×

মুক্তচিন্তা

বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদকপ্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী : বিশ্বশান্তিতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৩, ১২:২৬ এএম

বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদকপ্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী : বিশ্বশান্তিতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

আজ ২৩ মে। বাংলাদেশের ইতিহাসে দিনটি অনেক গৌরবোজ্জ্বল ঘটনার কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকার দিন। কিন্তু দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নানা বাস্তবতায় দিনটির কথা অনেকেই ভুলতে বসেছেন, আবার অনেকে জানেনই না। বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে নিয়ে আসা দিনটিকে। এ বছর সেই দিনটির ৫০ বছর পূর্তি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সঙ্গে অনেকগুলো দিবস ও ঘটনার মতো ১৯৭৩ সালের আজকের দিনটিকে আরেক সুবর্ণজয়ন্তীর গৌরবময় ইতিহাসের বাতিঘরকে কিছুটা স্মরণ করার উদ্যোগ যেন নেয়া হয়েছে। সে জন্য বিশেষ কাউকে ধন্যবাদ জানানো নয় বরং বিস্মৃতির অতল থেকে তুলে আনা ইতিহাসের এমন অর্জনকে স্মরণ করার প্রয়োজনীয়তাকে বিশেষভাবে অনুভব করছি। ১৯৭৩ সালের এইদিন সকালে শেরেবাংলার বর্তমান জাতীয় সংসদ চত্বরে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা আকৃতির প্যান্ডেলে আয়োজিত হয়েছিল বিশ্বশান্তি পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রদানের অনুষ্ঠান। ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে বিশ্বশান্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় উপস্থিত ১৪০টি দেশের ২০০ জন সদস্যের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তির পক্ষে অসামান্য ভূমিকা রাখার জন্য জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়। সেই পদক বঙ্গবন্ধুকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদানের জন্য বিশ্বশান্তি পরিষদ এবং বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ যৌথভাবে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে তারিখে উক্ত আয়োজন করেছিল। তখনো জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণের কাজ চলতে থাকায় বাইরে প্যান্ডেল টানিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, আরব রাষ্ট্রসমূহ, পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্র, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার রাষ্ট্র ও বিভিন্ন সংস্থার ১৫০ জন প্রতিনিধি উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বশান্তি পরিষদের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল শ্রী রমেশচন্দ্র অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে জুলিও-কুরি সম্মানজনক পদকটি পরিয়ে দেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এশীয় শান্তি সম্মেলনের জাতীয় প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি ও তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ ও অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের তৎকালীন সম্পাদক আলী আকসাদ। ১৯৫০ সালে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন দেশের বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, কবি-সাহিত্যিক, নারী আন্দোলনসহ বিভিন্ন অগ্রসর চিন্তাধারার সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বশান্তি পরিষদ গঠিত হয়। এর আগে বিভিন্ন নামের সংগঠন এ ধরনের আন্তর্জাতিক একটি সংগঠন গড়ে তোলার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সভা-সেমিনার করেছিল। এই পরিষদের প্রথম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ফরাসি রসায়নবিদ প্রফেসর ফ্রেডেরিক জুলিও কুরি। তিনি এবং তার স্ত্রী ইরিন জুলিও কুরি ১৯৩৫ সালে রসায়ন শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তারা এই সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন তেজস্ত্রিয়তার প্রয়োগ আবিষ্কারের জন্য। তারা উভয়ই প্যারিস স্যাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অরসে বিজ্ঞান অনুষদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফ্রেডেরিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সে দেশ রক্ষার যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে তিনি গবেষণা এবং শান্তির আন্দোলনে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। জুলিও পরিবার একাই ৫টি নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছিল। জুলিও এবং তার স্ত্রী তাদের মধ্যে অন্যতম। বিশ্বশান্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তর ১৯৬৮ থেকে ১৯৯৯ সালে ফিনল্যান্ডে ছিল। ১৯৫৬ সালে তার স্ত্রী ইরিন এবং ১৯৫৮ সালে ফ্রেডেরিক মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৫৯ সালে তাদের সংস্থার শান্তি পুরস্কারটি জুলিও কুরির নামানুসারে রাখে। ২০০১ সালে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে অবদান রাখা নারীদের জন্য ইরিন জুলিও কুরি পদক প্রবর্তন করা হয়। ১৯৭২ সালে সংস্থাটি বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি পদকে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বশান্তি পরিষদের শান্তি পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাতে জুলিও কুরি শান্তিপদক তুলে দিয়ে এই সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল রমেশচন্দ্র বঙ্গবন্ধুর ভূয়সী প্রশংসা করে ভাষণ প্রদান করেন। ভাষণে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলার নন, তিনি বিশ্বের এবং তিনি বিশ্ববন্ধু।’ জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিশ্বশান্তি আন্দোলনের সহকর্মী প্রতিনিধিরা আমাকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে যে সম্মান দিয়েছেন, আমি একান্তভাবে অনুভব করি, এটি কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য নয়, এটি বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষের।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই সম্মান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদদের, স্বাধীনতা সংগ্রামে বীর সেনানীদের। ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক গোটা বাঙালি জাতির।’ তিনি বিশ্বশান্তি পরিষদ সম্পর্কে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বশান্তি পরিষদের কার্যকলাপ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে লক্ষ্য করে আসছে। বিশ্বশান্তি পরিষদ প্রথম আন্তর্জাতিক সংস্থা যারা বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে বিশ্বশান্তি পরিষদের অবদান স্মরণীয়’ বলে তিনি উল্লেখ করেন। নিজের রাজনীতি সম্পর্কে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিশ্বশান্তি আমার জীবনের মূলনীতি। নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত ও স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী মানুষ, যে কোনো স্থানেই হোক না কেন, তাদের সঙ্গে আমি রয়েছি।’ বঙ্গবন্ধু তার বিঘোষিত পররাষ্ট্রনীতি উল্লেখ করে বলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রæতা নয়।’ তিনি মুক্তিকামী বিশ্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘মুক্তিকামী মানুষের ন্যায়সংগত সংগ্রাম অস্ত্রের জোরে স্তব্ধ করা যায় না। সে জন্য ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিকসহ দুনিয়ার সব উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের প্রতি আমরা জানিয়েছি অকুণ্ঠ সমর্থন।’ তার ভাষণে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় সেই সময়ে আলোচিত ও সমালোচিত বর্ণবাদী নীতির তীব্র নিন্দা জানান। উপমহাদেশের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেন, ‘পাকিস্তানের একগুঁয়ে নীতি উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি এই বিষয়ের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানান। বিশ্বে বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে চলা অস্ত্র প্রতিযোগিতার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বৃহৎ শক্তিবর্গ, বিশেষভাবে আগ্রাসীনীতির অনুসারী কতিপয় মহাশক্তির অস্ত্রসজ্জা তথা অস্ত্র প্রতিযোগিতার ফলে আজ এক সংকটজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চাই, অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ব্যয়িত অর্থ দুনিয়ার দুঃখী মানুষের কল্যাণের জন্য নিয়োগ করা হোক।’ ভাষণ শেষে তিনি শান্তির সৈনিকদের বাংলাদেশে অভ্যর্থনা জানিয়ে অনুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করে এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই ভারত উপমহাদেশসহ এশিয়া এবং আফ্রিকার জাতিসমূহ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিল। লাতিন আমেরিকায় অবশ্য ১৯ শতকের ৩০ এর দশকের আগেই বেশিরভাগ দেশ স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ উপনিবেশ থেকে মুক্তিলাভ করেছিল। সেখানেও আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে এই মুক্তি অর্জিত হয়েছিল। ইউরোপের কয়েকটি বড় দেশ এই তিনটি মহাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল বেশ আগেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেই এই দেশগুলো জার্মান, নাৎসিবাদ, ইতালীয় ফ্যাসিবাদ এবং জাপানীয় সমরবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই নিজেরদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে বিশ্বের এই দেশগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। যুদ্ধের পরই এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের জাতিসমূহ স্বাধীনতার আন্দোলন তীব্রতর করে। ফলে অনেক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এই দুইটি মহাদেশে যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষতি, বিপর্যয় এবং দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক