×

মুক্তচিন্তা

নির্বাচন রুখে দেয়ার বিএনপির ঘোষণা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ১২:৪০ এএম

নির্বাচন রুখে দেয়ার বিএনপির ঘোষণা

গত ১৩ মে বিএনপির মহাসচিব রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখে আয়োজিত এক দলীয় সমাবেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন না দিলে, সে নির্বাচন রুখে দিতে নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তার এই বক্তব্যটি যথেষ্ট অর্থবহ। বিএনপি আগামী নির্বাচন তাদের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতীত অনুষ্ঠিত হতে গেলে তা রুখে দেয়ার যে কথা বলেছে, তা ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি এবং জামায়াতের সিদ্ধান্তের পুরোপুরি প্রতিধ্বনি বললে মোটেও অত্যুক্তি করা হবে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির মহাসচিব। তিনি দলের সিদ্ধান্ত যেমনিভাবে প্রায়ই সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, একইভাবে দলের কোনো চূড়ান্ত কর্মসূচির সিদ্ধান্ত সংবাদ সম্মেলন না করেও সমাবেশের মাধ্যমে বলতে পারেন। যদিও মির্জা ফখরুল ইসলাম দলীয় সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেননি। কিন্তু আগামী নির্বাচন রুখে দেয়ার মতো অবস্থানে কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানানোর বিষয়টি তার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে কোনোভাবেই রাজনীতি সচেতন মহল মনে করবে না। তবে তিনি নির্বাচন রুখে দেয়ার যে আহ্বানটি জানিয়েছেন সেটি দলের নেতাকর্মীর মনোভাব বোঝার জন্য দিয়ে থাকতে পারেন। একই সঙ্গে সরকারি দল আওয়ামী লীগেরও প্রতিক্রিয়া দেখা ও বোঝার অবস্থান থেকে তা করতে পারেন। তবে সেটিও তার দলের তারও ওপরে যিনি বা যারা আছেন তাদের পরামর্শ বা মতামত ছাড়া নিশ্চয়ই তিনি বলেননি। যদিও সে ধরনের কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আগামী নির্বাচনকে প্রতিহত করার মতো ঘোষণা দেয়ার এখতিয়ার নিশ্চয়ই এককভাবে তার নেই। তিনি এ ধরনের ঘোষণা দেয়ার আগে বক্তৃতায় একটি কৌশল অবলম্বন করে থাকতে পারেন। সমবেত কর্মীদের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা কি শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন দেখতে চান?’ ‘না’ জবাব এলে তিনি বলেন, ‘তাহলে নির্বাচন রুখে দিতে হবে।’ তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘আমরা, বিএনপি বারবার ক্ষমতায় এসেছি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে।’ তার এই বক্তব্যের সঙ্গে সবাই নিশ্চয়ই একমত হবেন না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্বাচন যদি ‘সুষ্ঠু’ হয়ে থাকে, তাহলে নির্বাচনের সংজ্ঞাই বদলে দিতে হবে। ২০০৬-০৭ সালে জোট সরকারের মেয়াদ শেষে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এর আগে সরকারের মেয়াদ শেষে ক্ষমতা হস্তান্তরের সাংবিধানিক বিধান ছিল। বেগম খালেদা জিয়ার সেই সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন এমন কোনো সংবাদ ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর দেশের মানুষ শোনেনি, দৃশ্যও দেখেনি। অবশ্য তিনি সেই রাতে রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়েছিলেন। বেশ কয়েক ঘণ্টা সেখানে অবস্থানও করেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো অনুষ্ঠান কিংবা আনুষ্ঠানিকতা সেখানে ঘটেনি। রাস্তায় তখন তীব্র উত্তেজনা। পরদিন নানা নাটকীয়তা ঘটেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন কে হবেন না তা নিয়ে। দেশে তখন এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি এ নিয়ে তৈরি হলো। সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান দায়িত্ব নেবেন কি নেবেন না সেটি ২৮ তারিখেই জানা হয়ে গিয়েছিল। যখন নেবেন না বলে জানিয়ে দিলেন তখন আগের সাবেক প্রধান বিচারপতি কিছুটা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, এছাড়া আরো দু-একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিও দায়িত্ব গ্রহণে সম্মতির কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি জানতেন তিনি ছাড়া আর কেউ এই পদে আসছেন না। কারণ সেটি আগের রাতেই বঙ্গভবনে অনানুষ্ঠানিক বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ২৯ তারিখ নানা নাটকীয়তার পর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি নিজেই প্রধান উপদেষ্টার শপথ যখন নিলেন তখন গোটা দেশ এবং আন্তর্জাতিক সব মহলই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল! এ কি করে সম্ভব! বিএনপি এবং জামায়াত সরকার ক্ষমতার রশি যে মোটেও ছাড়েনি সেটি একবারেই বোঝার বাকি ছিল না। পল্টন ময়দানের সম্মুখে বিএনপি এবং জামায়াতের অনুষ্ঠিত সভায় বেগম খালেদা জিয়া ও