×

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন ও এশিয়ার উত্তেজনা প্রাধান্য পাবে জি-৭ সম্মেলনে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৩, ১০:৪৫ এএম

ইউক্রেন ও এশিয়ার উত্তেজনা প্রাধান্য পাবে জি-৭ সম্মেলনে

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও এশিয়ায় বাড়তে থাকা উত্তেজনার মতো সমস্যাগুলো মোকাবিলার বিষয়ে আলোচনা করতে আজ জাপানের হিরোশিমায় বৈঠকে বসছেন বিশ্বের ৭টি ধনী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নেতারা। চীনের অর্থনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্য নিয়ে জি-৭ (গ্রুপ অব সেভেন) নেতারা গতকাল বৃহস্পতিবার জাপানে পৌঁছেছেন।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা তার নিজ শহর হিরোশিমায় জি-৭ নেতাদের আতিথেয়তা করবেন। পারমাণবিক ধ্বংসস্তূপের শহরটি এখন শান্তিস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৩ দিনের সম্মেলনে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ অন্য নেতারা রাশিয়া ও চীনের বিরুদ্ধে ঐক্যফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা করবেন।

মাত্র কয়েকদিন আগেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক ঝটিকা সফরে জি-৭ দেশগুলোর বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে দেখা করেছেন। সম্মেলনে তিনিও যোগ দিচ্ছেন, যার ফলে এ সম্মেলনে ইউরোপের যুদ্ধের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। জেলেনস্কির এসব সফরের উদ্দেশ্য ছিল তার দেশের অস্ত্রসম্ভারকে আরো সমৃদ্ধ করা এবং মস্কো বাহিনীর দখলে থাকা ভূখণ্ড মুক্ত করার বহুল প্রতীক্ষিত প্রতিআক্রমণ শুরুর আগে রাজনৈতিক সমর্থন জোগাড় করা।

বাখমুত এবং অন্যান্য ফ্রন্টলাইন শহরে দীর্ঘ শীতকালীন যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক পরিণতির পটভূমিতে শুরু জি-৭ সম্মেলনে আলোচ্যসূচির শীর্ষে রয়েছে ইউক্রেনে রাশিয়ার ১৫ মাসের সামরিক অভিযান। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, নেতারা রাশিয়াকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আরো নিবৃত্ত করার দিকে মনোনিবেশ করবেন। আলোচনা রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থা আরো কঠোর করবে।

সুলিভান ইঙ্গিত দেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধ প্রচেষ্টার অর্থায়নে সহায়তা করতে পারে এমন ফাঁকগুলো বন্ধ করার দিকে নেতারা নজর দিতে পারেন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে এবং জি-৭ সম্মিলিতভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পদক্ষেপগুলো নিয়েও আলোচনা করবে। প্রয়োগকারী সমস্যাকে কেন্দ্র করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ জি-৭ বিবৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকবে।

এদিকে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় জি-৭ নেতারা এশিয়ায় নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন, এবং তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নেতারা অন্য অনেক বিষয়ের পাশাপাশি বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রাধান্য নিয়ে ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন এবং আশঙ্কা করছেন, চীন বল প্রয়োগ করে তাইওয়ানের দখল নেয়ার চেষ্টা করবে। যার ফলে আরো বিস্তৃত আকারে সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে। চীন এই স্বশাসিত দ্বীপকে নিজ ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দাবি করে এবং এর কাছাকাছি এলাকাগুলোয় নিয়মিত জাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠায়।

শান্তিস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তুতি কিশিদার : হিরোশিমার সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা পারমাণবিক বিস্তারের ঝুঁকির প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করার বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, হিরোশিমা পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার হওয়া শহর।

হিরোশিমায় জি-৭ সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কিশিদার পরিবার এ শহর থেকে এসেছে। তিনি আশা করছেন, এখানে সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে ‘বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার’ প্রতি জাপানের অঙ্গীকারের প্রকাশ ঘটবে এবং ‘পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন পৃথিবীর ধারণা বাস্তবায়নের পথে’ গতিবেগের সঞ্চার হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমায় একটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে, যার ফলে শহরটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এর ৩ দিন পর দেশটি নাগাসাকিতে দ্বিতীয় বোমা নিক্ষেপ করে এবং আরো ৭০ হাজার মানুষ মারা যান। ১৫ আগস্ট জাপান আত্মসমর্পণ করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও এশিয়ায় জাপানের পক্ষ থেকে কয়েক দশক ধরে চলমান আগ্রাসনের অবসান ঘটে।

হিরোশিমার বিস্ফোরণের পরেও নদীর ধারের কিছু দালানের অবশিষ্টাংশ আজও টিকে আছে। এসব দালানকে ঘিরে গড়ে উঠেছে পিস মেমোরিয়াল পার্ক। জি-৭ নেতারা এই পার্ক পরিদর্শনে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, জি-৭ হচ্ছে জাপান, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি সংঘ। এই ৭টি দেশ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল স্বীকৃত বিশ্বের ৭টি মূল উন্নত অর্থনীতির দেশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App