×

খেলা

অভিষেকেই চমক দেখানো কে এই আরাফাত?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৩, ০১:০৫ পিএম

অভিষেকেই চমক দেখানো কে এই আরাফাত?

কাউন্টি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে কেন্টের হয়ে খেলছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পেসার আরাফাত ভূঁইয়া। গত বুধবার দলটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন তিনি। এরপর অভিষেক ম্যাচে মাঠে নেমেই চমক দেখিয়ে বল হাতে ৬৫ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন এই পেসার। পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, কে এই আরাফাত? কীভাবে খেলছেন ইংল্যান্ডের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট দলে?

আরাফাতের জন্ম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। এরপর মাত্র ১৪ বছর বয়সে ভালো ক্রিকেটার হওয়ার আশায় পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। বর্তমানে পূর্ব লন্ডনে বসবাস করা আরাফাতের যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব আছে। কেন্টের হয়ে পেশাদার চুক্তি করার আগে দীর্ঘদিন দলটির দ্বিতীয় একাদশে খেলেছেন। দ্বিতীয় একাদশের হয়ে নেন ১৭ উইকেট। গত সপ্তাহে দ্বিতীয় একাদশের চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচে ৮১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে আলোচনায় আসেন। এছাড়া কেন্ট প্রিমিয়ার লিগে ব্লাকহিথের হয়েও খেলেছেন এই পেসার। এর আগে আরাফাত সবশেষ ছয় বছরে সারে, এসেক্স এবং ডার্বিশায়ারের দ্বিতীয় একাদশের হয়ে খেলেছেন। এর পাশাপাশি ২০১৯ সালে এমসিসির তরুণ ক্রিকেটারদের দল এবং দক্ষিণ এশিয়ান ক্রিকেট একাডেমির হয়েও খেলেছেন। বয়সের সঙ্গে মিল রেখে কেন্ট দলে ২৬ নম্বর জার্সি পরে খেলেন তিনি।

দীর্ঘ পরিশ্রমের পর কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার সুযোগ পেয়ে ভালো ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ধরা দেয় আরাফাতের কাছে। চুক্তির পরের দিনই দলের হয়ে অভিষেক হয় তার। অভিষেক ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে নিজিকে আবারো প্রমাণ করেন। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আরাফাত বলেন, ‘অভিষেক ইনিংসে চার উইকেট পেয়ে আমি যেন উড়ছি। সব সময় এটা আমার মাথায় থাকে যে এখানে আমি ভালো করতে এসেছি।’

ম্যাচের প্রথম দিনের শেষ দিকে পাঁচ ওভার বল করার সুযোগ পেলেও কোনো উইকেট তুলতে পারেননি আরাফাত। তবে দ্বিতীয় দিনে গত শুক্রবার সামর্থ্যরে প্রমাণ দেন তিনি। অভিষেক ইনিংসেই ৬৫ রান খরচে তোলেন ৪ উইকেট। প্রথম ইনিংসে কেন্টের হয়ে এটিই সেরা বোলিং। প্রথম ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে, নিজের দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম উইকেটের দেখা পান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই পেসার। তার অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বল এগিয়ে এসে ফ্লিক করার চেষ্টা করেন ওলি পোপ। ব্যাটে বলে করতে পারলেও তিনি টাইমিং করতে ব্যর্থ হন। এর ফলাফল হিসেবে বল চলে যায় মিড উইকেটে দাঁড়ানো গ্রান্ট স্টুয়ার্টের হাতে। কিছুদিন আগে ইংল্যান্ডের টেস্ট সহঅধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া পোপকে আরাফাত বিদায় করেন ৬৭ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলার পর। থিতু হওয়া ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে দলের হয়ে নিজের প্রথম উইকেট তোলাও আরাফাতের জন্য অনন্য এক সফলতা। আরাফাতের দ্বিতীয় শিকার জেমি স্মিথ। দ্বিতীয় স্লিপে জ্যাক লিনিংয়ের হাতে ধরা পড়ে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। একই ফিল্ডারের হাতে ধরা পড়ে আউট হন ইংল্যান্ডের টেস্ট উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান বেন ফোকসও। দুই ব্যাটারের কেউই বুঝতে পারেননি আরাফাতের বলের গতিবিধি। তার চতুর্থ শিকার উইল জ্যাকস। তিনি আরাফাতের শর্ট ডেলিভারি পুল করতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন।

