×

সারাদেশ

গোপনে নিয়োগ পরীক্ষা, তোপের মুখে নিয়োগ কমিটি উধাও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৩, ১২:৩২ পিএম

গোপনে নিয়োগ পরীক্ষা, তোপের মুখে নিয়োগ কমিটি উধাও

ছবি: তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার একটি দাখিল মাদ্রাসায় গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের আবেদন করিয়ে পরীক্ষা নিতে গিয়ে টোপের মুখে পড়ে মাদ্রাসার সুপারসহ নিয়োগ কমিটির সদস্যরা। এ সময় চাকরি প্রত্যাশীদের আন্দোলন ও অনশনে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা৷

শনিবার (২০ মে) উপজেলাধীন তিরনইহাট ইউনিয়নের ফকিরপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় এ ঘটনাটি ঘটে৷ এর আগে মাদ্রাসা সুপারের অফিস কক্ষের সামনে সকাল থেকেই স্থানীয় জনসাধারণ ও চাকরি প্রত্যাশীরা অবস্থান নেন৷

এ সময় মাদ্রাসার সুপার জিয়াউর রহমান, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আইয়ুব আলী, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শওকত আলী, ডিডি ও ডিজির প্রতিনিধি ও দুই পদের জন্য পরীক্ষা দিতে আসা প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত হয়।

পরে ক্ষুব্ধ হয়ে মাদ্রাসার সুপার,কমিটির বিরুদ্ধে এবং পরীক্ষা বাতিলের দাবি নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে অবস্থান নেয় পরীক্ষা বঞ্চিত প্রার্থী ও স্থানীয়রা৷ তবে এর আগেই চাকরি প্রত্যাশীদের পক্ষে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধের দাবিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগও প্রদান করে তারা৷

আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে জানান, ফকিরপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় শূন্য পদে থাকা একজন নিরাপত্তাকর্মী ও একজন আয়া পদের জন্য ২০২০ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তি দেখে স্থানীয় ৩২ জন প্রার্থী আবেদন করেন। কিন্তু সেই সময় হঠাৎ করে মহামারী করোনাভাইরাস দেখা দিলে সেই কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া মাদ্রাসা কমিটি বন্ধ রাখে এবং নিয়োগ পরীক্ষা দিতে তাল-বাহানা করে এবং বিভিন্ন প্রার্থীর কাছে ঘুষ দাবি করে মাদ্রাসার সুপার ও ম্যানেজিং কমিটি।

অন্যদিকে দীর্ঘ দিন পর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পুনরায় দ্বিতীয় দফায় চাকরি বিজ্ঞপ্তি গোপনে প্রকাশ করে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে আবেদন করিয়ে গোপনে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারন করে৷ এতে বঞ্চিত হয় পূর্বের বিজ্ঞপ্তি দেখে যারা আবেদন করেছিল সেই আবেনকারীরা। এর মধ্যে শনিবার সকালে গোপনে সেই দুই পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এমন খবর পেয়ে স্থানীয় মানুষ ও বঞ্চিতরা সকাল থেকে মাদ্রাসার সুপারের অফিস কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে অনশন ও বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে পরীক্ষা বন্ধের দাবি তোলেন। এ সময় তাদের আন্দোলনের টোপের মুখে পড়ে সংশ্লিষ্টরা পরীক্ষা স্থগিত করেন এবং কৌশলে দ্রুত মাদ্রাসা ত্যাগ করে চলে যান।

