×

সারাদেশ

যে কারণে পিছু হটলেন আরিফ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৩, ০৮:৪৭ এএম

যে কারণে পিছু হটলেন আরিফ

ছবি: সংগৃহীত

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। এ নিয়ে স্থানীয় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। নির্বাচনে থাকার আভাস দিয়েও কেন সরে দাঁড়ালেন তিনি? আরিফ বলছেন- দলের সিদ্ধান্ত মেনেই প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত থাকছেন তিনি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতির নানা হিসাব-নিকাশ করেই এমন সিদ্ধান্ত আরিফের। সিটি নির্বাচনের আবহ শুরু হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় ছিলেন আরিফ। তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, নাকি হবেন না- এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছিল সিলেটজুড়ে। মেয়র আরিফ কখনো প্রার্থী হতে পারেন, আবার কখনো নির্বাচন ব্যবস্থার সমালোচনা করে এক ধরনের ধোঁয়াশায় ফেলে দেন নগরবাসীকে। তবে আরিফ কখনো বসে থাকেননি। নগরীর বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায় করে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শুরু করেন তিনি। নগরীর বর্ধিত এলাকায় গিয়েও ভোটারদের সঙ্গে গণসংযোগ করেন তিনি। তার তৎপরতা দেখে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, এবারো প্রার্থী হচ্ছেন আরিফ। গত পহেলা মে শ্রমিক সমাবেশ ডেকে এক অভিনব ঘোষণা দেন আরিফুল হক চৌধুরী। সেদিন তার দীর্ঘ বক্তৃতার শেষের দিকে এসে বলেন, ২০ মে রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ ডেকে তিনি নির্বাচন নিয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করবেন। অথচ পুরো বক্তব্যে তিনি ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন এবারো নির্বাচন করবেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, নগরীতে আমার অনেক উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলো সমাপ্ত করতে আবারো নগরবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। তখন অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন তিনি আবার প্রার্থী হচ্ছেন। কিন্তু গতকাল শনিবার আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণায় সিলেটে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন হিসাব মেলাতে পারেননি আরিফ। গত ১৯ মে পর্যন্ত তিনি তার বিশ্বস্তজনদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। একই সঙ্গে নির্বাচনে আসতে তার ওপর চাপ ছিল বিভিন্ন দিক থেকে। আবার গত মাসে যুক্তরাজ্য সফরে তার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করে দেশে ফেরেন তিনি। বিমানবন্দরে বিশাল শোডাউনের মাধ্যমে আরিফকে অভ্যর্থনা  জানান হাজারো নেতাকর্মী। তখন নগরবাসীর ধারণা ছিল- আরিফ গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে এসেছেন তারেকের কাছ থেকে। গতকাল (শনিবার) নাগরিক সমাবেশে তাকে সহযোগিতার জন্য আরিফুল হক চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা, সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে ধন্যবাদ জানান। বক্তব্যের শুরুতেই আরিফ বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ক্ষমতায় থাকার সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনেক সাহায্য করেছেন। আমি মেয়র থাকা অবস্থায় আমাকেও একইভাবে সাহায্য করে গেছেন। লিখিত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে ধন্যবাদ জানান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাকে বিভিন্ন সময় সাহায্য করার জন্য। আরিফুল হকের এমন বক্তব্যকে ভেল্কিবাজি বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমাদের মিশন নৌকাকে বিজয়ী করা। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। স্থানীয় রাজনীতির হাঁড়ির খবর রাখেন এমন বিশিষ্টজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী অত্যন্ত বিচক্ষণ রাজনীতিক। ভোটের হাওয়া বুঝতে পেরেই সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এর মধ্যে প্রধান কারণ হিসেবে তিনটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। প্রথমত, বিএনপি সমর্থক অনেক ভোটার ভোট দিতেই যাবেন না। ফলে আরিফের ভোট কমে যাবে। দ্বিতীয়ত, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় এবার দলের নেতাকর্মীদের পাশে পাবেন না আরিফ। ফলে বিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিটি কেন্দ্রে এজেন্ট ও ভোটকর্মী জোগাড় করাই কঠিন হবে তার জন্য। তৃতীয়ত, ভোট না করার দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ায় দলে তার গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা অনেকখানি বেড়ে যাবে। ফলে দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে চাউর রয়েছে- দলের পক্ষ থেকে যুগ্ম মহাসচিব পদ দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে আরিফকে। তবে তিনি চাইছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য হতে। এ বিষয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী দলের সিদ্ধান্তকে স্যালুট জানিয়েছেন। এ জন্য দল তাকে পুরস্কৃত করবে। এই সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। এমনকি কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও আমরা চিঠি দিয়ে নির্বাচনে না আসার অনুরোধ জানিয়েছি। এ প্রসঙ্গে বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, আমরা যতটুকু জানি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচনে আসার শতভাগ ইচ্ছা ছিল। নির্বাচন করার প্রত্যাশা নিয়েই তিনি এগোচ্ছিলেন। কিন্তু তার দলের সিদ্ধান্তকে মানতে গিয়েই হয়তো তিনি কঠিন এই পদক্ষেপ নিলেন। এছাড়া, বর্তমান সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থা, ইভিএম এগুলো নিয়ে হয়তো তার সন্দেহ ছিল। সরকার দলীয় প্রার্থীর তৎপরতাকে তিনি হয়তো অন্য চোখে দেখেছেন। কেন্দ্র দখলের ভয়ও ছিল তার। একই সঙ্গে তার নিরাপত্তা কর্মীদের প্রত্যাহারের বিষয়টিও তাকে ভাবিয়েছে। কিম মনে করেন, সরকারের পক্ষ থেকে আরিফ হয়তো সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো আশ্বাস পাননি। এ কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শাহিন বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে না আসার কারণে ভোট নিয়ে একেবারেই আগ্রহ কমে যাবে নগরবাসীর। আরিফের ভোটে না আসার পেছনের কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, অস্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা, ইভিএম ও কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা থেকেই হয়তো সরে দাঁড়িয়েছেন আরিফ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App