×

জাতীয়

খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরা প্রশ্নে কেন বিব্রত বিএনপি?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৩, ১০:২৭ এএম

খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরা প্রশ্নে কেন বিব্রত বিএনপি?

প্রসঙ্গটি নীরবে এড়িয়ে যান বিএনপি নীতিনির্ধারকরা

জাতীয় নির্বাচনের ৬ মাস আগে হঠাৎ করেই ঘুরেফিরে সামনে আসছে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরা-না ফেরার বিষয়টি। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী খালেদা জিয়া এখনো দলের চেয়ারপারসন। তবুও সরকার পতন আন্দোলনে তার সম্পৃক্ততা থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের স্পষ্ট জবাব- ‘প্রশ্নই ওঠে না, এখন তো প্রশ্নই ওঠে না’। তাদের মতে, পরিপূর্ণভাবে মুক্ত হলেই খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরা সম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপিপ্রধানের রাজনীতিতে ফেরার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত থাকার পরও এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতারা কেন এত বিব্রত? তবে কি খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফিরে আসা চায় না বিএনপি? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন অনেকেই।

সিনিয়র নেতাদের দাবি- বিএনপি যখন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে, তখন খালেদা জিয়ার প্রশ্নটি সামনে আনার উদ্দেশ্য বিএনপির নেতাকর্মীদের বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলা। ১৪ মে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে খালেদা জিয়ার কোনো পরামর্শ আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে চটে যান বিএনপি মহাসচিব। বেশ রাগান্বিত ভঙ্গিতে তিনি বলেন, আপনাদের বহুবার বলা হয়েছে- আমাদের ম্যাডাম অসুস্থ, তিনি এখন গৃহবন্দি। দলের কর্মসূচি নেয়া ও পালনের ক্ষেত্রে তার পরামর্শ নেয়ার সুযোগ নেই। তাকে বারবার ভিন্ন ট্র্যাকে নিয়ে আসছেন কেন?

সূত্র জানায়, গত তিন বছরে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা মাঝেমধ্যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেও তিনি রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। তবে মির্জা ফখরুল তার সঙ্গে মাসে দু-তিনবার দেখা করছেন। দলের সব বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের পরই মূলত খালেদা জিয়া রাজনীতিতে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। দলের ত্যাগী অথচ কোণঠাসা নেতাদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকা অন্যতম নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানে খালেদা জিয়া দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলেছেন, তার বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।

‘তিনি (খালেদা জিয়া) একজন স্বাধীন মানুষ, তিনি কী করবেন, সেটা আমার বলে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না’- আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এমন বক্তব্যের পরই খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। চারজন মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র একজন নেতা প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলেছেন। তাদের বক্তব্য- খালেদা জিয়ার মুক্ত থাকার শর্তে যা আছে, তাতে তার রাজনীতি করতে বাধা নেই। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে আসা এমন বক্তব্য নিয়ে ঘোর সন্দেহ রয়েছে বিএনপির। বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে সরকারের উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

খালেদা জিয়ার রাজনীতির প্রশ্ন এলেই বিএনপির বেশির ভাগ নেতা এড়িয়ে যান। অনেকেই সরাসরি বলে ফেলেন, ‘এ প্রসঙ্গে কথা না বলি’। তবে ‘অন দ্য রেকর্ডে’ তারা যা বলেন তা হলো- খালেদা জিয়া অসুস্থতা, মামলা জটিলতা ও বয়সের কারণে দলের নেতৃত্বে সক্রিয় হতে পারবেন না; এমন বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন নেতাকর্মীরা। তিনি নিজেই কারাগারে যাওয়ার আগে ছেলে তারেক রহমানকে দলের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তারেক রহমান বিদেশে থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন দলের তৃণমূলে। যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও এখন তার হাতের মুঠোয়।

নেতাদের দাবি- এমনকি দলের ভেতরে যারা প্রথমে তারেক রহমানের নেতৃত্ব মানতে চাননি তারাও এখন তার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করতে অভ্যস্ত। তাই নতুন করে খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার বিষয়টি দলের জন্য বিব্রতকর। তাছাড়া নেতাদের শঙ্কা- সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীনরা খালেদা জিয়াকে ‘কার্ড’ হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করতে পারেন। আর সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি করতে দেয়া নিয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্য হতে পারে একটা মস্ত ফাঁদ।

‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বেই দল পরিচালিত হচ্ছে এবং সেভাবেই আমরা কাজ করছি’- এমনটা জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের একপক্ষের বক্তব্য, তারেক রহমানের নেতৃত্বেই বিএনপি এবার শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার অবস্থানে অটল থেকে তাদের যুগপৎ আন্দোলনের একটা পরিণতি দেখতে চাইছে। এর কোনো একপর্যায়ে যদি খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে বের করে অন্তত গুলশান কার্যালয় পর্যন্ত আনা যায় তবে নিঃসন্দেহে আন্দোলনে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি হবে। কিন্তু এভাবে খালেদা জিয়াকে রাজপথে আনা হলে তাকে আবার জেলে পাঠানো এবং আন্দোলন দমনে সরকারের পক্ষে কঠোর অবস্থান নেয়ার সুযোগ তৈরি হবে। তখন আন্দোলনকে সহিংসতায় ঠেলে দেয়ার কাজও সরকারের জন্য সহজ হবে। এছাড়া তারেক রহমানের নেতৃত্বও তখন দলের ভেতরেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া শর্তসাপেক্ষে সরকারের নির্বাহী আদেশে কারামুক্ত হয়ে বাসায় রয়েছেন। যতক্ষণ না এই শর্ত প্রত্যাহার হচ্ছে, ততক্ষণ তিনি সক্রিয় হতে পারছেন না। তবে দলের চলমান আন্দোলন সফল হলে খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন। তখন তিনি মুক্ত হবেন এবং রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App