আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে ‘কঠোর কর্মসূচি’র হুশিয়ারি দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ।

মঙ্গলবার (২৩ মে) দুপুরে মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকালে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলছি, তোমার অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাবো না। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, তোমাকে যেতে হবে, পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভাঙতে হবে তারপর একটা অন্তর্বতীকালীন সরকার হবে সেই সরকার দেশে নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে যাতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়।

তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে কেউ কেউ অনেককে প্রশ্ন করেন, এ (সরকার) তো যেতে চায় না। আমরাও জানি এমনকি যেতে চায়। ও(সরকার) যাতে যায় সেই ব্যবস্থা করবার জন্যই তো এই পদযাত্রা, সেই ব্যবস্থা করবার জন্যেই রোডমার্চ, সেই ব্যবস্থা করবার জন্যেই আরো বৃহত্তর কঠোর কর্মসূচি আমরা দেবো এবং আমরা সবাই মিলে দেবো।

নাগরিক ঐক্যের এই নেতা বলেন, যে যুগপত আন্দোলনের কথা আমরা বলেছি যুগপৎ কর্মসূচির মধ্যে আমরা আছি, সেই যুগপত পদ্ধতির মধ্যে কর্মসূচির আওতায় আমরা এই রকম কর্মসূচি দেবো যখন সরকারের আর কথা বলার জায় থাকবে না।আমরা সেই আন্দোলন গড়ে তোলবার চেষ্টা করছি।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সরকারের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ১৭ কোটি মানুষ কেউ আর এই সরকারকে দেখতে চাই না। আমরা পরিস্কার করে সেজন্য বলেছি, সোজা পথে হাটেন সেরাতুল মোস্তাকিম ধরেন। কিভাবে পদত্যাগ করবেন ঠিক করেন।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, সোজা পথে না হাটেন রাজপথে আপনাদের(সরকার) কান ধরে বিদায় করা ছাড়া, গলায় গামছা লাগানো ছাড়া বাংলাদেশের মানুষকে কোনোভাবে আমরা রক্ষা করতে পারবো না। গণতন্ত্র মঞ্চ সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে সকল বিরোধী দলকে রাজপথে সমন্বিতভাবে বিদায় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত সেই লড়াইকে আমরা এগিয়ে নেবো, এবার মানুষ বিজয় হবে, বাংলাদেশ জিতবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, অন্তর্বতীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ ১৪ দফা দাবিতে পদযাত্রা হয়। পদযাত্রাটি পল্টনে মোড় হয়ে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক গিয়ে শেষ হয়।

আগামী ২৮ মে ঢাকার মালিবাগ রেলগেইট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত পদযাত্রা করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। এরপর আগামী ৪-৭ জুন পর্যন্ত দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ করবে তারা।

নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বাংলাদেশ ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামালউদ্দিন পাটোয়ারি, স্থায়ী কমিটির সদস্য সিরাজ মিয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

[caption id="attachment_433099" align="aligncenter" width="1280"] মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকালে গণতন্ত্র মঞ্চের পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

‘স্যাংশন প্রচার করছে কেন সরকার’ মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যেই স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) আসে নাই, যেই স্যাংশনের কথা আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র) বলে নাই, তার কথা সরকার প্রচার করছেন কেনো? কারণ একটাই। দেশে তাদের পায়ের নিচে মাটি নাই, মানুষ পক্ষে নাই। আন্তর্জাতিক যারা ছিলো তারা সবাই একেক করে বলেছে- হয় ভালো নির্বাচন দাও, না হলে আমরা আমাদের কাজ করবো।

সেই প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা ও তার সরকার মনে করেছে, যেতে যখন হবেই তখন একটা বাহানা তৈরি করি। গণআন্দোলনে আমরা যাচ্ছি না, আমরা যাচ্ছি ওই আমেরিকার কারণে, বিদেশী শক্তির কারণে। সেজন্য তাদের(বিদেশী) নামে বিভিন্ন কথাবার্তা বলবার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ বলে আমরা আওয়ামী লীগকে সরিয়ে আরেকটা পার্টিকে বসালাম ওই কাজ করতে আসিনি। আমরা আওয়ামী লীগ বদলাবো, এই দুর্নীতিবাজ, এই দুর্নীতি, এই অন্যায়-অত্যাচার, এই রাষ্ট্র যা জনগণের ওপর অত্যাচার করে সেটাও বদলাবো। আমরা জনগনের জন্য উপযোগী কল্যাণকর, জনগনের জন্য সমস্ত অধিকার নিশ্চিত করে সেরকম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবো। তার লড়াই আমাদের অব্যাহত থাকবে। সেই লড়াইয়ের স্বপক্ষে আমরা অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোকে যেমন ঐক্যবদ্ধ করেছি ঠিক সেই রকমভাবে আপনাদের মাধ্যমে সমস্ত জনগোষ্টিকে ঐক্যবদ্ধ করছি। ইনশাল্লাহ আমরা জয়লাভ করব।

এসময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এখন থেকে নাকি তারা প্রতিরোধ করবেন। আমাদের লড়াইটা জনগনের অধিকার আদায়ের লড়াই। এই লড়াইকে নাকী তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে দেউলিয়া হয়ে গেছে এটাই তার প্রমাণ। এটা হচ্ছে পতনের আগ মুহুর্তে লম্বঝম্প। এই লম্বঝম্প দিয়ে টিকা যাবে না। ক্ষমতাকে অবশ্যই ছাড়তে হবে।