×

জাতীয়

পিডির দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৩, ০৭:০৪ পিএম

পিডির দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি

ছবি: সংগৃহীত

নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের লাইট হাউজ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) বিরুদ্ধে দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে। পিডি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) অনুমোদন ছাড়াই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন। পিডির সমন্বয়হীনতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘকালক্ষেপন হচ্ছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে অচলাবস্থার জন্য পিডি, ডিজি ও ঠিকাদার- তিন পক্ষকেই তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে দায়ী করেছে।

এদিকে, তদন্ত প্রতিবেদন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা না হলেও অধিদপ্তরের ডিজি কমডোর নিজামুল হককে সোমবার মহাপরিচালকের পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁর স্থলে নতুন ডিজি হিসাবে কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলমকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে পিডি পদত্যাগপত্র জমা দিলেও রহস্যজনক কারনে মন্ত্রণালয় এখনো তা গ্রহন করেনি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার বণিকের নেতৃত্বে গত ২৬ এপ্রিল পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সম্প্রতি তদন্ত কমিটি নৌসচিবের কাছে ৮টি সুপারিশসহ ৪২২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে প্রকল্প পরিচালক আবু সাইদ মোহাম্মদ দেলোয়ার রহমানের বিরুদ্ধে প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয়ের ঘাটতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ না দেয়া, সংস্থাপ্রধান, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব, যথাসময়ে কাজ না করা ইত্যাদি। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের কয়েকটি অভিযোগ যাচাইয়ে ‘কারিগরি কমিটি’ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোরিয়ার এলজি আল সামহি কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ডিজির অনুমোদন ছাড়া ঠিকাদারকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে বলেও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, অধিদপ্তরের ডিজির অনুমোদন না নিয়ে ঠিকাদারের বিল পরিশোধ ছাড়াও পিডির বিরুদ্ধে আইসিটি ইকুইপমেন্ট মোবিলাইজেশনের কাজ শেষ করার আগেই এ খাতের টাকা ব্যয় করার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের দুবলার চর ও ভোলার চর কুকরি-মুকরিতে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজের বিল পাসের তৎপরতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে ডিপিডি, এপিডিদের বিরুদ্ধেও নানা অনিয়মের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, তদন্তকালে বিভিন্নজনের মৌখিক (অনানুষ্ঠানিক) জবানিতে ডিপিডি ও এপিডিদের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কাজ না করে বিল পরিশোধের নামে প্রকল্পের টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া কমডোর এ জেড এম জালালউদ্দিন নৌ অধিদপ্তরের ডিজি থাকাকালে তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে আরো বিষ্ময়কর তথ্য উঠে আসে। প্রকল্পের কর্মকর্তাদের কোন কাজে কে কতো টাকা ঘুষ দিয়েছেন, তার বর্ণনা রয়েছে। ঘুষ বাবদ টাকা লেনদেনের এ ভয়ংকর বক্তব্য ওই বৈঠকের কার্যবিবরণীতেও স্থান পেয়েছে। তবুও প্রকল্পের এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ কারণে তাঁরা বেপরোয়া হয়ে উঠেন।

এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে কয়েকটি কাজের বিল যথাযথ প্রক্রিয়ায় দেয়া হয়েছে কি না এবং কাজের গুণগত মান ঠিক আছে কি না- তা খতিয়ে দেখতে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, ওই কমিটি প্রকল্পের কোন কোন কর্মকর্তা অব্যবস্থাপনার সঙ্গে দায়ী তা নির্ধারণ করবে।

তদন্ত প্রতিবেদনে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সহ-ঠিকাদার নিয়োগ, বেআইনিভাবে দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ ও ভীতি প্রদর্শনসহ ৭টি অভিযোগের প্রমাণ তদন্ত কমিটি পেয়েছে এবং তাঁকে মহাপরিচালকের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশও প্রতিবেদনে করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বিদায়ী ডিজি কমডোর নিজামুল হক বলেন, প্রকল্পটি যথাসময়ে ও যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমি মন্ত্রণালয়কে পৃথক দুটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এর একটি হলো- প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে আন্ত:মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন এবং অপরটি হচ্ছে- পিডিকে সরিয়ে দিয়ে নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়া। এর স্বপক্ষে সুনির্দিষ্ট অনেক যুক্তি ও কারন উল্লেখ করেছিলাম। তবে নৌ মন্ত্রণালয় আমার প্রস্তাব না মেনে নিজেরা একটি কমিটি গঠন করেছিলো। এছাড়া পিডিকেও স্বপদে বহাল রেখেছে।

প্রকল্প পরিচালক ও নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার আবু সাঈদ মোহাম্মদ দেলোয়ার রহমান বলেন, আমি পিডি’র দায়িত্ব থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। তারপরও বলবো দরপত্রের শর্ত এবং সরকারি বিধিবিধান মেনেই প্রকল্পের সব কাজ হয়েছে। তদন্তের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে আমার দায়িত্বকালীন সময়ে প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি। প্রকল্পের কাজ একদিনও বন্ধ ছিলো না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App