×

আন্তর্জাতিক

কর্ণাটকে বড় জয় কংগ্রেসের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩, ১০:৫৯ এএম

কর্ণাটকে বড় জয় কংগ্রেসের

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে কংগ্রেস। বিপর্যস্ত ক্ষমতাসীন বিজেপি। আগামী বছরই ভারতে হবে লোকসভা নির্বাচন, এর আগে বিজেপি এবং কংগ্রেস- দুই দলের কাছেই কর্ণাটক ছিল ‘প্রেস্টিজ ফাইট’।

বিধানসভার ২২৪টি আসনের মধ্যে গতকাল শনিবার রাত ১০টায় সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কংগ্রেস ১৩২টি আসনে জয়ী, এবং ৪টি আসনে এগিয়ে ছিল। বিজেপি ৬৩টি আসনে জয়ী এবং ২টি আসনে এগিয়ে ছিল। ধর্মনিরপেক্ষ জেডিএস পেয়েছে ১৯টি আসন আর অন্যান্য দল পেয়েছে ৪টি আসন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজেপি পায় ১০৪টি আসন। সেই অনুযায়ী এবার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির ভরাডুবিই হয়েছে বলা যায়।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে বলেছেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কর্ণাটকে দলের জয় হয়েছে। জয় নিয়ে মুখ খুলেছেন রাহুল গান্ধীও। তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, কর্ণাটকে ঘৃণার কারবার বন্ধ হয়ে ভালোবাসার বিপণি খুলে গিয়েছে।

কর্ণাটকে দলের হার মেনে নিয়েছেন বিজেপি নেতা বিএস ইয়েদুরাপ্পা। তিনি বলেছেন, জয়-পরাজয় বিজেপির কাছে নতুন কিছু নয়। ফল দেখে দলীয় কর্মীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পরাজয় স্বীকার করছি।

ভোটের ফল নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করেছেন ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল। তিনি বলেছেন, প্রথমে আমরা হিমাচলপ্রদেশে জিতলাম। এখন আমরা কর্ণাটকে জয়ী হলাম। বিজেপি সব সময় কংগ্রেসমুক্ত ভারতের কথা বলত। কিন্তু দক্ষিণ ভারত এখন বিজেপিমুক্ত।

গত ১০ মে কর্ণাটকের ২২৪টি বিধানসভা আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হতেই প্রায় সব বুথফেরত সমীক্ষা কংগ্রেসকে নির্বাচনে এগিয়ে রেখেছিল। এ রাজ্যে সরকার গড়তে প্রয়োজন ১১৩ আসন, যা স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর সকাল ১০টার মধ্যেই পেয়ে যায় কংগ্রেস।

নিজ দলের পরাজয় মেনে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ এস বোম্মাই সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপিকর্মীদের নিরন্তর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা প্রয়োজনীয় আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা এই ফলাফল মেনে নিয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রতি মনোযোগ দেব।

কর্ণাটকে এবার নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন বেশির ভাগ মানুষ। রাজ্যের নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবার সব মিলিয়ে ভোট দিয়েছেন ৭৩ দশমিক ১৯ শতাংশ ভোটার।

রাজ্যের কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া বলেছেন, আগেই বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী মোদিও যদি আসেন, তা হলেও কিছু হবে না। এবার দেখুন কী হলো। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কর্ণাটকের নির্বাচনী প্রচারের শেষ ১০ দিনে মোদি সেখানে ১৭টি সভা করেছেন, রোড শো করেছেন অন্তত ১০টি। মোদির পাশাপাশি বিজেপিদলীয় কেন্দ্রীয় নেতা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কর্ণাটকে ঘাঁটি গেড়ে ৭ দিন সেখানে ছিলেন, চালিয়েছেন প্রচারণা।

এর পাশাপাশি উত্তর প্রদেশের বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানসহ অনেক বিজেপি হেভিওয়েট কর্ণাটকে প্রচারণা চালালেও শেষরক্ষা হয়নি।

