×

সারাদেশ

বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩, ০৯:০১ পিএম

বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কা

চট্টগ্রাম নগরীর লালখানবাজার মতিঝর্না এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারিদের অপসারণে রবিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অভিযান। ছবি: সংগৃহীত।

বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কা
বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কা
বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কা

ঘূর্ণিঝড় মোকা চট্টগ্রামে আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে আগামী তিনদিন বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত থাাকতে পারে বলে রবিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বুলেটিনে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরী ও এর আশপাশের এলাকাতে রবিবার সারাদিনই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। তাই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা নগরীর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়, পাহাড়ের ঢাল ও পাদদেশে অত্যন্ত বিপদজনকভাবে বসবাসরত নাগরিকদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছে।

শনিবার ও রবিবার চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা থেকে কমপক্ষ আড়াইশত পরিবারকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু দেখা যায় অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসনের লোকজন চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আবার সেসব স্থানে বাসিন্দারা ফিরে যায়। কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেয়াতে বার বার এ ধরনের বিষয় ঘটতেই থাকে।

রবিবারও নগরীর মতিঝর্ণা-বাটালি হিল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি বসতি থেকে ১০০টির মতো পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এই অভিযানে থাকা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এনডিসি ( নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, সেখানে দেখা গেছে জাগো ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ( এনজিও) পাহাড় কেটে স্কুল বানিয়েছে যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

রবিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর প্রায় ১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলালের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারি পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অভিযানের সময় বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জামিউল হিকমাহ এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তসহ জেলা প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ অংশ নেন।

অভিযানকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বসবাসকারী আরো ৫০-৬০টির মতো ঘর চিহ্নিত করা হয়েছে। এসকল ঘর ফাঁকা করতে কাউন্সিলরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এসময় ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ৯০ ডিগ্রী বরাবর চিহ্নিত ঘর অতি বৃষ্টিতে চরম ঝুঁকিপূর্ণ। সহকারী কমিশনার (ভূমি) জামিউল হিকমাহ জানান যে, মতিঝর্ণা-বাটালি হিল এলাকায় এনজিও জাগো ফাউন্ডেশন পাহাড় কেটে স্কুল বানিয়েছে। এটি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে মামলাও চলছে।

এদিকে নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকা মানুষের জন্য বহুতল ভবন গড়তে ইএনডিপিকে ১৮ গন্ড বা ৩৬ শতক ভূমি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা চট্টগ্রামে দ্রুত বাড়ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধুকন্যার নেয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের মতো বড় প্রকল্প নেয়া হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। আর বর্তমানে অবৈধভাবে পাহাড় দখল করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শিগগির চসিক ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে কঠোর অভিযান পরিচালনা করবে।

রবিবার সকালে নগরীল দামপাড়ায় চসিক বিদ্যুৎ উপ-বিভাগ ভবনের নিচ তলায় খোলা কন্ট্রোল রুম থেকে ঘূর্ণিঝড়ের সার্বিক পরিস্থিতি ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনার সময় মেয়র এসব কথা বলেন। এ সময় চসিকের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে মেয়রকে অবহিত করেন। এরপর মেয়র ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে সমুদ্রসৈকতসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেন।

এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, শনিবার ভোর থেকে ৭টি যানবাহনে করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ত্যাগ করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করেছি। ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা বাসিন্দাদের সরিয়ে অনেকের বাসায় তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। জনসচেতনতা না থাকলে কেবল সরকারি পদক্ষেপে ক্ষয়-ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত: গত শনিবার (১৩ মে) বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানাধীন ফিরোজ শাহ কৈবল্যধাম সংলগ্ন ফয়েজ লেক ঝিল এলাকায় অতি ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী দেড়শতাধিক পরিবারের সদস্যদেরকে অপসারণে অভিযান পরিচালনা করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। রাতে ওই অভিযান চলাকালে তা তত্বাবধান করতে গিয়ে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App