×

জাতীয়

দু-একদিনের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৩, ০২:২০ পিএম

দু-একদিনের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। ছবি: ভোরের কাগজ

পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা কেজি কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। একই সঙ্গে, দাম কিছুটা কমতির দিকে থাকায় আরো দুই-তিনদিন বাজার পরিস্থিতি দেখে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

রবিবার (২১ মে) সকালে সচিবালয়ে নিজ অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, গত বছর দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ও মজুত ভাল ছিলো। পেঁয়াজের দাম কম ছিলো, কৃষকেরা কম দাম পেয়েছিলো। সে বছর দাম বাড়বে- এই আশায় মজুত করে রাখা পেঁয়াজ পচে গেছিলো। কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। সেজন্য, এ বছর পেঁয়াজের কী অবস্থা আমরা দেখতে চাচ্ছি। কৃষকের নিকট, গুদামে ও আড়ৎদারের নিকট কি পরিমাণ পেঁয়াজ আছে, তা দেখতে গত দুই-তিনদিন মাঠ পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর নিয়েছে। মাঠ থেকে তথ্য পেয়েছি যে, যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুত আছে। তবে, দাম আরো বাড়বে- এই আশায় বাজারে বিক্রি করছে না। এছাড়া, শুধুই পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হয়েছে। এ মুহূর্তে দাম বাড়ার কথা না। সিন্ডিকেটের হাত আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় মধ্যম আয়ের, সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত চাষির স্বার্থটা দেখতে চাচ্ছি। কারণ, গতবছর কৃষকেরা দাম কম পাওয়ায় এ বছর পেঁয়াজের উৎপাদন কমেছে প্রায় দুই লাখ টনের মতো। আমরা উচ্চপর্যায়ে, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করছি। গভীরভাবে বাজার পর্যবেক্ষেণ করছি। দুই-তিনদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে কিনা।

তিনি বলেন, পেঁয়াজ খুবই পচনশীল ফসল। এটি রাখা কঠিন। পেঁয়াজ রাখা যায় না, শুকিয়ে যায়, পচে যায়। তবে আমরা কিছু প্রযুক্তি নিয়ে এসেছি, কীভাবে গুদামে রাখা যায়। যদি শেলফ লাইফ বাড়ান যেত, তাহলে আমাদের যে উৎপাদন হচ্ছে, তাতে পেঁয়াজ দিয়ে বাজার ভাসিয়ে দেয়া যেত।

‘নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কোনো কারণ নেই’

নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কোন কারণ দেখছি না। আমার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে আর কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না। তারা বাস্তবতা বুঝবে ও একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সহযোগিতা দেবে।

তিনি আরো বলেন, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ কোনোদিনই আমরা কামনা করি না ও সহজভাবে নিতে পারি না। দেশে একটি নির্বাচিত সরকার রয়েছে, আর ৬ মাস পর আরেকটি নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ীই সেই নির্বাচন হবে।

মিশরের উদাহরণ টেনে মন্ত্রী বলেন, মিশরে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার ছয় মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সেদেশকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাঁচা তুলা আমদানিতে ফিউমিগেশন করতে হবে না: কৃষি সচিব

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাঁচা তুলা আমদানির ক্ষেত্রে দেশে আর পোকামাকড় মুক্তকরণ বা ফিউমিগেশন করতে হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। তিনি বলেন, এতদিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির ক্ষেত্রে দেশে পৌঁছানোর পর পোকামাকড়মুক্ত করে, বন্দর থেকে খালাসের ছাড়পত্র নিতে হতো। যুক্তরাষ্ট্র তুলা রপ্তানির আগে সেদেশে পোকামাকড়মুক্ত করে। সেটি দেশেও আরেকবার ফিউমিগেশন করা হতো। সেজন্য, দুবার পরীক্ষা বা ডাবল ফিউমেগেশন বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ব্যবসায়ীরা অনেকদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ অবস্থায়, বাংলাদেশ থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করে কাঁচা তুলা পোকামাকড়মুক্ত করার পদ্ধতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

রবিবার (২১ মে) সকালে সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে কৃষি সচিব এসব কথা বলেন। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও দূতাবাসের ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদলে বাণিজ্য প্রতিনিধি ডেপুটি এসিসট্যান্ট ব্রেন্ডন লিঞ্চ, সাউথ এশিয়ার ডিরেক্টর মেহনাজ খান, রিজিওনাল আইপি অ্যাটাশে জন কাবেকা, ঢাকার ইউএস দূতাবাসের ইকনমিক চিফ জোসেফ গিবলিন, এগ্রিকালচার অ্যাটাশে মেগান ফ্রান্সিস, লেবার অ্যাটাশে লিনা খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার কাঁচা তুলায় ক্ষতিকর ‘কটন উইভিল’ পোকা থাকায় সেসব দেশ থেকে কাঁচা তুলা আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পৌঁছার পর পোকামাকড়মুক্ত বা ফিউমিগেশন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। ইউরোপ, আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতা নেই। এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাঁচা তুলা আমদানির ক্ষেত্রেও এটি প্রয়োজন হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট বা রোগজীবাণুমুক্ত সনদপত্র থাকলেই চলবে। তবে, উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশের তুলার ক্ষেত্রে আগের মতোই ফিউমিগেশন করার বাধ্যবাধকতা বহাল রয়েছে। এছাড়া, একই কন্টেইনারে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশের তুলা শিপমেন্ট হলে, যুক্তরাষ্ট্রের তুলাকেও বাধ্যতামূলক ফিউমিগেশন করতে হবে।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী দেশে বছরে তুলার চাহিদা ৮৫ লাখ বেল। দেশে উৎপাদন হয় প্রায় দুই লাখ বেল। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে সাড়ে সাত লাখ বেল তুলা আমদানি হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App