×

সারাদেশ

হাইপারটেনশন নিয়ে মাথা ব্যথা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৩, ১২:৪০ পিএম

হাইপারটেনশন নিয়ে মাথা ব্যথা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১৭ মে বিশ্ব হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ দিবস। তবে এ রোগ নিয়ে কোনো ‘মাথা ব্যাথা’ নেই রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় ও সিভিল সার্জন অফিসের। সুুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যও নেই এ দুই অফিসে। অথচ রাজশাহীতে রোগটি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বেশ উদ্বিগ্ন। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় এক যুগেরও অধিক সময় ধরে এ সংক্রান্ত গবেষণা চালাচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। তার গবেষণায় উঠে এসেছে উদ্বেগজনক নানা তথ্য।

মেডিকেল সাইন্সের ভাষায়, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত প্রবাহের জন্য হার্টের সংকোচনকে বলে সিস্টোল। আর প্রসারণকে বলা হয় ডায়াস্টল। যেকোনো মানুষের সিস্টোল-ডায়াস্টল বা স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। এ মাত্রার চেয়ে কারো রক্তচাপ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে সেটিকে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ বলে। উপসর্গ ছাড়াই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকট। রোগটি নীরবে শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্থ করে বলে এটিকে নীরব ঘাতকও বলা হয়। ধূমপান, অতিরিক্ত টেনশন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও বংশানুক্রমিক কারণে রোগটি হতে পারে। এতে জটিলতা দেখা দিতে পারে হার্ট, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখে।

তথ্যমতে, হাইপারটেনশন সমস্যায় বিশ্বে বছরে প্রায় এক কোটির অধিক মানুষের মৃত্যু হয়। আর দেশে প্রতি চার জনে একজন উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। জনস্বার্থে আজ (বুধবার) থেকে রোগটি নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুরু হচ্ছে বিশেষ ক্যাম্পেইন। হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহম্মদ ভোরের কাগজকে জানিয়েছেন, ব্লাডপ্রেশার পরীক্ষার রিপোর্ট ঢাকায় পাঠানোসহ রোগীদের প্রয়োজনীয় ফলোআপ করা হবে।

অথচ এ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে নির্ভার রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় ও সিভিল সার্জন অফিস। গত সোমবার এ দুই অফিসে গিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এদিন বেলা ১১টার দিকে অফিসে ছিলেন না বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার।

এ সময় উপপরিচালক ডা. আনোয়ারুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি ভোরের কাগজকে জানান, তাদের কাছে হাইপারটেনশন সংক্রান্ত কোনো ডাটা নেই। তারা অধীনস্থ কোনো অফিসকে ডিরেকশনও দেন না। কোনো কাজও করেন না সরাসরি। একপর্যায়ে সিভিল সার্জন অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

মুঠোফোনে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার ভোরের কাগজকে বলেন, আমি বগুড়ায় প্রোগ্রামে ছিলাম। এটা সিভিল সার্জনদের দায়িত্ব, ওদের কাছেই তথ্য থাকে।

এ বিষয়ে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করলে তিনিও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি। অপারগতা প্রকাশ করে ডা. আবু সাইদ ভোরের কাগজকে বলেন, ডায়রিয়া-নিউমোনিয়া টাইপের রোগের তথ্য আমাদের কাছে থাকে। অবশ্য এ সময় তিনি নয়ন নামে অফিসের একজন স্টাফকে সম্পূরক কিছু তথ্য দিতে নির্দেশ দেন। তবে ওই স্টাফ কক্ষ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্যর বিষয়টা বুঝছে না। আপনারা বোঝার ট্রাই করেন, এসব রোগের তথ্য হয় না।’

তবে আর্সেনিক সংক্রান্ত কার্ডিওমেটাবোলিক ডিজিজ নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে গবেষণা করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. খালেদ হোসেন। তার সঙ্গে গবেষণায় ছিলেন জাপানের সোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. হিমেনো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. অ্যারোন বারচোয়েস্কি। ওই রিসার্চ থেকে জানা গেছে, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ তথা হৃদরোগ বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। এ হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস। রাজশাহীর পবা উপজেলার কাজীপাড়া, নওগাঁর চৌকনী, চুয়াডাঙ্গার দুধপাতিলা, ঝঁজরি ও কেষ্টপুর, ভেড়ামারার খেমিরাদিয়া, যশোরের মাড়োয়া এলাকার বাসিন্দাদের ব্লাড, চুল, নখ ও ড্রিংকিং ওয়াটারের নমুনা সংগ্রহ করে গবেষক টিম।

২০১৪ সালে উচ্চ রক্তচাপসংক্রান্ত গবেষণার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৪৮৩ জনের। এতে কমমাত্রার আর্সেনিক এলাকায় রোগীর শতকরা হার ছিল ৩ দশমিক ৫। আর বেশিমাত্রার আর্সেনিক এলাকায় একই ধরনের রোগীর হার উঠে আসে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া ২০২১ সালে হৃদরোগের ঝুঁকিসংক্রান্ত ৫৬৯ জনের নমুনা নিয়ে গবেষণা হয়। এতে বেশিমাত্রার আর্সেনিক এলাকার হৃদরোগে আক্রান্তের হার ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং কমমাত্রার আর্সেনিক এলাকার হার পাওয়া যায় ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এ গবেষক টিম ফলাফল বিশ্লেষণ শেষে ১০টি সুপারিশ করেছে।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. মো. খালেদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, জনসচেতনতা সৃষ্টিতে আমার এসব গবেষণা। আসলে মানুষ অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে যায়; চিকিৎসকরা ওষুধ দিয়ে দেন, সেটি তারা খায়। কিন্তু ডিজিজ কেন বাড়ছে, সেটির গবেষণা হওয়া দরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App