×

সম্পাদকীয়

আদালত চত্বরে ভোগান্তি ও অনিয়ম : সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৩, ০১:৪৬ এএম

ঢাকা জজ কোর্ট দেশের অনেক বিচারপ্রার্থী মানুষের কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিচারালয়। বিচারপ্রার্থীসহ দেশের অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন এখানে আসেন। তবে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় এখানে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হয় বিচারপ্রার্থীদের। পেশকার, জিআরও, পুলিশ, পিয়ন ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ভুয়া আইনজীবীদের খপ্পরে পড়ে অনেকে ভোগান্তির শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। আদালতে পর্যাপ্ত টয়লেট নেই। প্রতিদিন এখানে আসা প্রায় অর্ধলাখের বেশি মানুষের জন্য মাত্র ৩টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়া বিচারপ্রার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রামাগারও নেই। বসার জন্য এজলাস কক্ষের বাইরেও নেই পর্যাপ্ত বেঞ্চ। আদালত চত্বরে এমন অব্যবস্থাপনা খুবই দুঃখজনক। আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দুর্বল। এর ফলে ঝুঁকি নিয়ে আসতে হয় বিচারপ্রার্থীদের। মাদকসেবী, ছদ্মবেশী পাগল ও অপ্রয়োজনীয় মানুষের অবাধ চলাচলে আদালতের পরিবেশ ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে। আদালতের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন অসঙ্গতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। কর্তৃপক্ষ আন্তরিক ও সচেতন থেকে সুষ্ঠু নজরদারি ও আইন অমান্যকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে অনিয়ম বন্ধ হবে না। এছাড়া বিচারপ্রার্থীদের সবচেয়ে বড় ভোগান্তি হলো বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকা মামলা। মামলার দীর্ঘসূত্রতায় ভুক্তভোগীদের ভোগান্তি বাড়ে। আমরা বিশ্বাস করি, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হলে অপরাধীদের অপরাধপ্রবণতা কমবে। মামলাসংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা, সাক্ষী, আইনজীবী, রাষ্ট্রপক্ষসহ সবাইকে বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আন্তরিক ও সততার সঙ্গে কাজ করার বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে আমরা জানি, জঙ্গি ছিনতাইসহ নানা সময় আসামি পলায়নের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। গত বছর ২০ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি দুই জঙ্গিকে নাটকীয়ভাবে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এরপর কোর্ট প্রশাসনের টনক নড়ে। কিছুদিন আদালত প্রাঙ্গণে জোরদার নিরাপত্তা থাকলেও আবার পরিস্থিতি ঢিলেঢালা হয়ে যায়, যা মোটেও কাম্য নয়। ঢাকা জজ কোর্টের প্রবেশপথে পুলিশি পাহারা ও তল্লাশিতে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। পুরো কোর্ট এলাকায় নেই পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা। ফলে ছিনতাইকারীসহ অস্ত্র নিয়ে যে কেউ আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বড় মামলায় সাক্ষী দিতে একপ্রকার ঝুঁকি নিয়ে আসতে হয় বিচারপ্রার্থীদের যা দুশ্চিন্তা ও ভোগান্তির কারণ হয়ে ওঠে। আমরা মনে করি, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে ও আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীদের স্বস্তি দিতে অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে আদালত চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। আদালত প্রাঙ্গণসহ প্রয়োজনীয় সব জায়গায় পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা বসানো ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি আইনজীবী সমিতি, কোর্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগ নিলে প্রতারণাসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান করে আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমানো সম্ভব হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App