এদিকে, মাদ্রাসা কমিটির বিরুদ্ধেও অভিযোগ করে স্থানীয়সহ চাকরি প্রত্যাশরীরা ৷ কমিটির সদস্যের দাপট দেখিয়ে সোলেমান আলী নামে অভিভাবক তার মেয়ে ও বোনকে আয়া পদের জন্য তকদির করে আবেদন করান৷ সোলেমান আলী নামে ওই সদস্যের ছেলে আগে মাদ্রাসাতে লেখাপড়া করলেও পরবর্তীতে ভর্তি হয় মাদ্রাসার পাশে থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে৷ ফলে সন্তান লেখাপড়া না করলেও তিনি অভিভাবক সদস্য পদে বহাল রয়েছেন এবং মেয়ের চাকরির জন্য করছেন দৌড়ঝাপ। সন্তান লেখাপড়া না করেও কিভাবে অভিভাবক সদস্য হিসাবে রয়েছেন এবং এই পরীক্ষার গোপনে করার বিষয়ে সহযোগিতা করার অভিযোগে তার বিচার দাবি করেন আনদোলনকারীরা৷

এ বিষয়ে নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরি প্রত্যাশী নুরুজ্জামান বলেন, আমরা ২০২০ সালে আবেদন করলেও সেই বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে মাদ্রাসার সুপার ও কমিটি নতুন করে গোপনে বিজ্ঞাপ্তি দিয়ে আজকে গোপনে পরীক্ষা নিতে আসলে আমরা বিষয়টি জানতে পারি৷ তারা তাদের নিজের স্বজনদের আবেদন করিয়ে আমাদের বঞ্চিত করেছে। মেধার ভিত্তিতে চাকরি হউক এবং সেটা প্রকাশ্যে হউক এটাই আমাদের দাবি৷

একই অভিযোগ করেন আয়া পদে চাকুরী প্রত্যাশী মাহমুদা বেগম তিনি বলেন, আমি ২০২০ সালে আবেদন করি আয়া পদে। কিন্তু পরীক্ষা না নিয়ে আবার নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে গোপনে ৷ আমরা মাদ্রাসার সুপার ও কমিটির লোকজন বিভিন্ন প্রার্থীর কাছে টাকা চেয়েছিল। আমরা দিতে না পারায় কৌশলে তাদের লোকজনকে চাকরি দেয়ার জন্য আজকে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেন। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই এবং নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরীক্ষা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

মাহমুদা বেগমের স্বামী মনসুর আলী জানান, মাদ্রাসার সুপার ও কমিটির লোকজন মোটা অংকের ঘুষ দাবি করায় আগের প্রার্থীেদের বাদ দিয়ে নতুন করে আবেদন করিয়ে নিজেদের লোকদের নিয়োগ দেয়ার জন্য পরীক্ষার আয়োজন করে৷ আজকে জানতে না পারলে তারা নিয়োগ দিয়ে দিতো আর মেধাবীরা বাদ পড়ে যেতো তাই আমরা সুষ্ঠু নিয়োগ পরীক্ষার দাবি জানাই৷

এদিকে, ফকিরপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার জিয়াউল হক বলেন, নৈশ্য প্রহরী ও আয়া পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ আগে হয়েছিল কিন্তু করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আজকে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হলে কয়েকজন মাদ্রাসায় এসে দাবি তোলেন নতুন করে যেন বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশ করে পরীক্ষা নেয়া হয়৷ সব কাগজপত্র দেখে সংশ্লিষ্টরা তাদের দাবির প্রেক্ষিতে পরীক্ষা স্থগিত করেন। তবে তিনি প্রার্থীদের কাছে অর্থ চাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান।

অন্যদিকে, ফকিরপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আইয়ুব আলী বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা ছিল শনিবার সকালে কিন্তু স্থানীয়রা বলেন নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা দেখার পর পরীক্ষা স্থগিত করেন।

এ বিষয়ে মাদ্রাসার অভিভাবক সদস্য সোলেমান আলী জানান, আমার ছেলে আগে মাদ্রাসায় পড়লেও এখন প্রাইমারিতে পড়ে। আগে থেকেই মাদ্রাসার কমিটিতে ছিলাম৷ ভালো কাজ করলে শত্রু থাকবেই তাই কিছু মানুষ এমন করছে৷

এদিকে, তেঁতুলিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শওকত আলীর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি৷

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App