×

মুক্তচিন্তা

ভূরাজনৈতিক সমীকরণ : বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৩, ০২:০৬ এএম

সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় সক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বিশ্ব ও আঞ্চলিক পরাশক্তিদের কাছে গুরুত্ব বেড়েছে বাংলাদেশের। বিশ্ব রাজনীতির নতুন সমীকরণ যেভাবে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এ কথা এখন সবাই বুঝতে পারছে। তাই এই অঞ্চলে রাজনীতির যে কোনো বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে সবার নজর রয়েছে। আগামী বিশ্ব রাজনীতি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ঘিরেই হবে, এটা এখন স্পষ্ট। যেসব কারণে এই অঞ্চলের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে তা হচ্ছে, বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে চীনের উত্থান, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনৈতিক, ভূকৌশলগত গুরুত্ব। এই অঞ্চলের দেশগুলো বিশ্ব অর্থনীতিতে উদীয়মান শক্তি এবং আসিয়ানের মাধ্যমে রাষ্ট্রগুলোর সক্ষমতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা ও ভারসাম্য বজায় রেখেছে। অধিকন্তু ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথ। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, ইন্দো-প্যাসিফিক গুরুত্ব বাড়ার সঙ্গে বে অব বেঙ্গলের গুরুত্ব বাড়ে, বাড়ে বাংলাদেশের গুরুত্ব। বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত। ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিকভাবে এটি বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িত। এই গুরুত্ব বাড়ার কারণগুলোর মধ্যে আছে- প্রথমত, ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে বে অব বেঙ্গলের সংযোগ এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে বঙ্গোপসাগর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দ্বিতীয়ত, চীনের অন্যতম বাণিজ্যিক পথ মালাক্কা প্রণালিতে মার্কিন ও তার মিত্রদের শক্ত অবস্থানের জন্য চীন বঙ্গোপসাগরকে বিকল্প পথ হিসেবে ধরে নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চীন ঘেরাও পলিসি বাস্তবায়নের জন্য চীনের প্রতিবেশী দেশে তাদের শক্ত অবস্থান ও সুযোগগুলো আটকে দেয়া জরুরি। সেই হিসেবে এই অঞ্চলে মার্কিন অবস্থান শক্ত করতে চায়। এখন পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলোর কাছে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র অবস্থা তৈরি হয়েছে। এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিনিয়োগবান্ধব সরকারি নীতি ও বিশাল জনসংখ্যা তথা জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি। বিশ্ব রাজনীতির নতুন সমীকরণে বাংলাদেশকে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতিতে বৈচিত্র্য ও সংবিধানের আলোকে এগিয়ে যেতে হবে। সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে, বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। সে রূপরেখায় চারটি নীতি উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রæতা নয়; নীতিগুলো টেকসই উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবিক পদক্ষেপ এবং মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার জন্য গঠনমূলক আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। তবুও বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্ব রাজনীতির জটিল সমীকরণ পরাশক্তিদের অবস্থান কখন কী হয়? যদিও কোনো রাষ্ট্র এই রূপরেখায় অসন্তুষ্ট নয়। তাই বলে নিজেদের স্বার্থ আদায়ের জন্য কোনো রাষ্ট্রের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা পরিহার করতে হবে না? দরকষাকষি ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। নিজেদের জাতীয় শক্তিকে বৃদ্ধি করতে হবে। বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে অন্য রাষ্ট্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করার কোনো উদ্দেশ্য নয়; কিন্তু অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রভাব প্রতিহত করতে তো পারি? তার জন্য প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা, জাতীয় ঐক্য, রপ্তানি পণ্যের গুণগতমান বৃদ্ধি ও বিদেশে দক্ষ শ্রমিক জোগান দান। তাছাড়া নতুন অঞ্চলে ও দেশে বাণিজ্য প্রসার ঘটানো, প্রয়োজনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মাধ্যমে নতুন দূতাবাস খুলে নতুন বাজার সৃষ্টি করা, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও পূর্ব ইউরোপ অঞ্চলে। এখানে পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য পণ্যের সম্ভাবনা রয়েছে অনেক। যেসব গুরুত্বপূর্ণ দেশে আমাদের পণ্য রপ্তানি কম, সেখানে কী বাধা আছে তা খুঁজে বের করার মাধ্যমে সমাধান করা। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা ও ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ এড়িয়ে চলা। আগামীতে যত বেশি নির্ভরশীলতা হ্রাস করা যাবে পরাশক্তিগুলো থেকে এবং নিজেদের আত্মনির্ভরশীলতা ও জাতীয় শক্তি যত বৃদ্ধি করতে পারবে, তত দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। মোহাম্মদ এনামুল হক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App