা পৌষ মাসে মেলার আয়োজন থাকে না। অথচ গ্রামই প্রাণ, গ্রামই আমাদের বেঁচে থাকার রসদ জোগায়। তাছাড়া শিল্প ও সংস্কৃতির সূ² মেলবন্ধন গ্রামের পটভূমিতেই ধরা দেয়। অথচ শিল্প ও সংস্কৃতির মৌলিকতা শিল্পায়নের প্রভাবে সেখানে আজ হারাতে বসেছে। ফলে সেখানকার মানুষদের জীবন থেকে গ্রামীণ সংস্কৃতি বিলুপ্ত হচ্ছে। শিল্পায়নে যেমন সেখানকার জীবনমান উন্নত হয়েছে তেমনি তৈরি হয়েছে নানা মাত্রিক জটিলতা। সামাজিক হৃদ্যতা হারিয়ে সবাই এখন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছি। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। রূপবৈচিত্র্যের এ দেশে হাজার বছরের আবহমান গ্রামবাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্য ধরা পড়ে গ্রামীণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে। এ দেশের কৃষ্টি, কালচার মিশে আছে গ্রামবাংলার মানুষের মনে-প্রাণে। তাই গ্রামবাংলার মানুষ তার নিজস্ব ঐতিহ্য ধারণ ও লালন-পালন করে আসছে আবহমানকাল থেকেই। কিন্তু শিল্পায়নের ছোঁয়ায় আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির আমেজ থেকে আমরা অনেক দূরে সরে এসেছি। খড় কিংবা টিনের ঘরের পরিবর্তে তৈরি হচ্ছে বহুতলবিশিষ্ট নতুন নতুন ভবন। সেখানে অতি পরিচিত বাঁশঝাড় কিংবা বনলতার শ্যামল স্নিগ্ধ আমেজ আর নেই। অথচ গ্রামের সে মেঠোপথকে আপন বলে জেনেছি; যে পথে বর্ষাকালে কাদা, শীতকালে ধুলো থাকে। কিন্তু আজ আর তা দেখা যায় না। শিল্পায়নের ছোঁয়ায় রাস্তাগুলো পিচঢালা পথে পরিণত হয়েছে। মানুষের জীবনমানেরও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু স্নিগ্ধ কোলাহলযুক্ত নির্মল বায়ুর দেখা মেলে না। প্রকৃতির সঙ্গে উন্নয়নের পরিমিতবোধ পরিবেশকে অনিন্দ্য সুন্দর করে তোলে। কিন্তু শিল্পায়নের ছোঁয়ায় সে বাঁধন না থাকায় আমরা আজ তা হারাতে বসেছি। আমরা চাই শিল্পায়নের মাঝে গ্রামীণ অবয়ব আরো অনিন্দ্য সৌন্দর্যের হাতছানি দিয়ে ডাকবে। তবেই তা হবে প্রকৃতির জন্য বিশালত্বের ছোঁয়া।

অন্জন কুমার রায় : লেখক ও ব্যাংক কর্মকর্তা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App