×

জাতীয়

শিক্ষায় বাজেট বাড়ানোর তাগিদ বিশিষ্টজনদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৩, ১১:৪৮ এএম

শিক্ষায় বাজেট বাড়ানোর তাগিদ বিশিষ্টজনদের
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শিক্ষায়  নিন্মতম বরাদ্দ বাংলাদেশে

করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাখাতকে টেকসই করতে উল্লেখযোগ্য হারে বাজেট বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, শিক্ষায় মোট জিডিপির অন্তত ৬ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে। তা না হলে করোনাপরবর্তী সময়ে দেশের শিক্ষাখাতকে টেনে তোলা যাবে না। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও এ খাতে বাজেট বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন। আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।

গত কয়েক বছরের বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে ৮১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল- যা মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৭১ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা- যা জিডিপির ২ দশমিক ৯ শতাংশ। টাকার অংকে প্রতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়লেও বাজেটের আকারের অনুপাতে তা সন্তোষজনক নয়।

জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে শিক্ষায় বাজেট বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষার বাজেট দীর্ঘদিন ধরে দুই থেকে আড়াই শতাংশের আশপাশেই থাকছে। প্রতি বছরই নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, শিক্ষার্থী বাড়ছে। কিন্তু বাজেট বাড়ছে না। ফলে গবেষণা তেমন হচ্ছে না। অথচ আমাদের গবেষণায় প্রচুর বরাদ্দ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বর্তমানে শিক্ষায় নতুন কারিকুলাম এসেছে। তার জন্য দক্ষ প্রশিক্ষণ লাগবে, অবকাঠামো লাগবে। এজন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত বরাদ্দ। অন্য খাতে কমিয়ে হলেও শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। মোটা দাগে গবেষণা, লাইব্রেরি এবং কারিগরি শিক্ষায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে। জাতীয় উন্নয়নের শিক্ষার বাজেট বাড়াতেই হবে। তা না হলে আমাদের সব উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়বে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের অর্থনীতির তুলনায় শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ছে না। জাতীয় আয়ের ৪-৬ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া এবং জাতীয় বাজেটের ১৫-২০ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ দিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি শিক্ষার বাজেট জিডিপির তিন শতাংশ পর্যন্ত যায় না। এটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নিন্মতম।

তিনি বলেন, প্রতি বছরই বলা হয় বাজেটে শিক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আমরা লক্ষ্য করেছি শিক্ষার বাজেটের সঙ্গে সংযুক্ত করে অন্য প্রকল্প ঢুকিয়ে দেয়া হয়। শিক্ষার বাজেটকে একটি পূর্ণাঙ্গ বাজেট হিসেবে দেয়া উচিত। এবারও হয়তো অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়ে বলা হবে শিক্ষায় সর্বোচ্চ বাজেট দেয়া হলো। বাংলাদেশের অনেকগুলো অর্জন রয়েছে তার মধ্যে ছেলেমেয়েদের সমতা, প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সমতা। এগুলো ধরে রাখতে হলে বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের বাজেটে টাকার অংক বাড়লেও আনুপাতিক হারে কমেছে। আগে যেখানে ১০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতো এখন সেখানে ১৫০ জন ভর্তি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে অনেক বিশাল বিশাল মেগা প্রকল্প হচ্ছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত শিক্ষার কোনো মেগা প্রকল্প হয়নি। তার মানে শিক্ষা কি অগ্রাধিকারের মধ্যে নেই? শিক্ষায় যথাযথ বিনিয়োগ না করলে আমাদের গর্বের জায়গা পদ্মা সেতু রক্ষার জন্য বাইরে থেকে লোক আনতে হবে। মানবসম্পদ বিনির্মাণে বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই বলেও জানান এই শিক্ষাবিদ।

এদিকে গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে শিক্ষায় বাজেট বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমাদের জাতির পিতা ’৭০-এর প্রাক-নির্বাচনী ভাষণে বলেছিলেন, শিক্ষা বিনিয়োগের সর্বশ্রেষ্ঠ খাত, এখানে জিডিপির শতকরা ৪ ভাগ দেয়া উচিত। কেউ কেউ বলেন, শিক্ষায় জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে। শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন আমরা পুরোটাকে ধরলে ৩ ভাগের কাছাকাছি আছি। আমাদের এটাকে বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, টাকার অংকে হলে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত আমলের শেষ বছরে আমাদের সারাদেশের বাজেট ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। এখন আমাদের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নেই বাজেট প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। সেই অর্থে বিনিয়োগ অনেক বেশি।

বিনিয়োগ টাকার অংকে কত হচ্ছে তার চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে শুধু শিক্ষা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ সেটাই শুধু শিক্ষায় নয়, খাদ্য, পুষ্টি, বিদ্যুৎ, আইসিটি ও যোগাযোগে যে বিনিয়োগ হচ্ছে, এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানানরকম প্রভাব শিক্ষার ওপর আছে। তাছাড়া শুধু বাজেট বরাদ্দ নয়, টাকা নয়, আমার অনেক টাকা আছে কারিকুলাম ভালো না, আউটকাম কি ভালো হবে? অনেক টাকা আছে। কিন্তু শিক্ষক ভালো না থাকলে আউটকাম পাব না। টাকা আছে টেকনোলজি ব্যবহার করতে পারছি না। আবার টাকা, আছে সব কিছু আছে। কিন্তু সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে হবে না।

তিনি বলেন, আমরা এখন চাইছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় অনেক বেশি ক্লাব গঠন করতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্লাব বেইজ হবে। দাবা ক্লাব হবে না কেন, বিজ্ঞান ক্লাব হবে না কেন, ডিবেটিং ক্লাব হবে না কেন অন্যান্য আরো ক্লাব হবে না কেন? খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হবে। এখন রোবোটিক ক্লাব হচ্ছে, নানান কিছু হচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো করছে। তাদের আর একটু এগিয়ে দিতে হবে। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরো অনেক ভালো করার চেষ্টা করছি। শিক্ষকদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা যত ভালো করতে পারব, আমরা ততো এগিয়ে যেতে পারব।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এ খাতে বরাদ্দ জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি হলেও ২০ বছর ধরে আমাদের তা অর্ধেকের চেয়েও কম। বরাদ্দ ৪ শতাংশ ছাড়া মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App