×

জাতীয়

ঢাকায় নতুন করে দরিদ্র ৫১ শতাংশ মানুষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৩, ১১:৪৭ এএম

ঢাকায় নতুন করে দরিদ্র ৫১ শতাংশ মানুষ

ছবি: সংগৃহীত

চাকরি ও ব্যবসা হারিয়ে রাজধানী ঢাকার দরিদ্রদের মধ্যে ৫১ শতাংশ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। করোনার ধাক্কার সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ৩০ লাখ মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) দুইদিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনের (বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালামনাক-২০২৩) প্রথম দিনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বুধবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার। প্রথম দিনে প্রায় ১০টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।

ড. বিনায়ক সেন বলেন, ঢাকার মোট দরিদ্রের প্রায় ৫০ শতাংশ নতুন দরিদ্র। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে নেমে গেছেন। এই শ্রেণির ওপর আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। করোনা-পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্য কমাতে আত্মকর্মসংস্থান বড় ভূমিকা রেখেছে। যাদের আর্থিক সঞ্চয় ছিল, তারা সেটি ভেঙে নিজের কর্মসংস্থানের জন্য কাজে লাগিয়েছেন। তাছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে সহায়তা করেছে।

ঢাকার ২ হাজার ৪৬টি খানার ওপর জরিপ করে বিআইডিএস এই গবেষণা করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, করোনার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে দরিদ্র খানা বা পরিবারের আয়ের ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ এসেছে আত্মকর্মসংস্থান থেকে। গত বছর সেটি বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে।

বিনায়ক সেন আরো বলেন, করোনাকালে ঢাকার অনেক শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। নিম্ন-আয়ের পরিবারের মধ্যে সেই প্রবণতা বেশি। শহরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা অল্প বিধায় এই জায়গায় বেশি নজর দিতে হবে। করোনার সময়ে দরিদ্র বাড়লেও সেটা ছিল সাময়িক। পরবর্তী সময়ে এটা কমতে শুরু করে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দারিদ্র্য বেড়েছিল। জুনের পর সেটি কমতে শুরু করে। পরে স্বাভাবিকের জায়গায় চলে যায়। তবে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য এখনো আছে। এটা কমাতে হলে বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই।

‘আরবান পোভার্টি ডায়নামিস ডিউরিং কোভিড-১৯: অ্যানাটমিক অব রেজিলিয়েন্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ড. বিনায়ক। এতে বলা হয়, ঢাকা মেগাসিটিতে দারিদ্র্য কমেছে দ্রুত। ২০১৯ ও ২০২২-এর মধ্যে সামগ্রিক দরিদ্রের সংখ্যা কমেছে। কোভিড-১৯-এর চাপ থাকলেও দারিদ্র্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়। তবে ঢাকার মতো উচ্চবর্ধনশীল মেগাসিটিতে দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্য এখনো যথেষ্ট। শহুরে জনসংখ্যার প্রায় এক-দশমাংশ এই শ্রেণির অন্তর্গত। করোনার কারণে উদ্ভূত সংকটে কিছু মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছিল। এটি মোট দরিদ্রের প্রায় ৫১ ভাগ।

গবেষণায় দেখা যায়, কোভিড-১৯ এর কঠিন মাসগুলোয় বিবাহবিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি, কন্যাদের জন্য বয়ঃসন্ধিকালের বিয়ের হার বা সমাজে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে করোনার উল্লেখযোগ্য বিরূপ প্রভাব দেখা যায়নি। তবে চরম দরিদ্র পরিবারের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছে, করোনা মহামারি চলাকালীন তাদের ছেলে বা মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়েছে। এটি দরিদ্রদের জন্য ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য ১০ দশমিক ৩ শতাংশ এবং উচ্চ মধ্যবিত্তের জন্য ৮ শতাংশ।

গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, করোনার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে দরিদ্র মানুষের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। করোনার পর অর্থাৎ গত বছর সেটি বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে করোনার আগে আত্মকর্মসংস্থানের হার ছিল ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। করোনার পর সেটি বেড়ে ৩৩ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়ায়।

গবেষণায় আরো বলা হয়, লকডাউনের সময়টা বাদ দিলে করোনার সময়ে ঢাকা শহরে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২২-এ দারিদ্র্য কমেছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট। একই সময়ে অতি দারিদ্র্য কমেছে ৩ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট। এই দারিদ্র্য কমার অন্যতম কারণ হচ্ছে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, সরকারি-বেসরকারি সহায়তা। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক নানাবিধ কর্মকাণ্ডের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ কিছু না কিছু করেছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আগে মানুষ এত গরিব ছিল যে তখন বৈষম্য নিয়ে চিন্তা ছিল না। একবেলা খেয়ে অন্য বেলায় খেয়েছে কি না, সেটি বড় কথা ছিল। এখন সবাই তিন বেলা খেতে পারে। এ কারণে বৈষম্য নিয়ে কথা আসছে। সরকারের নানা উদ্যোগ দারিদ্র্য নিরসনে কাজ করেছে। এখন বৈষম্য আলোচনার অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমরা সম্পদ সৃষ্টি করতে চাই। ভাত, মাছ, মাংস, ডিমের মতো সম্পদ গড়তে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। সম্পদ যখন সৃষ্টি হয় তখন বৈষম্য দেখা দেয়। কারণ কেউ মেধার গুণে বা যোগ্যতার ভিত্তিতে বেশি সম্পদ সৃষ্টি করে। কেউ পিছিয়ে থাকে। সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার সমতা সৃষ্টিতে কাজ করছে। যাতে সবাই সমান সুযোগ পায়। সামাজিক নিরাপত্তার মতো কর্মসূচি বাড়িয়ে বৈষম্যের ব্যথা কিছুটা কমার বা সহনীয় পর্যায়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

তিনি বলেন, এখন এদেশে গ্রাম-শহর এক হয়ে গেছে। আলাদা করে গ্রাম ও শহরের সবকিছু হিসাব করার দরকার নেই। সব ক্ষেত্রেই একটি হিসাবই যথেষ্ট।

ড. শামসুল আলম বলেন, করোনার সময় দারিদ্র্য বেড়েছিল, এটা ঠিক। সরকারের সঠিক পরিকল্পনা এবং উদ্যোগে কমানো সম্ভব হয়েছে। করোনার সময়ে বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা বন্ধ না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতির প্রভাব পড়েনি।

সম্মেলনে অপর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে খাদ্য, সার এবং অপরিশোধিত তেলের দাম। যার প্রভাব পড়েছে দেশে। এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জাতীয় কল্যাণ ২ শতাংশ কম হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের কৃষি খাত। ভর্তুকিতে সার বিক্রি উৎপাদন বাড়িয়েছে। ২০২২ সালের প্রথমদিকে পেট্রোলিয়ামের দাম বাড়তে থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক মাস পর ২০২২ সালের জুলাইয়ে এ হার আরও বৃদ্ধি পায়। ভর্তুকি সরকারের ওপর অতিরিক্ত বোঝা সৃষ্টি করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App