শোষণ, নির্যাতনের অভিজ্ঞতা পেরিয়ে এই দেশগুলো স্বাধীনতা লাভ করেছিল। স্বাধীনতার জন্য যেসব আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছিল তাতে অনেকেই প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্বও দিয়েছিল। নতুন এই বাস্তবতায় বিশ্বশান্তি পরিষদের মতো সংস্থা প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রসমূহের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের পর্বকে সমর্থন জানিয়েছিল। তাদের পাশে দাঁড়াতে এ ধরনের সংস্থা সাধ্যমতো কাজ করছিল। যারা জাতিরাষ্ট্রের আন্দোলনে কিংবা বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দাঁড়িয়েছিল, তাদের পক্ষেও এ ধরনের সংস্থা অবস্থান নিয়েছিল। ফলে সদ্য স্বাধীন দেশগুলো উপনিবেশ উত্তর বিশ্ব বাস্তবতায় মাথা তুলে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু তখনো পৃথিবীতে একাধিক পরাশক্তি এবং দুই সামরিক জোটের মধ্যে তীব্র দ্ব›দ্ব এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা চলছিল। এসব দ্ব›দ্ব ও অস্ত্র প্রতিযোগিতার ফলে সদ্য স্বাধীন দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি লাভের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে আশানুরূপ সহযোগিতা পাচ্ছিল না। ফলে স্বাধীনতালাভকারী দেশগুলো ভয়াবহ দারিদ্র্যের মুখে অবস্থান করছিল। কিন্তু তাদের পাশে উদারভাবে দাঁড়ানো রাষ্ট্র ও সংস্থার যথেষ্ট অভাব ছিল। অনেক ক্ষেত্রে বিরোধিতাও ছিল। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করেছিল। বঙ্গবন্ধু এই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা হিসেবে ২৩ বছর পাকিস্তান রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠীর দমন-নিপীড়ন উপেক্ষা করেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন। তিনি গোটা ৪০ এর দশকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। তার এই দীর্ঘ রাজনীতি এবং সংগ্রামের অভিজ্ঞতা, স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীন রাষ্ট্রের জনগণের জীবনে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্য তিনি আত্মোৎসর্গীয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন। এসবেরই স্বীকৃতি ছিল তার বিশ্বশান্তি পরিষদ কর্তৃক জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তি। তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার মধ্যে জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন করা ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। কিন্তু তখন বিশ্ব ছিল তীব্র দ্ব›দ্ব, সংঘাত আর অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। বঙ্গবন্ধু এসবের বিরুদ্ধে বিশ্বের করণীয় শান্তির অবস্থানকে সংহত করতে অন্য বিশ্ব নেতাদের মতোই অবদান রেখে চলছিলেন। তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল মানবতাবাদী। তিনি শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ান। সেই সময় এ ধরনের নেতারা পৃথিবীর কয়েকটি দেশে নিজেদের স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদা রক্ষা করার জন্য ভূমিকা রেখে চলছিলেন। বিশ্বশান্তি পরিষদ ভিয়েতনামের হো চি মিন, চিলির আলেন্দো, কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো এবং ফিলিস্তিনিদের নেতা ইয়াসির আরাফাতকেও জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করেন। বঙ্গবন্ধু সেসব মহান নেতাদের মতো একজন বিশ্বনেতা হয়ে উঠেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা উত্তরকালে তার নাম পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। সারা পৃথিবীর মানুষ তার নামের মাধ্যমেই বাংলাদেশকে চিনতে শুরু করেছিল। বিশ্বশান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি উপাধিতে ভূষিত করে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশকেও শান্তিকামী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ’৭৫ সালে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক শক্তির ষড়যন্ত্রে নিহত হন। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন পৃথিবীতে সামরিক শাসনের দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। তার কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের ভূলুণ্ঠিত মর্যাদা আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। তিনি পিতার নীতি, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ অনুসরণ করছেন। এখন বাংলাদেশ পৃথিবীতে নতুন মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শের বাস্তবায়ন যত বেশি হবে বাংলাদেশ ততবেশি উন্নত ও আত্মমর্যাদায় পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতেও টিকে থাকবে এমনটি সবাই আশা করে। বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি শান্তি পদকপ্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তীতে সেই উপলব্ধি যেন ছড়িয়ে পড়ে দেশের আপামর জনসাধারণের মধ্যে।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App