×

মুক্তচিন্তা

শ্রমঘণ্টা নষ্ট ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩, ১২:২২ এএম

কর্মস্থলে অবস্থানরত মহামূল্যবান মুহূর্তকে কর্মঘণ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। বর্তমান বাংলাদেশের সেরা সমস্যাগুলোর মধ্যে কর্মঘণ্টা অন্যতম। আর কর্মঘণ্টা নষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ হলো যানজট। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অসহনীয় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ৭৩টি মোড়ে আটকে যাচ্ছে যানবাহন। এতে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। আর জ¦ালানি পুড়ছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, চরম যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৯০ লাখের অধিক কর্মঘণ্টা। এই সর্বনাশা যানজটের কারণে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ১৫২ কোটি ৫৬ লাখের অধিক টাকা। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে প্রতি বছর সব মিলিয়ে ১ হাজার ৪০০ কোটি কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এতে প্রতি বছর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ১৪০ কোটি টাকা। কর্মঘণ্টা নষ্টের পেছনে রয়েছে যানজট, যা দেশবাসীর জন্য বড় শঙ্কার কারণ। যানজট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো ব্যক্তিগত যানবাহন বৃদ্ধি। যার ফলে বিপুলসংখ্যক যানবাহনের চাপে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। নগরীর জীবনমান, শিক্ষার উন্নতি ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় সুবিধা প্রভৃতির কারণে প্রতিনিয়ত রাজধানীতে মানুষের আগমন বাড়ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিশেষ করে বন্যাকবলিত এলাকা, নদীভাঙন ও দুর্ভিক্ষ অঞ্চলের গরিব ও অসহায় মানুষের একমাত্র কর্মসংস্থানের জায়গা হিসেবে পছন্দ রাজধানী ঢাকা। সড়ক ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচল, যেখানে সেখানে ইচ্ছামতো গাড়ি পার্কিং, অবৈধ ফুটপাত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ প্রভৃতি যানজট বাড়িয়ে তুলছে। রাজধানীজুড়ে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর ও হাটবাজার গড়ে উঠছে, যার ফলে রাস্তাঘাট সরু হয়ে যাওয়ায় যানজট বাড়ছে, দুর্ঘটনাও ঘটছে। তাছাড়া সড়কে একদিকে ধীরগতির রিকশা, ভ্যান ও অন্যদিকে দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়ি ও বাস-ট্রাকের যাতায়াতের ফলে গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। চট্টগ্রামের যানজট পরিস্থিতি ইদানীং আবারো খারাপ হয়েছে। আগ্রাবাদ এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে যানজট বৃদ্ধি পেলেও শহরে অন্যান্য স্থানে ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার কারণেই যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বলাবাহুল্য। এই সমস্যার সমাধানকল্পে কয়েকটি প্রস্তাব যা বাস্তবায়ন হলে যানজটের সমস্যা থেকে ঢাকাবাসী মুক্তি পেতে পারেন। ১. যেসব শহরে আগে যানজট ছিল এখন নিয়ন্ত্রিত যানজট; সেসব দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের আমাদের এ দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে যানজট নিরসনে পরামর্শ নেয়া। ২. সরকার যানজট সমস্যা নিরসনে দেশি ও বিদেশি সদস্যের সমন্বয়ে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এই কমিশন যানজটের প্রকৃত কারণ নির্ণয়সহ সমাধানের পরামর্শ দিতে ও প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের পরামর্শ দেবে। ৩. রাজধানী শহরতলির যানজট নিরসনে যাদের ভূমিকা রয়েছে তাদের ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে কাজে লাগানো যেতে পারে। ৪. রাজধানী ঢাকার প্রাইভেটকারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাধিক্য যানজটের একটি অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচ্য হয়। ৫. অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে ফুটপাত ও অন্যান্য রাস্তা দখলমুক্ত করতে হবে। ৬. রেল ক্রসিংগুলোতে ওভারব্রিজ তৈরি করলে যানজট অনেকাংশে নিরসন হবে। ৭. গাড়ির চালককে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করা ও গাড়ি ঘোরানো থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা দরকার। ৮. রাজধানীতে সৎ, পরিশ্রমী এবং সাহসী ট্রাফিক পুলিশ অফিসার নিয়োগ দিতে হবে। ৯. সরকার যানজট নিরসনের বিষয়ে অধিক মনোযোগী হবে। নগরীতে সাধারণ মানুষের জন্য একমাত্র ভরসা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। প্রতিটি বাসে প্রায় ৫০-৬০ জন মানুষের ধারণক্ষমতা রয়েছে। চলমান মেট্রোরেল প্রকল্পে রাজধানীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর যোগাযোগ স্থাপিত হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে ধীরগতি ও দ্রুতগতিসম্পন্ন যানের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। যানজট সমস্যার সমাধান করতে পারলেই রক্ষা পাবে জনগণ। এর ফলে আর নষ্ট হবে না রাজধানীতে বসবাসরত মানুষের কর্মঘণ্টা। উপরন্তু তা দেশের সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে সহায়ক হয়ে উঠবে। মিজানুর রহমান মিজান : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App