নিজামীর বক্তৃতাতেও কমবেশি তা বোঝার মতো শব্দ খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হলেও সেই উপদেষ্টা পরিষদ কোনো কাজ করতে পারেনি। ৪ জন উপদেষ্টা এক মাসের কিছু বেশি সময়ে অবস্থা দেখে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে বিদায় নিলেন। নির্বাচন কমিশন তখন ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মহাআয়োজন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। নতুন কয়েকজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হলো, উপদেষ্টা কমিশনেও ৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হলো। নির্বাচন কমিশন এবং এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার জানুয়ারি মাসের ২১ তারিখ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন ধার্য করে একটি তফসিল ঘোষণা করেছিল। দেশে তখন মহাআন্দোলন। কিন্তু মহাবীরবিক্রম ইয়াজউদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বিচারপতি আজিজ ও মাহফুজের নির্বাচন কমিশন নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। বিএনপি এবং জামায়াতের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিলেন। মহাজোট প্রথমে নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে সরে আসতে বাধ্য হয়। ১৯৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো নির্বাচন ২১ জানুয়ারির আগেই সম্পন্ন করার প্রস্তুতি চলছিল। তবে এবার বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় প্রার্থীদের অনেকের নাম বিজয়ী বলে ঘোষিত হতে থাকে। তাহলে প্রশ্ন জাগে বিএনপি-জামায়াত দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যাওয়ার যে ইলেকশন ইঞ্জিয়ানিয়ারিং করছিল তার ফলে যে সরকার গঠিত হতো সেটি কোন ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচনের মাধ্যমে হতো- তা আমরা জানি না। বিএনপি যা করবে তাই ঠিক, অন্যদের কিছুই ঠিক নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যেভাবে বলে আসছেন, তাতে এমনটিই মনে হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনেও যে নেপথ্যে দেশে এবং বিদেশে কুশীলব ক্ষমতায় বসানোর নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল সেটি বোধহয় এখন খুব বেশি অজানা নয়। ক্ষমতায় আসাটাই তো বড় নয়, কিন্তু দেশ শাসনকালের ৫ বছরের অর্জনটা কি সেই হিসাব-নিকাশটাও তো থাকা দরকার। ১৯৯১ সালে যে ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল, এটি সবাই মেনে নিচ্ছি। কিন্তু ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর সরকারে থাকাকালে উপনির্বাচন, ঢাকার মেয়র নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেভাবে হস্তক্ষেপ এবং আসন ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে সেই অপসংস্কৃতির কথা কি বিবেচনায় আনা উচিত না? ২০০১ সালে ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর দেশটাকে যে ‘শাসন’ উপহার দিয়েছিল জামায়াত-বিএনপি জোট সরকার, তা কি গণতন্ত্রের সঙ্গে যায়? এসব বাদ দিয়ে শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশে গণতন্ত্রের নহর বহে যাবে না এটি প্রমাণিত সত্য। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন জামায়াত ও বিএনপি শুধু প্রত্যাখ্যানই করেনি, প্রতিহত করতেও সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। অথচ ওই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে দেশে ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেগুলোতে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীরাই জয়লাভ করেছিলেন। সেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে ৫ মে তারিখে শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাৎক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠিত সমাবেশ এবং পরে অবস্থান নেয়ার বিষয়টি যে ছিল দেশে ক্ষমতা দখলের একটি আরব বসন্তের বাংলাদেশি উদ্যোগ, সেটি ওই দিনই অনুমান করা গিয়েছিল। সেই অগ্নিদগ্ধ বায়তুল মোকাররম এলাকায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের আক্রমণ, কুরআন, হাদিসসহ নানা ধর্মীয় গ্রন্থ পুড়িয়ে দেয়ার নজিরবিহীন ঘটনা, রাতে শাপলা চত্বরে নানা তাণ্ডব ঘটানো, মিডিয়ায় নানা রকম উত্তেজনা ছড়ানো, বেগম খালেদা জিয়া এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সমর্থন, ঢাকার তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার গরু কিনে মেহমানদারির আয়োজন ইত্যাদির নেপথ্যের মূলে ছিল হেফাজতকে দিয়ে দেশে রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন ঘটানো। সেই ষড়যন্ত্রের উদ্যোগকে সাউন্ড গ্রেনেড বাজিয়ে ব্যর্থ করে দেয়ার পর হাজার হাজার হুজুর, মোল্লা, মৌলভী হত্যার এক আজগুবি অপপ্রচার