×

সারাদেশ

বিল শুকিয়ে মৎস্য আহরণের চেষ্টা জেলেদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৩, ০৯:১৮ পিএম

বিল শুকিয়ে মৎস্য আহরণের চেষ্টা জেলেদের

ছবি: ভোরের কাগজ

রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, কালিয়া, খলিশা, পুটি, টেংরা, বাইম, পাবদা, শিং- মাগুর, চিংড়িসহ আরও নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ হাওরের খালে বিলে, নদী-নালায় থাকতো এক সময় ঠাসা। কিন্তু কালের বিবর্তনে বিলীন হতে যাচ্ছে হাওরের দেশীয় মাছের ভাণ্ডার। এরমধ্যে মাছের অভাবে খাল-বিল শুকিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে মাছের পোনাকেও। এক সময় দেশীয় মাছের উৎকৃষ্টতম জায়গাই ছিল হাওর। হাওরের এসব মাছ স্বাদেও অনন্য। কিন্তু এসব কথা এখন অনেকটা গল্পের মতই এসে দাঁড়িয়ে। হাওর কিংবা খালে বিলে মাছ এখন নেই বললেই চলে। মাছের চরম সংকট দেখা দেয়ায় হাওরের বিল শুকিয়ে মৎস্য আহরণের চেষ্টা করছেন জেলেরা।

সুনামগঞ্জের শাল্লায় মঙ্গলবার (১৬ মে) ছায়ার হাওরের কছমা বিল শুকিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করেছিল জেলেরা। খবর পেয়ে বিকেলে হাওরে ছুটে যান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ জামান খান। জেলেরা তখন প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান। সেখান থেকে বিল শুকানোর জন্য ব্যবহৃত একটি ইঞ্জিনসহ দুটি পাইপ জব্দ করা হয়।

বুধবার (১৭মে) উপজেলা মৎস্য কর্মকার্তা মাসুদ জামান খান বলেন, মাছের সংকট দেখা দেয়ায় জেলেরা হাওরের বিল শুকিয়ে মাছ ধরতে চেয়েছিল। কিন্তু এটি মাছে প্রজননের সময়। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় এই তিন মাস মা মাছ হাওরে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে পোনামাছের জন্ম হয়। এমনিতেই হাওরে পানি নেই, মাছও নেই। বৃষ্টি না হওয়ায় সমস্যা আরও বাড়ছে। এসময় বিল শুকিয়ে মাছ ধরা যাবে না। জেলেরা পালিয়ে গেলেও বিল শুকানো জন্য তাদের একটি ইঞ্জিনসহ দু'টি পাইপ জব্দ করা হয়েছে। গত সোমবার (১৫ মে) ছায়ার হাওরে আরেকটি বিল শুকানোর অপরাধে ৩হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বলেন, হাওরে এখন মাছের সংকট রয়েছে। তাছাড়া এসময়টাতে পোনামাছের জন্ম হয়। ছায়ার হাওরে বিল শুকানোর অপরাধে একটি মেশিন জব্দ করা হয়েছে। অভিযানের সময় জেলেরা পালিয়ে যায়। তবে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় লোকজন জানান, হাওরে এখন পোনামাছও নেই। অন্যান্য বছরে ফসলি জমিতেও পোনামাছের অবাদ বিচরণ দেখা যেতো। এবছর বৃষ্টি না হওয়ায় পোনামাছ কম। যেগুলো আছে ক'দিন পরেই মাছগুলো বড় হবে। বর্ষায় এসব মাছ ছড়িয়ে পড়বে হাওরে হাওরে। তখন জেলেদের জালে প্রচুর মাছও ধরা পড়বে। সেসময় দামেও অনেকটা সস্তা থাকে মাছের বাজার। মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেই একটি পরিবারের মাছের চাহিদা মিটে। তবে ধীরেধীরে মাছের দাম বৃদ্ধি পায়। এক সময় সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যায় বাজার দর। তবে সবচেয়ে চৈত্র ও বৈশাখ মাসে মাছের খুব বেশি অভাব থাকে হাওরাঞ্চলে। দামও থাকে আকাশছোঁয়া। জ্যৈষ্ঠমাসে বৃষ্টি হলেই নতুন পানি আসে। মেঘালয় থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে হাওরে আসে মাছও। তাছাড়া এসময় মাছের ডিম থেকেও পোনামাছের জন্ম হয়। ২মাস মাছের অভাব থাকলেও জ্যৈষ্ঠমাসে নতুন পানি হাওরে ঢুকলে মাছের অভাব আর তেমন থাকে না। প্রতিটি কৃষক পরিবারে নিজেরাই বিভিন্ন জাল দিয়ে মাছে মেরে খেতে পারেন।

কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় এসব সমীকরণ যেনো মিলছে না। সঙ্গত কারণেই স্থানীয় মানুষজন বলছেন মাছের চরম সংকট রয়েছে খোদ মাছের ভাণ্ডার নামক হাওরপাড়েই। বুধবার (১৭মে) সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রামীণ বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায় মাছের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। পুকুরের চাষকৃত কিছু মাছ বাজারে পাওয়া যায়। তাও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। আবার দাম বেশি হওয়ায় কৃষকদের ক্রয়ক্ষমতারও বাইরে।

সঙ্গীতশিল্পী সুবোধ দাশ বলেন মাছের যে দাম, তা সাধারণ কৃষকরা কিনে খেতে পারবেন না। হাওরেও মাছ নেই। মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। উপজেলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাশ বলেন হাওরে নতুন পানি না আসায় মাছের অভাব দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিও হচ্ছে না। ফলে মাছ নেই। ফলে পোনামাছেরও জন্ম হচ্ছে না। এখন টানা বেশকিছু দিন বৃষ্টি প্রয়োজন। মাছের চরম সংকট রয়েছে বাজারে। যে মাছগুলো হাটে বাজারে পাওয়া যায় তাও পুকুরের। দামেও বেশ চড়া। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন দরিদ্র জেলে ও কৃষকরা। জেলে সম্প্রদায়ের জ্যোতিষ মাহাষ্য দাস বলেন, সারাদিন নদীতে জাল বেয়ে মাত্র আধা কেজি টেংরা মাছ পাইছি। বাজারে বিক্রি করছি ২৫০ টাকা দিয়া। তাও প্রতিদিন জালে মাছ ধরা পড়ে না বলেও জানান এই দরিদ্র মৎস্যজীবী। মাছ বিক্রেতা পরিমল বিশ্বাস বলেন মাছ পাওয়াই যায় না। পুকুরের চাষ করা পোনামাছই চড়া দামে বিক্রি করতাছি। অন্যদিকে বাজারে পুকুরে চাষ করা মাছের দর রয়েছে পাবদা ৪৫০ টাকা, ছোটছোট পাতি বোয়াল ৪শ' টাকা, শিং ৪থেকে ৫শ' টাকা, কারপু মাছ ৪শ' টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। মাছ বিক্রেতারা আরও জানান, হাওরে মাছ না থাকায় হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলাসহ উজান এলাকা থেকে পুকুরে চাষ করা মাছ এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন তারা। অন্য মাছ না পেয়ে চাষের মাছই চড়া দামে কিনে নিচ্ছেন সচ্ছল কৃষকরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App