×

সারাদেশ

অবৈধ মুনাফালোভী সিন্ডিকেট নেতাদের নাম-পরিচয় প্রকাশে বাধা কোথায়?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৩, ০১:৪১ এএম

অবৈধ মুনাফালোভী সিন্ডিকেট নেতাদের নাম-পরিচয় প্রকাশে বাধা কোথায়?
অবৈধ মুনাফালোভী সিন্ডিকেট নেতাদের নাম-পরিচয় প্রকাশে বাধা কোথায়?
অবৈধ মুনাফালোভী সিন্ডিকেট নেতাদের নাম-পরিচয় প্রকাশে বাধা কোথায়?
অবৈধ মুনাফালোভী সিন্ডিকেট নেতাদের নাম-পরিচয় প্রকাশে বাধা কোথায়?

পেঁয়াজ-আদা-চিনি-রসুনসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী অবৈধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের। কিন্তু সিন্ডিকেটের মূল হোতারা কখনোই ধরা পড়ে না কিংবা তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ হয় না।

চট্টগ্রামে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের দুটি বড় সংগঠন চিটাগাং চেম্বার ও মেট্রোপলিটন চেম্বার নেতৃবৃন্দ কখনোই এই সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টি স্বীকার করেন না। এসব নেতৃবৃন্দ বরাবরই বলে থাকেন, বাজার অর্থনীতির যুগে সিন্ডিকেট বাণিজ্যে করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন বিষয়। বাংলাদেশ কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন (ক্যাব), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনসহ অন্যরা বলছেন, অসাধু সিন্ডিকেটের কারনে বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম লাগামহীন ও সাধারন ক্রেতারা অসহায়। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানও বলেন, এরই মধ্যে আমাদের কাছে সিন্ডিকেটের কিছু নামের তালিকা সংগ্রহে আছে। কিন্তু সাধারণ ভোক্তা ও নাগরিকদের প্রশ্ন- অবৈধ মুনাফালোভী সিন্ডিকেট সদস্যদের নামই যদি প্রশাসনের কাছে থেকে থাকে তাহলে তাদের কিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? বাধা কোথায়?

চট্টগ্রামের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী বললেন, ভোগ্যপণ্যের বাজার মূলত আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে সিটি, মেঘনা, দেশবন্ধু ও এস আলম গ্রুপ। তারাই হচ্ছে এখন মূল নিয়ন্ত্রক। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক ও মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বললেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার সবসময়ই ক্রেতাদের নাগালে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও নানা প্রকার সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকেন। তারপরও এক শ্রেণীর অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী জনগনকে জিম্মি করে তাদের ফায়দা হাসিল করতে চায়। তাই এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করা আজ সময়ের দাবী। তাদের অসাধু মনোভাবের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন- ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে কর্পোরেট সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজারকে একচেটিয়া করপোরেট সিন্ডিকেটের কবল থেকে উদ্ধার করতে হবে। এজন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, সরবরাহ ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই নিতে হবে বাণিজ্যমন্ত্রীকে। মিল মালিক ও ডিলাররা সিন্ডিকেট করে প্রথমত পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পরে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ ক্রেতা ও সাধারণ ব্যবসায়ীর। এ অবস্থায় ক্রেতাদের কোনো ধরনের সুখবর দিতে পারছেন না বাণিজ্যমন্ত্রী। তাই সাধারণ ভোক্তাদের মতো আমাদেরও প্রশ্ন বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে তেল-চিনি-পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের কানামাছি খেলা কয়দিন চলবে?

এদিকে, খুচরা বাজারগুলোতে কয়েক দিনের ব্যবধানে অস্বাভাবিকভাবে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযানে নেমেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

রবিবার (২১মে) সকাল ১১টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুকের নেতৃত্বে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার ও আড়তে বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এই সময় মূল্য তালিকা না থাকা এবং ক্রয়-বিক্রয় রশীদ অসংরক্ষনের মতো অনিয়মের অপরাধে দুটি দোকানকে (বারো আওলিয়া ট্রেডার্সকে ৫ হাজার টাকা ও ফরিদপুর বাণিজ্যালয়কে ৩ হাজার টাকা) মোট ৮ হাজার টাকা ও জাহেদ নামের একজন ব্যাপারিকে ২ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত আড়তদারদের জরিমানা পাশাপাশি সবাইকে সতর্ক করে দেন। অস্বাভাবিক মূল্যে পেঁয়াজসহ ভোগ্যপণ্য বিক্রির অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জনস্বার্থে এই অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক। তিনি বলেন, বাজারে বিভিন্ন দোকানে জরিমানা করার পাশাপাশি মনিটরিং অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও বাজারে পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীর মধ্যে মধ্যসত্বকারী একটা সিন্ডিকেট আছে যারা পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে অনেকাংশে দায়ী। এখানে ডিমান্ড অর্ডারের (ডিও) মাধ্যমে শুধুমাত্র একটি ক্রয় রশিদই বিক্রি হয় ১০ জনের অধিকের কাছে। আমরা বিভিন্ন ট্রেডিংয়ের দোকান থেকে ছয়শতাধিক মধ্যসত্ত্বভোগীদের নাম ও মোবাইল নাম্বার সংগ্রহে নিয়েছি, যাদের মাধ্যমে একটি পণ্যের দাম হাত বদল হতে হতে দাম বাড়তে থাকে। এখানে মধ্যসত্ত্বভোগীদের পাশাপাশি মুল সরবরাহকারীদেরও কারসাজি আছে। এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তাদের ট্রেড লাইসেন্স চেকিংসহ পরবর্তিতে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া, সরবরাহ কমার অজুহাতে যাতে জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে না পরে, সেই বিষয়েও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে ও নিয়মিত মনিটরিং করা হবে জানা গিয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন,বাজার মনিটরিং আব্যাহত আছে।যে কোন ভোজ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে যারা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর মধ্যেই আমাদের কাছে সিন্ডিকেটের কিছু নামের তালিকা সংগ্রহে আছে।

এদিকে, চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলমের সঙ্গে রবিবার বিকেলে যোগাযোগ করে এই সিন্ডিকেট ব্যবসা ও ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পণ্যের সরবরাহ চেইন ব্যবস্থা যদি ঠিক রাখা যায় তাহলে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে না। চিনির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি বলেন, লোকমুখে যতদুর জানা যায় আমাদের দেশে চারটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের বাজার তাদের মতো করে নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে চিনির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন যেসব চিনিকল রয়েছে সেগুলাকে আধুনিকায়ন ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা গেলে চিনি নিয়ে যে সংকট রয়েছে তা অনেকটাই কেটে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App