×

সম্পাদকীয়

ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন : চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ছয়টি প্রস্তাব আমলে নেয়া জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৩, ০২:০৭ এএম

রাজধানী ঢাকায় গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে দুই দিনব্যাপী ষষ্ঠ ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন শেষ হয়েছে। এতে ২৫টি দেশের সরকারপ্রধান ও মন্ত্রী এবং ১৫০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য শান্তি, অংশীদারিত্ব এবং সমৃদ্ধি’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধা জোরদার করা, অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি এ অঞ্চলের স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য সামুদ্রিক কূটনীতি জোরদার করার আহ্বান জানান। তিনি ভাষণে ছয়টি বিষয়ে জোর দিয়েছেন। এগুলো হলো- ১. উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী সমুদ্র কূটনীতি গড়ে তোলা, ২. জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, ৩. টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্বের ভিত তৈরি, ৪. সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এ অঞ্চলে নৌ ও বিমান চলাচলের বিস্তৃতি, ৫. শান্তির সংস্কৃতিচর্চা ও জনবান্ধব উন্নয়ন কৌশল অবলম্বন এবং ৬. বিশ্বের অর্ধেক নারী সম্প্রদায়কে সব ধরনের কাজে অংশীদারিত্বে রাখার নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে আমরাও একমত। এশিয়া-প্যাসিফিক ও আফ্রিকান অঞ্চলে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং কৌশলগত প্রভাব রয়েছে। এ অঞ্চলে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৬৪% এবং বৈশ্বিক জিডিপির ৬০% রয়েছে। বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও অঞ্চলটি অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তাই ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সমুদ্র বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তার মূল চাবিকাঠি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কাঁচামাল সংগ্রহে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা, খাদ্য চাহিদা, সুপেয় পানির নিরাপত্তা, সমুদ্রকেন্দ্রিক নিরাপত্তার হুমকি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রদূষণের মতো কারণগুলো সমুদ্রের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। এসব চাপ কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ছয়টি বিষয়ে জোর দিয়েছেন, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য সেসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভারত মহাসাগর শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এই অঞ্চলের সব দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং এলাকার ঘটনাবলি ও শক্তির ভারসাম্যের পরিবর্তন-রূপান্তরের দিকে নজর রাখছে। আমরা জানি, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং রাশিয়ার কাছে ভূরাজনৈতিক কারণে ভারত মহাসাগর গুরুত্বপূর্ণ, সন্দেহ নেই। তারা কেউ চাইবে না, এখানে শক্তির কোনো শূন্যতা সৃষ্টি হোক। ভারত-চীন ছাড়াও ভারত মহাসাগরের সীমান্তে পারস্য উপসাগরের উপকূলে অবস্থিত জিসিসিভুক্ত ৬টি দেশও বিশ্ব রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-চীন-ভারতের নানামুখী দ্ব›েদ্বর কারণে বাংলাদেশের পক্ষে সহজে নিজের স্বার্থ বজায় রাখা ও আদায় করা সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সঠিক পথে আছে বলে আমরা মনে করি। চার মৌলিক নীতি ও ১৫ লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল-আইপিএস ঘোষণাও একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। প্রথমত, বাংলাদেশ অবাধ ও নিরাপত্তার বিষয়টি পরিষ্কার করেছে। দ্বিতীয়ত, কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার কথা বলা হয়েছে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতি বজায় রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দেশকে সঠিক ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। এবারের ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ছয়টি বিষয় আমলে নিলে ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা, শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো সুদৃঢ় হবে বলে আমরা আশাবাদী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App