×

সারাদেশ

দাউদকান্দিতে কাজে আসছে না মৎস্য পরিচর্যা কেন্দ্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৩, ০৪:১৩ পিএম

দাউদকান্দিতে কাজে আসছে না মৎস্য পরিচর্যা কেন্দ্র

ছবি: দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মৎস্য পরিচর্যা কেন্দ্র নির্মাণের ৩ বছরেও চালু হয়নি। প্রায় ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি কোন কাজে আসছে না স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীদের। এটি এখন নির্মাণ সামগ্রীর গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

তবে স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীদের দাবি নির্মিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটির স্থান নির্বাচন এবং জায়গা সংকুলানের কারণে ব্যবসায়ীরা সেখানে যেতে নারাজ। নির্মাণের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কোন মৎস্য ব্যবসায়ী কেন্দ্রে ব্যবসা করতে রাজি হচ্ছেন না।

উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, ২০১৯ সালে দাউদকান্দির দোনারচর এলাকায় মৎস্য অধিদপ্তর ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্মিলিত মৎস্য পরিচর্যা কেন্দ্রটি নির্মিত করেছে। পরের বছর নবনির্মিত মৎস্য পরিচর্যা কেন্দ্র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

৮ শতাংশ ভূমির উপর নির্মিত হয়েছে। ভবনের চারদিকে সীমানা প্রাচীর, অকশন শেড, প্যাকিং শেড, ৮টি আড়ৎ ঘর, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, গভীর নলকূপ, আইস ক্রাসারসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় নির্মিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের ৩ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো কোন ব্যবসায়ী অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবসা করতে আসছে না।

অন্যদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতুর দক্ষিন পাশে নতুন ফেরিঘাট নামে পরিচিত পুরাতন নৈশকালীন মৎস্য বাজারে আড়ৎ রয়েছে প্রায় ৪০টি। প্রতিটি আড়তের সাথে মাছ রাখার পর্যাপ্ত জায়গা ও প্রসেসিং করার মতো নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বলে আড়তদাররা জানান।

আল্লাহর দান মৎস্য আড়তের মালিক হাজি মো. কাউসার আলম এবং ওমর আলী মৎস্য আড়তের মালিক মো. ওমর আলী জানান, বর্তমানে আমরা যেখানে আছি সেটি আমাদের পুরাতন মৎস্য আড়ত। প্রায় পঞ্চাশ বছর যাবৎ আমাদের বাবার আমল থেকেই এখানে আড়তদারী ব্যবসা। সরকার দাউদকান্দির মৎস্য ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য তিন বছর আগে নতুন একটি ভবন তৈরি করেছে। সেখানে ব্যবসায়ীদের যাওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু আমরা পুরাতন মৎস্য আড়তেই ভালো আছি। বর্তমানে ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা খারাপ চলছে।

তারা আরো বলেন, নির্মিত মৎস্য আহরনত্তোর পরিচর্যা কেন্দ্রে মাছ রাখা বা প্রসেসিং করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যদিও আগের মতো মিঠা পানির মাছ এখন আড়ৎগুলোতে আসে না। তবুও পুরাতন মৎস্য আড়তের ৪-৫ জনের আড়তে যে পরিমাণ মাছ আসে সে পরিমাণ মাছ দিয়ে নির্মিত পুরো ভবনের জায়গা ভরে যাবে।

দাউদকান্দি উপজেলা মৎস্য আড়ৎ সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম মিয়া জানান, ৫০ বছর আগের পুরাতন মৎস্য আড়তে সবাই ব্যবসা করছি। তবে ২-৩ বছর আগে সরকার মৎস্য ব্যবসায়ীদের জন্য যে ভবনটি তৈরি করেছে, সেটিতে আমাদের সকল ব্যবসায়ীদের জায়গা হবে না। আবার আরেকটি সমস্যা হলো, আমাদের আড়তে মাছের ক্রেতা বিক্রেতা সবাই রাতে আসে, তাদের সাথে টাকা পয়সা থাকে বিধায় তারা মহাসড়কের পাশে ছাড়া অন্য কোথাও কোন আড়তে মাছ কিনতে বা বেচতে যায় না। আর এটি নির্মাণের সময় আমাদের সমিতির আগের নেতারা মহাসড়কের পাশে যে জায়গাটি দেখিয়েছিল, সেখানে নির্মাণ করা হলে হয় তো এখন সেটি আমরা ব্যবহার করতে পারতাম। এ ছাড়া পাইকার ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই ব্যবসায়ীরা মৎস্য আহরনোত্তর পরিচর্যা কেন্দ্রে যেতে চান না।

মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় পরিচালক আব্দুস সাত্তার বলেন, মৎস্য আহরনোত্তর পরিচর্যা কেন্দ্রটি দ্রুত চালু করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং আমার মৎস্য কর্মকর্তা বলা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোসা. সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্মিলিত নির্মিত মৎস্য আহরনোত্তর পরিচর্যা কেন্দ্রে ব্যবসায়ীদের নেয়ার জন্য কয়েক দফা বৈঠক করেছি তাদের সাথে। বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে তারা সেখানে যাচ্ছে না। আর এটি নির্মাণ বা স্থান নির্বাচনে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ করেছে। যেহেতু কোন ব্যবসায়ী এখানে আসেনি, তাই তালাবদ্ধ রয়েছে। তবে ভিতরে কারা নির্মাণ সামগ্রী রেখেছে জানি না। বিষয়টি খবর নিব।

দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিনুল হাসান বলেন, সরকার দাউদকান্দির মৎস্য ব্যবসায়ীদের জন্য আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি মৎস্য আহরনোত্তর পরিচর্যা কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবসায়ী পরিচর্যা কেন্দ্রে ব্যবসা শুরু করেননি। ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে কিভাবে কোন উপায়ে ব্যবসায়ীরা মৎস্য আহরনোত্তর পরিচর্যা কেন্দ্রে এসে ব্যবসা করবে সেই বিষয়ে খুব দ্রুত সময়ের মধ্য সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App