×

সারাদেশ

তেঁতুলিয়ায় টিউবওয়েলে মিলছে না পর্যাপ্ত পানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৩, ১০:৪১ পিএম

তেঁতুলিয়ায় টিউবওয়েলে মিলছে না পর্যাপ্ত পানি

ফাইল ছবি

গ্রীষ্ম মৌসুমে মাটির গভীর নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। এতে করে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার কয়েকটি গ্রামে নলকূপগুলোতে মিলছে না পর্যাপ্ত পানি। তাতে সুপেয় পানিসহ দিনদিন পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

বিভিন স্থান ঘুরে দেখা যায় এ অঞ্চলের নদীগুলোতেও পানি নেই। শুকিয়ে গেছে পুকুরের পানি। বিশেষ করে তেঁতুলিয়া সদরের দর্জিপাড়া, কানকাটা, শারিয়ালজোত, ডাঙ্গীবস্তি সিদ্দিকনগর ও শালবাহান ইউনিয়নর পেদিয়াগছ এলাকাসহ বেশ কিছু জায়গা উঁচু এলাকা হওয়ায় গ্রীস্ম মৌসুমে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এতে করে অচল হয়ে পড়ে হস্তচালিত নলকূপগুলো। সংকট দেখা দেয় খাবারসহ পারিবারিক ব্যবহৃত পানির। হাজারও পরিবার পানি সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছে। তারা তাদের টিউবওয়েলে পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না। পানির জন্য ছুটতে হচ্ছে পাশের বাড়িতে।

দর্জিপাড়া এলাকার ফিরোজা আক্তার, সিদ্দিক নগরের নুরজাহান, মনোয়ারাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দুই মাস ধরে ঠিকমত টিউবওয়লে পানি উঠছে না। পাম্প বসিয়েও পানি মিলছে না। যারা মাটির গভীরে বডিং করে পাম্প বসিয়েছেন, তারা কিছুটা পানি পাচ্ছেন। তাদের বাড়ি থেকে পানি আনতে গেলেও বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বিদ্যুত খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা পানি দিতে চাচ্ছেন না। বাড়িতে ব্যবহৃত কাপড়, থালাবাসন ধোয়া ও রান্নাবান্না করতে যে পানি দরকার তাও মিলছে না।

মরিয়ম বেগম জানান, টিউবওয়েলে পানি পাচ্ছিনা। এক বালতি পানি চাপতে অনেক সময় লাগে। টিউবওয়েল মিস্ত্রি ওয়াজেদ আলী বলেন, পঞ্চগড় জেলার মধ্যে তেঁতুলিয়ার বেশ কিছু এলাকায় এই মৌসুমে পানি সংকট দেখা দেয়। টিউবওয়লে পানি থাকেনা। আমরা সর্বোচ্চ ৭০-৮০ ফুট পর্যন্ত বডিং করে পানি সরবরাহ করে থাকি। তারপরও জানুয়ারি মাস থেকেই পানির লেয়ার নিচে নামতে শুরু করে। এলাকায় এখন ৬০ ফুট পর্যন্ত লেয়ার নেমে গেছে। এ কারণে এখানকার টিউবওয়েলগুলোতে ঠিকমত পানি উঠছে না। যাদের টাকা পয়সা আছে তারা সাবমারসিবল বসাচ্ছেন। অসহায়-গরীবদের জন্য খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে পুকুর-ঘাট, খাল-বিল ও নদ-নদীতেও পানি শুকিয়ে গেছে। চৌচির হয়ে ফেটে যাচ্ছে ফসলের মাঠ। কৃষকরা জানান, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে অনেকস্থানে অগভীর নলকূপ (শ্যালাো মেশিন) দিয়েও পানি পরিমাণ মত উঠছেনা। ৮-১০ ফুট মাটি খুঁড়ে মেশিন গুলো সেখান বসানো হচ্ছে। তবুও পানির পরিমাণ বাড়ছেনা। এতে এবার বোরো আবাদসহ অন্যান্য আবাদও সেচ খরচ অনেকগুণ বেড়েছে।

এব্যাপারে তেঁতুলিয়ার সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চৈত্র-বৈশাখ মাসে পানির সমস্যা দেখা দেয়। এ জন্য আমরাও জনস্বাস্য প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। কিভাবে এ সমস্যা উত্তরণ করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি।

উপজলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মিঠুন কুমার রায় বলেন, এই মৌসুমে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। গত বছর আমরা সিদ্দিকনগর এলাকায় সার্ভে করেছিলাম তখন পানির প্রথম লেয়ার ৩২ ফিট নিচে দেখছিলাম। বিশেষ করে বরেদ্রসহ অনেক গভীর নলকূপ স্থাপন হওয়ায় সাধারণত টিউবওয়েল গুলোতে ঠিকমত পানি উঠছে না। এখন পানির স্তর ৩০-৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। এতে খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

জেলা জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী সায়হান আলী বলেন, এই সময় মাটির গভীরে পানির লেয়ার চলে যাওয়ায় পানি কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ওই সব এলাকার আশপাশে গভীর নলকূপ থাকার কারণে সেচ পানি টানছে। যার কারণে নলকূপে পানি কম মিলছে। তাবে যাই হোক, আমাদের উপজেলা প্রকৌশলীকে ওইসব এলাকায় পাঠাবো। তিনি ওয়াটার লেভেলসহ যাবতীয় পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট ও বরাদ্দ দিলে সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ নেবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App