×

জাতীয়

লণ্ডভণ্ড সেন্টমার্টিন-টেকনাফ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৩, ০৮:২২ এএম

লণ্ডভণ্ড সেন্টমার্টিন-টেকনাফ

> বিধ্বস্ত আড়াই হাজার ঘরবাড়ি > দুজনের মৃত্যুর খবর, আহত অসংখ্য > অনেক জায়গায় খাদ্য সংকট

যেমনটি পূর্বাভাস ও আশঙ্কা ছিল; গতিপথ বদল করায় বাংলাদেশের ভূখণ্ডে তেমন জোরালো আঘাত করেনি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’। উপকূলের খানিকটা শুধু ছুঁয়ে গেছে- তাতেই লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দ্বীপ সেন্টমার্টিন ও টেকনাফসহ বেশ কয়েকটি এলাকা। বিধ্বস্ত হয়েছে হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি। উপড়ে গেছে শত শত গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল। তলিয়ে গেছে সেন্টমার্টিনের একাংশ। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে নারীসহ দুজনের। কিন্তু জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। পাশাপাশি ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। তবে, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া অঞ্চল।

এদিকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকা কক্সবাজারে তাণ্ডব চালাতে পারে- এমন আশঙ্কায় দেখানো হয় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে মোকা দূর্বল হয়ে পড়ায় এবং মিয়ানমারের দিকে বাঁক নেয়ায় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি মোকা। তবে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগেই ৭ শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় আড়াই লাখ লোককে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। সৈকতে উৎসুকজনতা আটকাতে নেয়া হয় কঠোর পদক্ষেপ। এরপরও ঠেকানো যায়নি তাদের। হাজার হাজার মানুষ সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ দেখতে ভিড় করতে থাকে সারাদিন ধরে। অনদিকে, দিনমান উৎকণ্ঠায় সময় পার করেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়া মানুষ। অনেক জায়গায় খাদ্য সংকটেরও খবর পাওয়া গেছে।

ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েপড়ার খবরে অনেকেই বাড়ি ফিরতে অস্থির হয়ে পড়েন। মোকার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও। সেখানে বেশ কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কক্সবাজারের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বাংলাদেশ ভূখণ্ডে মোকার তাণ্ডব শেষ। তবে, আজ সোমবার মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ও কিছুটা দমকা হাওয়া থাকতে পারে।

মোকার ধ্বংসলীলার বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান ভোরের কাগজকে বলেন, মোকার প্রভাবে সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, টেকনাফ, উখিয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর আড়াই হাজারেরও বেশি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। এ ঘটনায় অনেকে আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর পাইনি। দুজন মৃত্যুর খবর লোকমুখে শুনেছি। কিন্তু কোনো মাধ্যমেই আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। এরপরও আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি। মৃত্যুর বিষয়টি নশ্চিত হতে পারলে গণমাধ্যমকে জানানো হবে। এছাড়া ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এর সঠিক তথ্যও পরবর্তীতে জানানো হবে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহফুজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, দুজনের মৃত্যুর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু পুলিশের কন্ট্রোল রুমে কোনো মৃত্যুর খবর আসেনি। ফাঁড়ি পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেও আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।

ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, সেন্টমার্টিনে আমাদের সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত রয়েছে। তাদের কাছ থেকে কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মৃত্যুর বিষয়টি জানা নেই।

সেন্টমার্টিনে তাণ্ডব : শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোকার তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গেছে কক্সবাজারের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্টমার্টিন এবং উপকূলীয় উপজেলা টেকনাফ এলাকা। সমুদ্রের পানিতে ভাসছে সেন্টমার্টিনের একাংশ। সেখানে ঘরবাড়ি, গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উপড়ে গেছে। সেন্টমার্টিনে গাছ পড়ে দুজন নারী-পুরুষ নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অনেকেই। সেন্টমার্টিনের বিভিন্ন স্থানে এমন পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।

তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, এই মুহূর্তে সেন্টমার্টিনে বাতাসের গতি প্রচুর। অনেক ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। শুনেছি গাছ পড়ে এক নারীর মৃত্যুও হয়েছে। আহত হয়েছে অনেকে। কিন্তু বৈরী পরিবেশের কারণে বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে। জানমাল রক্ষায় দ্বীপের ৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন ৫ হাজার মানুষ।

সেন্টমার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, বাতাসের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর। সমুদ্রের পানি উড়িয়ে নিচ্ছে বাতাস। সৈকতের ভেজা মাটিও তুলে নিচ্ছে। মানুষের ঘর বাড়ির টিন, ছাউনি, কাঠ, বাঁশ উড়িয়ে নিচ্ছে। বড় বড় গাছ ও নারিকেল গাছ দুমড়ে-মুচড়ে পড়েছে। দোকানপাট ভেঙে উড়ে গেছে। পুরো সেন্টমার্টিনে বৃষ্টির পানি ও বাতাসের তীব্রতায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সব ধোঁয়াশা হয়ে আছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দেশবাসীর কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন।

