×

সারাদেশ

আখাউড়ায় ব্রাইট ফিউচার হাতিয়ে নিল কয়েক কোটি টাকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৩, ০৪:৫৬ পিএম

আখাউড়ায় ব্রাইট ফিউচার হাতিয়ে নিল কয়েক কোটি টাকা

ছবি: জুটন বনিক, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

প্রতি মাসে লাখে সাড়ে পাঁচ হাজার টাক লাভ। এখানেই শেষ নয়। ঢাকায় হবে একাধিক বাড়ি ও গাড়ি। এমন লোভের প্রলোভন দেখিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম থেকে দালালের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ব্রাইট ফিউচার নামে একটি হোন্ডিংস প্রতিষ্ঠান।

শুধু সরলমনা সাধারণ মানুষই নয়। তাদের লোভের জালে আটকিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার এমন কি পুলিশের এক কর্মকর্তার কাছ থেকেও হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আজমপুর, চানপুর, রামধননগর ও কল্যাণপুরসহ আরো কয়েকটি গ্রামে এ ধরনের প্রতারণামূলক কার্যত্রম শুরু করে। তাদের কার্যক্রম নির্বিগ্নে পরিচালনা করতে স্থানীয় কিছু যুবককে মোটা অংকের কমিশনের লোভ দেখিয়ে তারা মাঠে নামায়। কমিশনের আশায় হাবিবুর রহমান বাচ্চু, মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, ওমর ফারুকসহ আরো কয়েকজন তাদের হয়ে কাজ শুরু করেন।

এদের মধ্যে উপজেলার মনিয়ন্ধের ওমর ফারুকই অর্থ আদায়কারী ও পরিচালক বলে অভিযোগ করেন কয়েক প্রতারিক হওয়া একাধিক ব্যক্তি। মোটা অংকের কমিশনের আশায় এই দালালরা এলাকার প্রায় শতাধিক মানুষকে লাভের আশা দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির হাতে তুলে দেয়।

আজমপুর গ্রামের আতাউর রহমান নামের এক ব্যক্তি জানান, এই প্রতারণা চক্রটির প্রধান টার্গেট সদ্য দেশে আশা প্রবাসী, পেনশনে চলে আসা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য।অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও আজমপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ শাহাদাৎ হোসেন জানান, বাচ্চু নামের এক দালাল প্রায় তিন চার বছর ধরে আমার পিছে ঘুরছিল। প্রত্যেক শুক্র ও শনিবার আমার বাড়িতে এসে বসে থাকতো। আমাকে বুঝাতো ব্রাইট ফিউচারে টাকা জমা দিলে ঢাকায় বাড়ি গাড়ি হবে। বিষয়টি আমি আমার ছেলেকে বলি। ছেলে আমাকে জানায় তারা বড় ধরনের প্রতারক। কিছুদিন পর আমার ছেলে জাপান চলে যায়। ছেলে যাওয়ার পর পরই আমার উপর আবার তারা ভর করে। পরে তারা রশিদেও মাধ্যমে ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখ পাঁচ লাখ ও ৬ তারিখে আরো পাঁচ লাখ টাকা টাকা আমার কাজ থেকে নিয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, টাকা নেওয়ার আগে মনিয়ন্ধের ওমর ফারুক কম করে হলেও ৫০ বার আমার বাড়িতে এসে ছিল। সে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক দাবি করতো। তারা প্রথম কিস্তিতে আমাকে ৫৫ হাজার টাকা লাভ দেয়। তারপর থেকে তারা উধাও। ফোনও বন্ধ। শুধু আমি একা নয় আমার গ্রামের মারফত আলী থেকে ২২ লাখ, সাবেক চেয়ারম্যানের ভাতিজা রুবেলের কাছ থেকে ১১ টাকা, সাফায়েতের কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা ও এক কাজী থেকে ১০ লাখ নিয়েছে বলে শুনেছি। তারা শুধু খোঁজে বেড়াতো কার কাছে টাকা আছে।

এদিকে যারা প্রতারিত হয়েছেন তারা ঢাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেছেন তাদের অফিসে তালা ঝুলানো। তারা প্রায় ৭/ ৮ বছর ধরে এই এ এলাকায় মানুষের সাথে প্রতরণা করে করে আসছিল বলে আরো জানান এ সেনা সদস্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, আখাউড়া থানা থেকে বদলী হওয়া এক পুলিশ অফিসারও লাভের আশায় প্রতারক চক্রের কাছে ২০ লাখ টাকা গচ্ছিত রাখেন কয়েক মাস লাভও পেয়েছেন বলে শুনেছি। এখন আইনী জটিলতা ও দুর্নীতি মামলার ভয়ে টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করছেন না।

আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, প্রতিষ্ঠানটি এলাকায় অনেকদিন ধরেই কার্যত্রম চালিয়ে আসছে। শুনেছি তারা নাকি এখনও উধাও হয়নি। শুধু আজ-কাল আসবো বলে সময়ক্ষেপণ করছে।

আখাউড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App