×

জাতীয়

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু জুনে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৩, ০৯:৪৩ পিএম

এ মাসেই মিয়ানমান ও চীন যাচ্ছে মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় প্রতিনিধি দল

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে আলোচনার ফলশ্রুতিতে আগামী জুন মাস থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাস শুরু হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

বুধবার (১৭ মে) সংসদ ভবনে কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা আশা করছি আগামী জুন মাস থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। সংসদীয় কমিটিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে কার্যক্রম নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। সেখানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কমিটিকে জানান। আমরা মন্ত্রণালয়কে বলেছি বিষয়টি জোর দিয়ে আলোচনা বা মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। জবাবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানান হয়, বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব দরবারে বহুবার মিয়ানমারকে চাপে রাখার জন্য বাংলাদেশ নানা ফোরামে বিষয়টি উত্থাপণ করেছে ও করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি তুলেছেন বহুবার। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী তার সম্প্রতি জাপান, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য সফরে পরিষ্কার জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন বহন করার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। সুরতাং তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাহন জরুরি।

ফারুক খান বলেন, এই ধারাবাহিক চাপ সৃষ্টির ফলশ্রুতিতে মিয়ানমার থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সফর ও জরিপ করে। এ প্রতিনিধিদল কিছু কিছু করে রোহিঙ্গা ফেরত নেয়ার কথাও বলে।

তিনি আরো বলেন, আগামী সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের টিম মিয়ানমার যাচ্ছেন। তারা সেখানে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে সে দেশের সরকারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন। কবে, কীভাবে প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে এ সফরে হয়তো পরিষ্কার হয়ে যাবে। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতির হিসেবে আমার নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি সংসদীয় টিম রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবার বিষয়ে আলোচনার জন্য ২২ মে চীন যাচ্ছি। আমরা চীনা সরকারকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ও প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করবো। চীন এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা চীন সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করতে চাই। কীভাবে মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত, বাস্তচ্যুত হয়ে ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশ অবৈধভাবে প্রবেশ করে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। কিন্তু দিনে দিনে তাদের সংখ্যা বাড়ছে, রোহিঙ্গারা মাদক চোরাচালানসহ নানাবিধ অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে, ক্যাম্পগুলোতে খুন-খারাবি হচ্ছে। আমাদের পক্ষে আর এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের পোষা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের নিজ ভূমি মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া জরুরি। আমরা চীনকে সে বিষয়টি বোঝাবো। আশা করছি চীন এবিষয়ে আমাদের সহায়তা করবে এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তা করবে। আমরা আশা করছি, আগামী জুন মাস থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, আমি কমিটির বৈঠকের বিষয়ে স্পোকপার্সন (মুখপাত্র) নেই। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে নানাভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে তা সবাই জানেন। গতকালের কমিটির বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুল মজিদ খান, মো. হাবিবে মিল্লাত, নাহিম রাজ্জাক ও কাজী নাবিল আহমেদ।

বৈঠকে যেসব দেশ বাংলাদেশের ওপর স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) জারি করেছে তাদের দেশ থেকে কোন কিছু না কেনা- প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান হয়।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আট লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছিলো। এরপর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি ফিরতি তালিকা পাঠানো হয়। গত বছর জানুয়ারিতে ওই তালিকা থেকে পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৪০ জনকে বাছাই করা হয় পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে। এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার সম্মতি দিলেও বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে তাদের আপত্তি ছিল। সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করতেই মিয়ানমারের ১৯ জন সদস্যের প্রতিনিধি দল গত মার্চে বাংলাদেশে আসে, তারা টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বার্তাও বলে। এর পরে চলতি মে মাসের ৫ তারিখ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ২০ জনসহ ২৭ জনের একটি দল মিয়ানমার যায়। যেখানে তিন নারীসহ ২০ রোহিঙ্গা, একজন অনুবাদক এবং ছয়জন বিভিন্ন দপ্তরের বাংলাদেশি কর্মকর্তা ছিলেন। পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তার জন্য দুটি বিজিবির স্পিডবোটসহ ১৬ বিজিবি সদস্য ছিলেন। সেখানে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য মিয়ানমার সরকার যে অবকাঠামো তৈরি করছে, সেগুলো পরিদর্শন করেন তারা। নাগপুরা থেকে একটি গাড়িতে করে তাদের নেয়া হয় মংডু এলাকার বলিবাজার ক্যাম্পে। বলিবাজারে নির্মিত ক্যাম্পে প্রায় সাড়ে এগারোশো মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করেছে মিয়ানমার সরকার। সেখানে ঘরগুলো দোতলা, টিন দিয়ে তৈরি। একেকটা ঘরের দৈর্ঘ্য আট থেকে বারো হাত বলে জানান ঘুরে আসা টিমের সদস্যরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App