×

সারাদেশ

অবৈধভাবে ধান ক্রয়, গোয়াইনঘাটের খাদ্য কর্মকর্তা প্রত্যাহার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৩, ০৩:৫১ পিএম

অবৈধভাবে ধান ক্রয়, গোয়াইনঘাটের খাদ্য কর্মকর্তা প্রত্যাহার

ছবি: নজরুল ইসলাম, গোয়াইনঘাট (সিলেট)

অবৈধ উপায়ে সুনামগঞ্জের থেকে ধান ক্রয় করার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গোয়াইঘাট উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক তথা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ওসি এলএসডি (সিলেট) পলিদাসকে গোয়াইনঘাট থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রণের কার্যালয় সিলেটের ১৯/০৫/২০২৩ এর স্মারক নং ১৩.০১.০০০০.২০৫.১৯.০০২.১৯.৬৪০ এর আলোকে তাকে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণের কার্যালয় তাহিরপুরে বদলি করা হয়েছে ।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১৬ মে) সকাল ১০টায় উপজেলার পূর্নানগর খাদ্য গুদামে ট্রাকভর্তি ধান গুদামে লোড হওয়ার খবর চারিদিকে চাউর হলে এলাকার কৃষকেরা পূর্নানগর খাদ্যগুদামে জড়ো হন। ওই সময় খাদ্য গুদামের সংশ্লিষ্ট কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

অবৈধভাবে খাদ্য গুদামে ধান মজুদের খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক আহমদ ধানগুলো জব্দ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুবাস চন্দ্র পাল ছানা ও গোয়াইনঘাট থানার এসআই জহির।

উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপস্থিত হয়ে ২৬০ বস্তা ধান জব্দ করা হয়। স্থানীয় কৃষকরা গোয়াইনঘাট খাদ্য গুদামে বোরো ধান বিক্রি করতে চাইলে ধান শুকানোর অজুহাতে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অনেকে তার কাছে অভিযোগ করেন।

চেয়ারম্যান ফারুক বলেন, আমি জানার সাথে সাথে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছি। নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে পরিদর্শনে ছিলেন। তাৎক্ষণিক বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে নিজে উপস্থিত হয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এ সময় জেলা খাদ্য কর্মকর্তা এসেও উপস্থিত হন।

অন্যদিকে, গোয়াইনঘাটের কৃষকরা তাদের ধান বিক্রি করতে পারছেন না বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের দূর্নীতির কারণে গোয়াইনঘাটের কৃষকদের ধান ক্রয় না করে নিজেরাই ব্যবসায় জড়িত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, এ বছর ৭-শত মেট্রিক টনেরও বেশি বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও খাদ্য গুদামের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নানা কৌশলে গোয়াইনঘাটের কৃষকদের ধান ক্রয় না করে ফিরিয়ে দেন। এতে করে বঞ্চিত হচ্ছে গোয়াইনঘাটের কৃষকরা। গুদামের দায়িত্বে থাকা ওসি-এলএসডি পলি দাস তার নিজ এলাকা সুনামগঞ্জ থেকে ধান ক্রয় করে গুদামে মজুদ করতে শুরু করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ রনি বলেন, ধানগুলো সুনামগঞ্জ থেকে এসেছে এমন সত্যতা আমি পেয়েছি। বিষটি ইউএনও  মহোদয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দেখছেন।

এ ব্যাপারে ওসি-এলএসডি পলি দাসের সাথে যোগাযোগ হলে তিনি জানান, আমি সিলেট জেলা অফিসে একটা মিটিংয়ে আছি।

ধানের বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন- ধানগুলো কৃষকরাই দিয়েছে সুনামগঞ্জের নয়।

অথচ ট্রাকের হেলপার সাবুল বলেন- ২৬০ বস্তা ধান ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় সুনামগঞ্জ থেকে গোয়াইনঘাটে নিয়ে এসেছি।

ধানগুলোকে আনিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার (ওস্তাদ) ড্রাইভার বলতে পারবেন। ওই সময় ট্রাকের চালককে পাওয়া যায়নি।

উপস্থিত গোয়াইনঘাটের কৃষকরা জানান, আমরা গুদামে ধান নিয়ে আসলে ওসি-এলএসডি পলিদাস আমাদের ধান রাখেন না, নানা কৌশলে আমাদের ফিরে দেন। পেটের দায়ে নিরুপায় হয়ে ন্যায্য মূল্যের কমে ধানগুলো স্থানীয়ভাবে বিক্রি করতে বাধ্য হই।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, গোয়াইনঘাট উপজেলার কৃষকদের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির সু-ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

তবে পলি দাসের বদলির খবরে উপজেলার কৃষককুলের মনে আশার সঞ্চার সৃষ্টি হয়েছে ৷তারা সংলিষ্ট দপ্তর ও গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমানেরর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App