×

জাতীয়

সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ০৮:১৬ পিএম

সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ বাংলাদেশ

দুর্গাপূজায় গেল বছর নিরাপত্তা জোরদার করলেও সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা রিপোর্টে উঠে এসেছে এমন তথ্য। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত সোমবার এই বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর সময়কালের আলোকে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখবন্ধে বলা হয়, ধর্মীয় স্বাধীনতা ইস্যুতে কিছু দেশ উন্নতি করেছে। তবে বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতার উন্নতিতে আরও অনেক কাজ বাকি।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে ধর্মীয় স্বাধীনতা বিল পাস হয় মার্কিন কংগ্রেসে। এরপর থেকে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। বিশ্বের ২ শতাধিক দেশের ধর্মীয় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তৈরি করা হয় এমন রিপোর্ট। বাংলাদেশে গেল বছর ধর্মীয় পরিস্থিতি বেশ ভালোর দিকে গেলেও তবে কিছু দেশে চলছে নিপীড়ন।

২০২২ সালের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০২১ সালে দুর্গাপূজার মণ্ডপে সহিংস হামলার পর নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ সরকার। তবে এ হামলায় জড়িতদের বিচারে ব্যর্থতা দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সংখ্যালঘুদের জমি দখল ও জোরপূর্বক উচ্ছেদের ঘটনাও ঘটেছে। তবে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বেশ কিছু শক্তিশালী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে ধর্মীয় নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে প্রশংসিত হয়েছে হাইকোর্টের ভূমিকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো দাবি করেছে, ২০২১ সালের অক্টোবরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের গত বছর যথাযথ শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কুমিল্লা জেলার সভাপতি বলেছেন, বিচার না হলে এই ঘটনার (সাম্প্রদায়িক সহিংসতা) পুনরাবৃত্তি ঘটবে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে গত বছরের জুলাইয়ে একদল মুসলিম জনতা নড়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনার পর হিন্দু নেতারা অভিযোগ করেন, ভুক্তভোগীদের রক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনী ব্যর্থ হয়েছে। সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রায়ই জামিন না দিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে আটকে রাখার সমালোচনা করেছে। তারা মামলাগুলোকে মিথ্যা বলছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা বলে আসছেন, এই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে সংখ্যালঘুদের জমি দখল থেকে তাদের রক্ষা করেনি সরকার।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বেসরকারি সংস্থা ফ্রিডম হাউস ও স্থানীয় ধর্মীয় নেতারা বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বেড়ে যাওয়ার পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভূমিকা রেখেছে। ভুল বা মিথ্যা তথ্য প্রায়ই ভাইরাল হয়েছে। এর জেরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। প্রতিবেদনে গত বছর বাংলাদেশে সংঘটিত ধর্মীয় স্বাধীনতা-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করা হয়। এতে ফ্রিডম হাউসের ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোয় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব এখনো কম। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর নারী-পুরুষেরা আইনের আওতায় বৈষম্যের পাশাপাশি হয়রানি ও অধিকার লঙ্ঘনের শিকার হন।

হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং স্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সারা বছর ধরে অব্যাহত ছিল। গত বছরের মার্চ মাসে জমি নিয়ে বিরোধে ঢাকায় ইসকন মন্দিরের প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ফ্রিডম হাউস এবং স্থানীয় ধর্মীয় নেতারা বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ বেড়েছে। কারণ তারা বলেছে, ভুল তথ্য প্রায়ই ভাইরাল হয় এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।

প্রতিবেদনের সরকারী অনুশীলন সংক্রান্ত প্যারায় বলা হয়েছে, ২০২২ সালের দুর্গা পূজা উৎসবের নিরাপদে উদযাপন নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তারা বৈঠক করেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সমস্ত পূজামণ্ডপে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছেন। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা সহিংসতা রোধে ঢাকা, কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামের মন্দিরগুলোতে তাদের নজরদারি এবং উপস্থিতি বাড়িয়েছে। সেই উৎসবের সপ্তাহে কার্যত একটি ইভেন্টে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘটনাগুলোকে ‘বড়’ না করার জন্য বলেছিলেন এবং সতর্ক করেছিলেন, কাউকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কিছু বলার অনুমতি দেয়া হবে না।

সংখ্যালঘু নেতারা বলেছেন, সরকার ২০২১ সালের অক্টোবরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার অপরাধীদের পর্যাপ্ত শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক হামলার মধ্যে একটি ছিল কুমিল্লা হিন্দু মন্দিরে হামলা। কুমিল্লার সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে এবং ১২টি মামলা করেছে, কিন্তু আগস্ট পর্যন্ত, পুলিশ মাত্র দুটি মামলায় চার্জশিট দিয়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের (বিএইচবিসিইউসি) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি বলেন, যদি না বিচার না হয়, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। নোয়াখালী জেলার সংখ্যালঘু নেতারা জানিয়েছেন, অনেকে এখনও ২০২১ সালের সহিংসতার সময় ক্ষতিগ্রস্ত বেশিরভাগ মন্দিরের পুননির্মাণ করেনি। তবে জেলা প্রশাসন কিছু ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরের পুননির্মাাণের জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং পাঁচ মেট্রিক টন চাল দিয়েছিল। নড়াইলের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অংশে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক তরুণের ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পরে মুসলিম ব্যক্তিদের দ্বারা হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আক্রমণ করা হয়েছিল। হামলার পর সংবাদমাধ্যমে হিন্দু নেতারা হিংসা ও আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা এবং পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করেছে। হামলার এক সপ্তাহ পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের সদস্যদের ১৪-জনের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App