বাংলাদেশে বড় হওয়া এই পেসারের আউট করা চার ব্যাটারই সারের ব্যাটিংয়ে তিন থেকে ছয় নম্বর ব্যাটসম্যান। আরাফাতের ৬৫ রানে ৪ উইকেটের সঙ্গে ওয়েস অ্যাগারের ৭৬ রানে ৩ উইকেটের সুবাদে সারেকে ৩৬২ রানে অলআউট করে কেন্ট। স্যাম বিলিংসের নেতৃত্বাধীন দলটি দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলায় নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ৮০ রান তোলে। এর আগে প্রথম ইনিংসে করে ২৭৮ রান।

আরাফাতকে দলে ভেড়ানোর ব্যাপারে গত বুধবার একটি বিবৃতি দিয়ে নিশ্চিত করে কেন্ট। বিবৃতিতে তারা লেখে, ‘কেন্ট ক্রিকেট ২০২৩ মৌসুমের বাকি অংশের জন্য ডানহাতি ফাস্ট মিডিয়াম বোলার আরাফাত ভূঁইয়াকে সই করার ঘোষণা দিতে পেরে আনন্দিত।’

কেন্টের হয়ে পেশাদার চুক্তি করার পর উচ্ছ¡সিত আরাফাত গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘কেন্টের হয়ে চুক্তি করতে পেরে আমি আনন্দিত। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার। আমার মনে হচ্ছে কঠোর পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।’

দলে সুযোগ পেয়ে আরাফাতের কঠোর পরিশ্রম সার্থক হলেও তার সব পরিশ্রম পুরোপুরি সার্থকতা পায় অভিষেক ইনিংসে ৪ উইকেট তুলে। কেন্টের সঙ্গে নিজের দীর্ঘ যাত্রা নিয়ে আরাফাত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই জায়গায় আসতে কঠোর পরিশ্রম করেছি। পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার জন্য সাত বছর লম্বা সময়।

বিভিন্ন কাউন্টির হয়ে খেলেছি, ঘোরাঘুরি করেছি। শুধু আমি নই, প্রচুর মানুষ এই একই লক্ষ্য নিয়ে দৌড়াচ্ছে। চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেন্টের প্রাক মৌসুমে ছিলাম। তারা আমাকে এ পর্যায়ে আসতে সাহায্য করেছে।’ এখন তিনি নিজেকে কোন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন এটিই দেখার বিষয়। কাউন্টিতে কোনো দলের সঙ্গে পেশাদার চুক্তি করা দ্বিতীয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার আরাফাত। এর আগে এসেক্সের হয়ে চুক্তিবদ্ধ হন রবিন দাস। তবে রবিনের জন্ম যুক্তরাজ্যে হলেও আরাফাতের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশেই।

আরাফাতের আগে কাউন্টি ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়া রবিন টাইগার্সের জার্সিতে নয় বরং সুযোগ পেলে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখেন। রবিন আলোচনায় এসেছিলেন গেল বছর লর্ডস টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের হয়ে ফিল্ডিং করে। বিপিএলে সেই রবিনকে দলে ভেড়ায় ঢাকা ডমিনেটর্স। মিরপুরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে স্মৃতি করেন তিনি। গণমাধ্যমকে রবিন বলেন, ‘এটা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা ছিল। একটা টেস্ট দলের অংশ হতে পারা। তাদের কাছ থেকে অনেক শিখেছি। লর্ডসের টেস্ট ম্যাচের আবহ আমাকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে।’

জন্ম কিংবা বেড়ে ওঠা লন্ডনে হওয়ায় বাংলাদেশ সেভাবে টানে না রবিনকে। সুযোগ মিললে প্রথম পছন্দ তার ইংল্যান্ডই। তবে ভাঙা বাংলায় জানিয়ে দিলেন অব্যক্ত ভালোবাসা।

তিনি বলেন, ‘এখন অবধি আমার স্বপ্ন ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা। কিন্তু আমি কোনো দরজা বন্ধ করতে চাই না ভবিষ্যতের জন্য। তবে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলাই স্বপ্ন। আমি খুবই খুশি। যখন জানতে পারলাম বিপিএল খেলব সেটা ছিল ভীষণ রোমাঞ্চকর। এটা এমন একটা লিগ যেখানে খেলতে আমি মুখিয়ে ছিলাম অনেকদিন ধরে।’

বিপিএলে রবিনের অভিষেক ভালো হয়নি। ব্যাট হাতে ছন্দে ছিলেন না তিনি। তবে কাউন্টিতে তিনি নিজেকে ফিরেছেন স্বরূপেই। এখন দেখার বিষয় আগামীতে কাউন্টিতে কতদূর নিয়ে যেতে পারেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App