×

মুক্তচিন্তা

তাপদাহে অতিষ্ঠ প্রাণিকুল প্রকৃতি বাঁচাতে জরুরি বনায়ন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৩, ১২:৪৯ এএম

তাপদাহে অতিষ্ঠ প্রাণিকুল প্রকৃতি বাঁচাতে জরুরি বনায়ন

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সাধারণত গ্রীষ্মকালীন সময়ে আমরা বেশ প্রখর রৌদ্র অনুভব করতাম এবং গ্রামাঞ্চলে অনেককেই এ সময়ে বড় বড় গাছের ছায়ায় বসে থাকতে দেখা যেত। সে সময় গাছের নিচে বসলেই প্রচুর বাতাস পাওয়া যেত এবং শরীর-মন দুটোই ঠাণ্ডা হয়ে যেত। প্রচণ্ড রোদে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেলেও এখনকার মতো তাপমাত্রা কখনো ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে দেখা যায়নি। অসংখ্য সারি সারি গাছের ভিড়ে বাতাসের মাতম দেখে আমাদের সারাদিন কেটে যেত। বর্তমানে বাংলাদেশের তাপমাত্রা যেভাবে বাড়তে দেখা যাচ্ছে, তাতে করে ভবিষ্যতে এর মাত্রা আরো বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো দূর অতীতে ঠিক থাকা বাংলাদেশের প্রকৃতি এখন কেন এত রুষ্ট হলো? প্রকৃতপক্ষে একটি দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য তাদের সম্পূর্ণ বনাঞ্চলের ২০ শতাংশ সংরক্ষিত বনাঞ্চল থাকা জরুরি হলেও বাংলাদেশে রয়েছে ১০.৮ শতাংশ। তাও কাগজে-কলমে। বাস্তবে এটুকু আছে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ মানুষ যেভাবে নিত্যদিন বন উজাড় করে জনবসতি গড়ে তুলছে তাতে করে আমাদের প্রকৃত বনাঞ্চল কমছে বৈ বাড়ছে না। শুধু রোহিঙ্গাদের আবাসন তৈরি করতেই কক্সবাজার, টেকনাফ, বান্দরবান এলাকায় প্রায় ২০০ একর বনাঞ্চল কেটে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর বাইরে পার্বত্য অঞ্চলে বনাঞ্চল উজাড় করে নিত্যনতুন জনবসতি গড়ে উঠছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অন্যতম সংরক্ষিত বনাঞ্চল সুন্দরবনের আশপাশে একটু দূরে হলেও প্রকৃতি ধ্বংস করে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠেছে, যা আমাদের প্রকৃতির জন্য মারাত্মক হুমকি। তাছাড়া সুন্দরবনে প্রায় প্রতিদিনই চোরাইপথে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে আমাদের প্রকৃতির সর্বনাশের মাধ্যমে প্রকৃতিকে রুষ্ট করছি। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে এখনো বেশির ভাগ মানুষ জ¦ালানি হিসেবে কাঠ, বাঁশকে ব্যবহার করে চলেছে। ফলে এসব প্রাকৃতিক জিনিস যেহেতু জঙ্গলের বনাঞ্চলগুলোতে পাওয়া যায় সেহেতু মানুষ এগুলো জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য নিত্যদিন বনজঙ্গল উজাড় করে চলেছে। প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতিও যে আমাদের বেঁচে থাকার অন্যতম অনুষঙ্গ এ বিষয়টি সম্পর্কেও আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ জানি না। আর এই অসচেতনতার কারণেই আমরা অনেকে না বুঝে প্রতিনিয়ত পরিবেশের ক্ষতি করে চলেছি। আর তার প্রতিদানে প্রকৃতি আমাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে ঝড়, বন্যা, খরা, অনাবৃষ্টি ইত্যাদি। সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে যে তাপদাহ চলছে তার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের প্রকৃতি থেকে সবুজ বন, বৃক্ষরাজি কমে যাওয়া। প্রকৃতির এমন তাপদাহ থেকে বাঁচতে দেশে সংরক্ষিত বনায়নের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং যে যেই জায়গায় থাকি না কেন, তার চারপাশে গাছগাছালি রোপণ করতে হবে। বনায়ন বাড়লে দেশে বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক অক্সিজেন বাড়বে আর তাতে করে পরিবেশ ঠাণ্ডা থাকবে আর যথাসময়ে দেশে বৃষ্টিপাত হবে অর্থাৎ আমাদের দেশের ঋতুর যে চক্র তা সঠিকভাবে কাজ করবে। আমাদের দেশে বনায়নের প্রধান সমস্যা হচ্ছে জায়গার অভাব। দেশের ব্যাপক জনসংখ্যার জন্য যে হিসেবে ঘরবাড়ি এবং কলকারখানা গড়ে উঠেছে তাতে করে বনায়নের জায়গা কমে গেছে। তবে এখনো পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় যে পরিমাণ বনায়নযোগ্য জমি, পাহাড় রয়েছে, তাতেও যদি সঠিকভাবে বনায়ন করে তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তাহলেও আমাদের দেশে আগামী ২০০ বছর স্বাভাবিক প্রকৃতি বিরাজ করবে। তাই আসুন এমন তাপদাহের মতো প্রাকৃতিক রুষ্টতা থেকে বাঁচতে সবাই মিলে বনায়ন করি। একেবারে বড় বড় বনায়ন করতে না পারলেও নিজের বাড়ির আশপাশে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশকে সুরক্ষা করি।

রতন কুমার তুরী : লেখক এবং শিক্ষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App