×

মুক্তচিন্তা

স্বপ্নের লেখাপড়া : শিক্ষক নিয়োগ জটিলতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৩, ১২:৪৭ এএম

স্বপ্নের লেখাপড়া : শিক্ষক নিয়োগ জটিলতা

‘স্বপ্নের লেখাপড়া’ শব্দ চয়নের মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ নয়। স্বপ্নের লেখাপড়া মানে আসলেই স্বপ্ন আর আনন্দ দিয়ে ঘেরা। এ শিক্ষাক্রম মানে শুধু পড়াশোনা না। সহজ কথায় বলতে গেলে- গায়তে গায়তে গায়েন, বাজাতে বাজাতে বায়েন। শিক্ষার্থীরা শিখবে আপন মনে। নেই অসুস্থ নম্বরের প্রতিযোগিতা, নেই মুখস্থর ঝামেলা, নেই পরীক্ষা। জানার এবং শিক্ষার জন্য আছে বিস্তর দুনিয়া। শিক্ষা উপকরণ হিসেবে থাকছে হাতের কাছে সব কিছুই। সুতরাং শিক্ষার্থীরাই সাজাবে নিজের পৃথিবী, গড়বে স্মার্ট বাংলাদেশ। শিক্ষার্থীদের পথপ্রদর্শক শিক্ষক। মূলত তাদের বাড়তি কোনো কাজ নেই। আপাতত এতটুকুু চিন্তা করে থামুন। এই শিক্ষাক্রমকে বাস্তবায়ন করতে সরকার নানা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের দক্ষ ও যোগ্য করে তুলছে। গ্রামের এবং শহরের শিক্ষকদের একই প্ল্যাটফর্মে অনলাইন প্রশিক্ষণের আওতায় আনার উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়েছে শিক্ষক পিডিএস আইডি। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি জুম মিটিং ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সমন্বয়ক গ্রুপ খোলারও নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাপ্তাহিক দুদিন ছুটি হলেও হরহামেশাই শুক্র বা শনিবার থাকছে মিটিং। প্রত্যেক শিক্ষক সময়ের সঙ্গে পারদর্শী হয়ে উঠেছে স্মার্ট ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহারে। প্রতিনিয়ত দেখতে হচ্ছে মুক্তপাঠ, শিক্ষা বাতায়ন। রাখতে হচ্ছে গ্রুপ বা শিক্ষা নির্দেশনার আপডেট। নতুন শিক্ষাক্রমের ইউটার্ন শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করতে শিক্ষকদের একবিন্দু সময় নেই। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এনটিআরসিএর শর্ত মোতাবেক যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় নিবন্ধিত শিক্ষকরা। ২০১৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত এনটিআরসিএ শুধু যোগ্য শিক্ষক নির্বাচিত করত এবং বেশিরভাগ ম্যানেজিং কমিটি নামমাত্র বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সংশ্লিষ্টদের মেনেজ করে স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে নিয়োগ কাজ সম্পূর্ণ করত। এরপর এককভাবে প্রার্থী নির্বাচন করে শূন্যপদে নিয়োগ সুপারিশের উদ্দেশ্যে ১৩তমদের পরীক্ষা নেয় এনটিআরসিএ। ক্ষতিগ্রস্ত ও নিয়োগ বঞ্চিত ১-১২তমদের কিছু অংশ আদালতের দ্বারস্থ হন। এতে আটকে যায় ১৩তমদের নিয়োগ সুপারিশের কার্যক্রম। আদালতের রায়ে সম্মিলিত মেধাতালিকা করার নির্দেশ দেয়া হয় এবং মেধাতালিকা করা হলেও মানা হয় না মেধাক্রম। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক চয়েজের ওপর নম্বর বিবেচনায় প্রার্থী সিলেক্ট করার ফলে মেধাক্রম থাকে নামেমাত্র। উল্লেখ্য, হাইকোর্টের রায়ে ১-১২তমদের সনদের মেয়াদ আজীবন করা হয়। ১৩তমসহ পরবর্তীদের সনদের মেয়াদ তিন বছর। গেজেট-২০০৬ এ শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থী উত্তীর্ণ করার কথা থাকলেও কেন মানা হলো না, এ দায় নিশ্চয় নিবন্ধনধারীর না। কিন্তু গেজেট ২০১৫-এ একই নির্দেশনা মানা হয় এবং ১৩তমরা রিট করে ব্লক পোস্টে চাকরির সুপারিশ নিতে থাকে। আবার ১৪ থেকে ১৫, ১৬তমদের ক্ষেত্রে শূন্যপদের দেখা হয় না, তবু তারা প্রতিযোগিতা করে ঢের মার্ক তুলে সুপারিশ পেয়ে যায়। এক সময়ের যোগ্য, দক্ষ ও ফার্স্ট ক্লাস মার্ক নিয়েও নিয়োগ বঞ্চিত থেকে যায় ১-১২তমদের বিশাল অংশ। শিক্ষক নিবন্ধন সনদ চাকরির সনদ। একাডেমিক সনদ নয়। শিক্ষকতা ছাড়া এ সনদ কোনো কাজে আসবে না। কারো একাধিক সনদে বা একাধিক পদে চাকরি করার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং সনদ যার চাকরি তার- এমনটাই হওয়া উচিত। কিন্তু একই সনদ দিয়ে কেউ ৪০ নম্বর পেয়ে চাকরি করছে, কেউ ব্লক পোস্ট পেয়ে চাকরিতে যোগদান করছে, আবার অবৈধ সনদ দিয়েও চাকরি করছে। অথচ সব নিবন্ধনধারীর প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করায় ১-১২তমদের বিশাল অংশ নিয়োগ বঞ্চিত থেকে যায়। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন মানের প্রশ্নপত্রে ভিন্ন ভিন্ন পাসের হারে নিবন্ধিত হয়ে সময়ের ব্যবধানে অসুস্থ (অ+ পাওয়ার মতো মুখস্থ) প্রতিযোগিতায় নিয়োগবঞ্চিত হয়ে তলানিতে পড়ে আছে ১-১২তমরা। দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ৩৫+দের নিয়োগ আবেদনের সুযোগ রাখা হয়নি। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ৩৫+দের নিয়োগ আবেদনের সুযোগ রাখা হলো কিন্তু ১৫ হাজার পদে বলা হলো যোগ প্রার্থী পাওয়া যায়নি। অথচ আবেদন পড়েছিল এমন প্রতিষ্ঠানেও সুপারিশ করা হয়নি। লিখিত অভিযোগের পরও এনটিআরসিএসহ শিক্ষাবিষয়ক অভিভাবক পর্যায় থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবার ৩৫+দের নিয়োগ আবেদনের সুযোগ রাখা হলো না। শিক্ষাবিষয়ক অভিভাবক পর্যায় থেকে বলা হলো বিদ্যমান আইনের বাইরে যাওয়া সম্ভব না। অথচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরি (বিসিএস ব্যতীত) প্রবেশের বয়স ২৫.০৩.২০২০ এর মধ্যে সর্বোচ্চ বয়স অতিক্রম না করলে আবেদনের সুযোগ পাবে বলে প্রজ্ঞাপন জারি করে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উক্ত আইনের প্রয়োগে সাধারণত ১৩-১৬তম নিবন্ধিত সনদধারীরা বিশেষ সুযোগ পান। কিন্তু যারা বারবার নিয়োগ বঞ্চিত, যাদের আবেদন নেয়া হলেও নিয়োগ সুপারিশ করা হয় না, যাদের সনদের মেয়াদ আজীবন- তাদের মধ্যে ৩৮+ আবারও নিয়োগ বঞ্চিত হলো। কোনো আইন বা প্রজ্ঞাপন দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে পুনর্বাসন করা সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত থাকছে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা এবং এইচএসসি লেভেলে থাকছে গ্রুপভিত্তিক পড়াশোনার সুযোগ। সুতরাং এইচএসসি লেভেলে প্রতিটি কলেজে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখা থাকবে বাধ্যতামূলক। ফলে নতুন করে কলেজে নিয়োগ হবে অনেক নিবন্ধনধারীর। যাদের স্কুল ও কলেজ উভয় নিবন্ধন আছে, তাদের অনেকেই সুযোগ নেবে কলেজ নিবন্ধনের বিপরীতে চাকরির। ফলে এখন যে কৃত্রিম শিক্ষক সংকট আছে তা আরো তীব্র হবে। অথচ এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তিতে যাদের সুপারিশ করছে তাদের বেশির ভাগ চাকরিপ্রত্যাশী নয়, যোগদান করছে না, ফলে শূন্যপদ শূন্যই থাকছে। জটিলতা এড়াতে সুপারিশপ্রাপ্তদের মেধাতালিকা থেকে সরিয়ে আলাদা করুন এবং বৈধ সনদধারীদের নিজ নিজ নীতিমালায় নিয়োগ সুপারিশ করুন। নতুন শিক্ষাক্রমের ইউটার্ন শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নে ও সরকারের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রকৃত চাকরিপ্রত্যাশী (৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারী এবং ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে না দেয়া ১-১২তম নিবন্ধিত) শিক্ষকদের আবেদন গ্রহণ করে শিক্ষক পিডিএস আইডি, শিক্ষক নিবন্ধন সনদ, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যাচভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ কর্তৃপক্ষের সুনজরের অপেক্ষা এবং ইউটার্ন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের একমাত্র সহজ সমাধান।

আমির আসহাব : ৩৭, কে.পি ঘোষ লেন, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App