×

জাতীয়

রাজনীতিবিদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পঙ্কজ ভট্টাচার্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৩, ০৯:২৫ পিএম

রাজনীতিবিদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পঙ্কজ ভট্টাচার্য

ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক পঙ্কজ ভট্টাচার্য একজন প্রকৃত রাজনীতিকের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, একজন রাজনীতিবিদের ব্রত কেমন হওয়া উচিত তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তাকে অনুসরণ করার জন্য নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদের প্রতি আহ্বানও জানান তথ্যমন্ত্রী।

শুক্রবার (১৯ মে) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে পঙ্কজ ভট্টাচার্য স্মরণে নাগরিক স্মরণসভায় এসব বলেন তিনি।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে খুব কম রাজনীতিবিদ আছেন যারা সবমহলের শ্রদ্ধা অর্জন করতে পেরেছেন বা যাকে সব মহল শ্রদ্ধা করে। তেমনই একজন রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি সব মহলের শ্রদ্ধা অর্জন করতে সফল হয়েছেন।

মন্ত্রী বলেন, রাজনীতি একটি ব্রত। রাজনীতি প্রতিষ্ঠালাভের সোপান নয়, বিত্ত লাভের সোপান নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য সেটি বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ ভুলে গেছেন। কিন্তু পঙ্কজ ভট্টাচার্য রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। তিনি যেটি বিশ্বাস করতেন সেটির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, লড়াই করে গেছেন। বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলনে পঙ্কজ ভট্টাচার্য প্রধান ছিলেন। তিনি আপাদমস্তক একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ, সত্যিকারের রাজনীতিবিদ।

তিনি আরো বলেন, আমাদের এই দেশে জীবনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে চলতে হয়। কখন গ্রেনেড হামলা হয়, কখন গুলি হয় জীবনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে চলতে হয়। পঙ্কজ ভট্টাচার্য সেটাই করেছেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমি যেহেতু ছাত্রজীবন থেকে রাজনৈতিক দল করি, পঙ্কজ ভট্টাচার্য আমার ছাত্র জীবন থেকে আমার রাজনীতির মাঠে যারা অনুপ্রেরণা তাদের মধ্যে একজন ছিলেন। ঢাকা শহরের নানান সামাজিক অনুষ্ঠানেই তার সঙ্গে আমার দেখা ও কথোপকথন হতো। কিন্তু একজন মানুষ যার বেশভুষা থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে রাজনীতির মাঠে অনুসরণ করা যায় তিনি হচ্ছেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। এমন মানুষ রাজনীতির মাঠে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য রাজনীতি এখন ব্রতের জায়গায় নেই। সেটির জন্য আমরা সম্মিলিতভাবে দায়ী। আমার নিজের দায়ও আমি এড়াচ্ছি না।

মন্ত্রী বলেন, পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে নিয়ে বেশি বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। পঙ্কজ ভট্টাচার্য যেভাবে রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে নিয়েছেন, নতুন প্রজন্মের যারা রাজনীতি করে তাদের তাকে অনুসরণ করা প্রয়োজন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, তার দাহ হয়েছে পোস্তগোলা মাঠে। একটি দাবি এসেছে সেখানে একটি সমাধি সৌধ স্থাপন করার জন্য। আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে কথা বলব। আপনাদের পক্ষ থেকে কেউ যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এক্ষেত্রে আমার পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা থাকবে। আমি মনে করি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের জীবনের ওপর যদি কোনো গ্রন্থ রচিত হয়, একটি স্মারকগ্রন্থ যদি প্রকাশিত হয় তাহলে খুব ভালো হয়। তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্মের মানুষ আমাদের ছেলেমেয়েরা তাকে জানতে ও অনুসরণ করতে পারবে।

বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রবীণ রাজনীতিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমতাভিত্তিক দেশ গড়াই উদ্দেশ্য ছিল। আমরা আন্দোলনের সহযাত্রী ছিলাম। তার সঙ্গে ছাত্র আন্দোলন যেমন করেছি আবার নিজেদের মধ্যে বিরোধও সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, সেটি হচ্ছে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমতাভিত্তিক দেশ গড়া।

নাগরিক স্মরণসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্ট্রি ডা. সারওয়ার আলী, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ও তার শুভাকাঙ্খী এবং পরিবারর সদস্যরা।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের রাউজানের কৃতিসন্তান পঙ্কজ ভট্টাচার্য গত ২৪ এপ্রিল রাত ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান ভক্ত, শুভানুধ্যায়ী, সহযোদ্ধা, বন্ধু, স্বজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শহীদ মিনারে তাকে জানানো হয় রাষ্ট্রীয় সম্মানও। পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পোস্তগোলার মহাশ্মশানে। সেখানে তার শেষকৃত্য হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী, একজন নেতৃস্থানীয় কর্মী ও সংগঠক ছিলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও পরে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি ১৯৬৬ সালে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র’ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারারুদ্ধ হন। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টির গেরিলা বাহিনীর সংগঠক ছিলেন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App