দেশে ও বিদেশে ছড়ানো হয়েছে। এই অপপ্রচার গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তখন পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল, আড়াই-তিন হাজার হুজুর ‘হত্যার’ কল্পকাহিনী, চাওয়া হয়েছিল এর প্রতিশোধের ভোট। ধর্মের এই অপপ্রচার ঘটিয়ে এদেশে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার নজির ’৭৫-এর পর থেকে যেভাবে বিএনপিসহ ডানপন্থি দলগুলো করে এসেছে, এর সুবিধাও নিয়েছে- তার রাজনৈতিক ফয়সালা কে করবে? গণতন্ত্র কি এভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়? ওই ৫ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগে ৫ মে কল্পিত হত্যাকাণ্ডের প্রচারের প্রভাব নির্বাচনে পড়েছিল, হয়তো জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর রেশ কাটত না। তারপরও জামায়াত-বিএনপি তখন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ক্ষমতা দখলের জন্য যথেষ্ট মনে করেনি। তাদের অন্য পরিকল্পনাও ছিল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকিয়ে দিতে পারলে সাংবিধানিক সংকট ঘটবে এ সম্পর্কে তারা নিশ্চিত ছিল। সে কারণেই ২০১৩ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে দেশে পেট্রলবোমা, অগ্নিসংযোগ, অবরোধ, সড়ক-যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত করা ও নির্বাচনী কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত সব প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়ার মতো ভয়ংকর সব কর্মসূচি জামায়াত-শিবির ও বিএনপির তরুণ কর্মীরা করেছিল। সে কারণে নির্বাচনটি সুষ্ঠু হতে পারেনি। এখন মির্জা ফখরুল সাহেব তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতীত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ রুখে দেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা ২০১৩ সালের অক্টোবর-পরবর্তী ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এবার সেভাবে রুখে দিতে পারবে কিনা জানি না। তবে রোখারুখির বিষয়টি কারো জন্য মঙ্গলজনক নয়। শক্তির প্রদর্শন যখন রাষ্ট্রের কোনো গণতান্ত্রিক নিয়মের বিরুদ্ধে ঘটে সেটি তখন অপশক্তি তথা বেআইনি কর্মকাণ্ডই হয়ে যায়। এক অপশক্তিকে রুখতে তখন রাষ্ট্রকে আইনি পন্থায় নামতে হয়। রাজনীতি তখন শক্তি প্রদর্শনের মহড়ার বিষয়ে পরিণত হয়। এখন বিএনপি রুখে দেয়ার যে হুমকি দিয়েছে সেটি বাস্তবে সম্ভব হবে জানি না। তর্কের খাতিরে মেনে নিলেও ভবিষ্যতে অন্যেরাও ‘রুখে দেয়ার’ পদ্ধতিকেই সরকার পরিবর্তনের উপায় হিসেবে মেনে নিলে জনগণের করার কিছু থাকবে কি? বিএনপি, জামায়াত এবং নামসর্বস্ব কিছু দল নিয়ে গঠিত জোটগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চায়। এই ব্যবস্থায় তিনটি নির্বাচন করতে গিয়ে দেশ তেমন কিছুই অর্জন করেনি। একটি অগ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা হিসেবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রমাণিত হয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানের ৫৮ ধারায় বর্ণিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালত এর যথেষ্ট যুক্তিপ্রমাণও উপস্থাপন করেছেন। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার জন্য দাবি করছে, তাদের দাবি সরকার বা দলের কাছে করলেই সরকার তা করতে পারবে না। দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে কোনো দল বা সরকার কিংবা জাতীয় সংসদও অবজ্ঞা করতে পারবে না। বিএনপিসহ যারা সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সংক্ষুব্ধ কিংবা একমত নন, তারা সর্বোচ্চ আদালতের কাছেই এর প্রতিকার চাইতে পারেন। আদালত যদি মনে করেন তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিতেও পারেন। এখন এই সরকার ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করে কিংবা নির্বাচন রুখে দেয়ার নামে রাস্তায় শক্তি এবং জানমালের ক্ষয় করে আদৌও কোনো সাফল্য আসবে কিনা বলা কঠিন। অথচ আদালতের কাছে গেলে শক্তি প্রয়োগের কোনো প্রয়োজন হবে না, আইনি যুক্তিতেই জয়-পরাজয় শান্তিপূর্ণ উপায়ে অর্জিত হবে। সেপথ ছেড়ে আবার ২০১৩-১৪ ও ’১৫-এর মতো জ¦ালাও-পোড়াও ও অগ্নিসংযোগের কর্মসূচি দেয়ার হুমকি বর্তমানে বাস্তবে কতটা জনগণ এবং বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রগুলো গ্রহণ করবে তা বলা মুশকিল। তবে সাধারণ মানুষ যে দেশে অতীতের অগ্নিসন্ত্রাস, জ¦ালাও-পোড়াওয়ের মতো নির্বাচন রুখে দেয়ার আন্দোলন দেখেছিল, সেটি স্মরণ করতেও বোধহয় চাইবে না। ২০২৩-২৪ নতুন সময়। এই সময়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সবাই দেখতে চায়। এর ব্যত্যয় ঘটানোর চেষ্টাকেই কেবল মানুষ রুখে দিতে রাস্তায় নেমে আসতে পারে।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App