ট্রাকের ধাক্কায় ২ এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

সৌহার্দ-সম্প্রীতির অন্তরায় সাম্প্রদায়িকতা

পরের সংবাদ

ঢাকায় বাসের দৈন্যদশা

শামীম আহমেদ

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৩ , ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ আপডেট: মে ২২, ২০২৩ , ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ

একটি শহরের পরিবহনের জন্য গণপরিবহন অপরিহার্য। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও দেশের গণপরিবহনের দিকে তাকালে মনে হবে কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে পালিয়ে এসে ঢাকা শহরে গা ঢাকা দিয়েছে বাসগুলো। বাসের রং চটে গিয়েছে, দুটি বাসের পরস্পর ঘর্ষণের ফলে মাঝখানে বেঁকে গেছে, জানালার সব কাচ নেই, ফ্যানের অবস্থা করুণ, বসার সিটের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি, সাইলেন্সার দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। এই হলো একটি দেশের রাজধানীর বাসের অবস্থা। এবার আসা যাক এসব ভঙ্গুর গণপরিবহন রাস্তায় কতটা সুশৃঙ্খলভাবে চলে।
ঢাকার প্রায় সব বাস কন্ট্রাক্টে চলে। মানেটা হলো মালিককে দিনে নির্দিষ্ট টাকা দিতে হবে। উক্ত টাকার পরে যা থাকবে তাই ড্রাইভার এবং হেলপার পাবে। স্বভাবতই ড্রাইভার এবং হেলপার লোকসান করতে চাইবেন না এবং লাভ করতে হলে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। এতে করেই সড়কে কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকে না। ওভারটেকিং, যেখানে ইচ্ছা সেখান থেকে যাত্রী ওঠানো, বেশি ভাড়া আদায়, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী ওঠানো ইত্যাদি যেন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিযোগিতা করে বাস চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। মোটা দাগে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাইয়ে দুটি দ্রুতগতির বাসের সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতসহ ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়। এ ঘটনায় ঢাকাসহ দেশের সব শিক্ষার্থী সড়কে নেমে আসে এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন হয়। আবার দুই বাসের রেষারেষিতে রাজিব নামে এক ব্যক্তির হাত হারিয়ে মৃত্যু হয়। যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ তো আছেই। বাস থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা ও বাসে ধর্ষণের ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। বাস দুর্ঘটনায় অসংখ্য মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে।
ঢাকায় এসব ক্ষ্যাপাটে বাসের লাগাম টেনে ধরার কোনো পদক্ষেপ যে নেয়া হয়নি, তা নয়। ঢাকা উত্তর সিটির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক কিছু সুন্দর এবং বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি সব বাস মালিক সংগঠনের সঙ্গে কয়েক দফা মিটিং করে বোঝাতে সম্মত হন, নগরবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে হবে। কাজটা মোটেও সহজ ছিল না, কেননা এতে রয়েছে কোটি টাকার স্বার্থ এবং ব্ল্যাক মানি। তার পরিকল্পনা ছিল ঢাকায় থাকবে ৬টি বাস কোম্পানি। সবার সমানসংখ্যক বাস থাকবে এবং সবাই আয়ের সমান অংশীদার হবেন। এতে যাত্রী নিয়ে কাড়াকাড়িও থাকবে না, প্রতিযোগিতাও থাকবে না। কিন্তু আনিসুল হকের মৃত্যুর পর এ পরিকল্পনা আর আলোর মুখ দেখেনি।
পৃথিবীর উন্নত এবং পার্শ্ববর্তী দেশে যেখানে প্রাইভেট বাস নেই বললেই চলে সেখানে কোনো অদৃশ্য কারণে আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্য হারে পাবলিক বাস কমে যাচ্ছে। যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিদিন হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, প্রতিদিন গড়ে ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। এসব বাস জনজীবনসহ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অবিন্যস্ত বাস চলাচলে যানজট সৃষ্টির মাধ্যমে দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্টসহ লাখ লাখ লিটার জ¦ালানি তেল নষ্ট হচ্ছে। অধিকাংশ বাস কালো ধোঁয়া নির্গমন করে। এ কালো ধোঁয়ায় থাকে বিষাক্ত সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন ড্রাই অক্সাইড, সালফার থাকে। এসব উপাদান পরিবেশ দূষণ, মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহের ভেতর ঢুকে ফুসফুস, হাঁপানি, একজিমা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনতিবিলম্বে ঢাকা নগরবাসীর অসহনীয় সমস্যার সমাধানে বাস-পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা জরুরি।

শামীম আহমেদ : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়