এদিকে মোকা তাণ্ডব চালিয়েছে শাহপরীর দ্বীপ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায়। টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপে টিনের ঝুপড়ি ঘর ও দোকাপাট উড়িয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে ভোরের কাগজের টেকনাফ প্রতিনিধি জাবেদ ইকবার। উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও শতাধিক ঘর তছনছ হয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে, কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ভোরের কাগজের উখিয়া প্রতিনিধি জসিম আজাদ বলেন, মোকাকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে আতঙ্কিত ছিল রোঙ্গিারা। অনেকে আতঙ্কে ঘুমাতে পারেনি। তবে, শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পগুলোতে ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় আতঙ্ক কেটে গেছে।

কক্সবাজারে ভুগিয়েছে বৃষ্টি, সমুদ্র ছিল উত্তাল : গতকাল ভোর থেকেই কক্সবাজারে শুরু হয় বৃষ্টি। সেইসঙ্গে কিছুটা দমকা হাওয়া। এতে বিপাকে পড়েন সেখানে অবস্থান করা পর্যটক ও স্থায়ী বাসিন্দারা। সেইসঙ্গে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠলে মনে ভয় ধরায় মোকা আসার শঙ্কা। সরেজমিন কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবনী পয়েন্ট গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ তীরে আঁচড়ে পড়ছে। মোকার ভয়ে যারা কক্সবাজার ত্যাগ করছিলেন, তারাও পড়েন বিপাকে। অনেককে বৃষ্টিতে ভিজে বাসস্টপে যেতে দেখা যায়।

ঠেকানো যায়নি উৎসুক জনতা : বড় ঢেউ দেখতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে উৎসুক জনতার ভিড় শনিবার থেকেই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় প্রশাসনের। বৃষ্টির কারণে গতকাল সকাল থেকে ভিড় কিছুটা কম থাকলেও, বেলা ১১টার পর থেকে হাজার হাজার লোক সৈকতে অবস্থান নিয়ে সেলফি ও ফেসবুক লাইভ করতে থাকে। পরে হার্ডলাইনে হাঁটে জেলা প্রশাসন। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সাইরেন বাজিয়ে সরিয়ে দেয়া হয় উৎসুকজনতাকে। কিন্তু সুযোগ পেলেই সৈকতে নেমে পড়তে দেখা যায় শত শত উৎসুক মানুষকে।

এদিকে কেমন গতিতে মোকা এগিয়ে আসছে- তা দেখতে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে আসেন এসব মানুষ। রুম বুকিং নেন সৈকতঘেঁষা হোটেলগুলোতে। যাতে বারান্দায় বসে তাণ্ডব দেখতে পারেন। তাদেরই অনেকে এবং স্থানীরা সৈকতগুলোতে ভিড় জমায়। তাদের সৈকত থেকে সরাতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। তাদের ‘অ্যাকশনে’ সাময়িক ফাঁকা হয়ে হয় সমুদ্রসৈকত এলাকা। কিছুক্ষণ পর আবার তা আগের অবস্থায় দাঁড়ায়। গতকাল রাতেও সৈকতে ভিড় দেখা গেছে।

খাদ্য সংকটে কুতুবদিয়ার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো : ভোরের কাগজের কুতুবদিয়া প্রতিনিধি এম. এ মান্নান জানান, শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত কুতুবদিয়ার ৯২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার মানুষ। এই বিশাল আশ্রিত মানুষের জন্য প্রতি ইউনিয়নে ১০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৬০ কার্টন কেক দেয়া হয়। যা ২০ ভাগ আশ্রিতদের ৩ বেলার খাবারের জন্য অপ্রতুল। কৈয়ারবিল, বড়ঘোপ, দক্ষিণ ধূরুং লেমশীখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়- এখানে আশ্রয় নেয়া মানুষের নানা ভোগান্তি। উত্তর ধুরুং কালারমা পাড়ায় একটি কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মনছুরা বেগম বলেন, রাতে খাবার পাননি। তাই তিনি সকালে চলে যান বাড়িতে।

কৈয়ারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া শামশুল আলম (৭৫) জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় আশ্রয় নিয়েছি, এখনো শুকনো খাবার পাইনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মানুষের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, রাত ৩টার দিকে বেশ কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছে। তারা হয়তোবা পায়নি। তাদের জন্য শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

উৎকণ্ঠায় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারীরা : ঘূর্ণিঝড় মোকার শক্তি কমে যাওয়ায় এবং এটি ভয়ংকর রূপ ধারণ না করলেও কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অস্বস্তি বিরাজ করেছে। ঘরবাড়ি হারানের আতঙ্কে উৎকণ্ঠায় সময় পার করেছেন তারা। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানকারীরা জানিয়েছেন, ভয়াবহ বিপদ ঘটবে এমন আশঙ্কা থেকেই সবকিছু ছেড়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। আল্লাহ চাইলে আমাদের ঘরবাড়ির কোনো ক্ষতি ঘটবে না। যদি নিজেদের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে রাস্তার ফকির হয়ে যেতে হবে। কেননা, খেটে খাওয়া উপকূলের এসব বাসিন্দার বেশির ভাগই স্বল্পআয়ের মানুষ। গতকাল কক্সবাজারের বিমানবন্দর সড়কের সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও জেলা পরিষদ মার্কেটসংলগ্ন প্রিপ্যারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে সেখানে আশ্রয় নেয়া মানুষ এসব কথা বলেন। ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া গ্রামটি একদম উপকূলঘেঁষা। এই গ্রামের সব বাসিন্দাকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে এনেছে প্রশাসন।

সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মো. হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের গ্রামের ১০০টি পরিবার এই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছি। জাল বোনার কাজ করে যা আয় করি, কষ্ট করে চলি। এখনতো বিপদের সময়। তাই জীবন বাঁচানোই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ঝুপড়ি ঘরের মায়া ত্যাগ করে জীবন বাঁচাতে এখানে এসেছি। আল্লাহর হুকুমে কিছু থাকলে থাকবে। না থাকলে আর কী করা। রাস্তার ফকির হয়ে যাওয়া লাগবে। পলিথিন দিয়ে ঘর বানিয়ে থাকব। সরজমিন আশ্রয়কেন্দ্র দুটি ঘুরে দেখা যায়, বেশি ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দারা যতটুকু পেরেছেন, জামাকাপড়, কাঁথা বালিশ ও গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।

উপকূলবাসীর মনে ভাসছে ৯১’র ভয়াল স্মৃতি : ১৯৯১’র প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের সেই বিভীষিকাময় ভয়াল স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় ৭২ বছরের বৃদ্ধ কবির আহমদকে। সেই ঘূর্ণিঝড়ে হারিয়েছিলেন দুই ছেলেকে। ঘরবাড়ি সহায়-সম্বল, সবকিছু হারিয়ে সর্বস্বান্ত হাওয়া কবির আহমদ এবারের অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকায় আর কিছু হারাতে চান না। কক্সবাজার উপকূলের কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা কবির আহমদ ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজারের ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলার সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে এসে অবস্থান নেন। কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যার‌্যাটরি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে কথা হয় তার সঙ্গে। ৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের স্মৃতি মনে করিয়ে তিনি বলেন, ৯১’র ঘূর্ণিঝড়ে আমি আমার সবকিছু হারিয়েছি। ভিঠে-মাটি, ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, গরু-ছাগল সব হারিয়ে আমি সর্বস্বান্ত হয়েছিলাম। আমার আদরের দুই ছেলেকে হারিয়েছিলাম। এবারের ঘূর্ণিঝড় সেই ভয়াল স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে।

একই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়া ৭০ বছরের আরেক বৃদ্ধ জাফর আলমও জানান, ৯১’র স্মৃতি মনে পড়ে যাওয়ার কথা। মোকার আঘাত কক্সবাজারের ব্যবসায়ীদের ওপর : ঘূর্ণিঝড় মোকা ইতোমধ্যে আঘাত এসেছে সেন্টমার্টিন দ্বীপে। তীব্র বাতাস ও ঝড় বৃষ্টিতে লণ্ডভণ্ড ওই এলাকা। তবে এর প্রভাব পড়েছে কক্সবাজারেও। কক্সবাজার শহর ও সি-বিচের আশপাশের দোকানগুলোতেও মোকার কারণে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজারের কলাতলী বিচ, সুগন্ধা বিচসহ ওই এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

কলাতলী রোডের সি প্যালেস বার্মিজ মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, ওই মার্কেটের সবগুলো দোকান বন্ধ রয়েছে। তবে ওই মার্কেটের আশপাশে দুই-একটি দোকান খোলা আছে। ওই মার্কেটের পাশেই এহেসান শুটকি আড়ত রয়েছে। সেই আড়তটি খোলা থাকলেও কোনো ক্রেতা নেই। একপর্যায়ে কথা হয় ওই আড়তের মালিক এনামুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত তিন দিন থেকে কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে। এজন্য বেচাকেনা একদমই নেই। ঘূর্ণিঝড় মোকা না গেলে বেচাকেনা হবে না। ওই এলাকার এসএন বার্মিজ দোকানের মালিক মো. সৈয়দ আহমেদ বলেন, সুগন্ধা বিচে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন। তাই আমাদের দোকানে বেচাকিনিও বেশি হতো। কিন্তু মোকার কারণে এখনো কোনো ক্রেতা নেই। তাই প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো লোকসান গুণতে হচ্ছে।

এদিকে, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের পাশের বিচগুলোতে গড়ে ওঠা খাবারের দোকানগুলোও বন্ধ রয়েছে। এতে দোকানিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

কী বলছে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস : কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকা নিয়ে আমাদের যে ঝুঁকির আশঙ্কা ছিল, এখন আর ততটা ঝুঁকি নেই। এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকার পিক আওয়ার ছিল দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এ সময় দ্রুতবেগে জলোচ্ছ্বাস প্রবাহিত হয়েছে। তখন ঘণ্টায় ১২০-১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। কিন্তু উত্তরের বাতাসের কারণে কক্সবাজারে এটি তেমন আঘাত হানতে পারেনি। তবে, ঝড়ের রেশ ২-৩ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে। এর প্রভাবে আজ বৃষ্টি ও হালকা বাতাস হতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App