৫ বছর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজেপি ১০৪ আসন পেয়ে রাজ্যের সবচেয়ে বড় দল হয়ে দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু এবার পুরো চিত্রটাই বদলে গেছে। ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রæতির পাশাপাশি মোদি হিন্দু দেবতা হনুমানকে (বজরঙ্গবলী) নিয়ে ধর্মীয় কার্ড খেললেও তা কাজে দেয়নি। কট্টর অবস্থান থেকে সরে পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠী, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণ কোটা বাড়ানোর প্রতিশ্রæতিও দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদির দল।

অন্যদিকে দুর্নীতি ও অপশাসনের ওপর জোর দিয়ে প্রচার চালায় কংগ্রেস। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং রাজ্য কংগ্রেসপ্রধান ডি কে শিবকুমার কংগ্রেসের প্রচারে নেতৃত্ব দেন। এছাড়া দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে, সাবেক সভাপতি সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধী, দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রসহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা অসংখ্য সমাবেশে বক্তৃতা দিয়েছেন। ভোটের অনেক আগে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রাও কর্ণাটকের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছিল।

কর্ণাটক কংগ্রেস সভাপতি ডি কে শিবকুমার কনকপুরা আসনে গতকাল ১২ রাউন্ড গণনার শেষে ৭০ হাজারেরও বেশি ভোট পান, আর বিজেপির প্রার্থী ও সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী আর অশোকা পান প্রায় ১১ হাজার ভোট। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শিবকুমার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার কথায়, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আর দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গেকে আমি কথা দিয়েছিলাম যে রাজ্যটা তাদের উৎসর্গ করব। এই জয়ের জন্য কৃতিত্ব দলের কর্মী আর নেতাদেরই প্রাপ্য।’

তাকে যখন কেন্দ্রীয় এজেন্সি অর্থ পাচারের মামলায় গ্রেপ্তার করে ৫০ দিন জেলে রেখেছিল, সেই সময়ে কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী, সেই ঘটনাও সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন শিবকুমার। কংগ্রেস দপ্তরে উৎসব : জয়ের দিকে এগোতেই গতকাল বেঙ্গালুরুতে প্রদেশ কংগ্রেস দপ্তর আর দিল্লির সদর দপ্তরে শুরু হয়ে যায় উৎসব। চলে বাজি-পটকা ফাটানো ও মিষ্টি বিতরণ। দলীয় কর্মীরা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে মিষ্টি বিতরণ করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শিবকুমারের বাড়ির সামনেও। দিল্লির সদর দপ্তরের সামনে সোনিয়া-রাহুলের ছবি নিয়েও উৎসব হয়েছে।

তবে কংগ্রেস আশঙ্কা করছে যে বিধায়ক কেনাবেচায় নামতে পারে বিজেপি। এই আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতা কমল নাথ। তিনি বলেন, অন্যান্য দলের বিধায়ক বা নির্দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে একটা চুক্তি করার চেষ্টা করতে পারে বিজেপি, তাদের কেনার চেষ্টা করতে পারে। তারা এটাই সব সময়ে করে থাকে।

দলীয় বিধায়কদের যাতে কেউ অর্থের টোপ না দিতে পারে, সেজন্য ভোট গণনা শুরুর আগেই কংগ্রেস বিধায়কদের এক জায়গায় রাখার জন্য বেঙ্গালুরুর কাছে একটা সাত তারকা রিসোর্ট বুক করে রেখেছে।

কংগ্রেসের এই আশঙ্কার ভিত্তি বছর চারেক আগের ‘অপারেশন কমল’ নামে পরিচিত কংগ্রেস ও জনতা দল (সেকুলার) এর সরকার ফেলে দিয়ে নিজেদের সরকার গঠনের এক সফল কর্মকাণ্ড। ২০১৮ সালের ভোটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েছিল বিজেপিই। তাদের আসন ছিল ১০৪টি, কংগ্রেস পেয়েছিল ৮০টি আর জনতা দল (সেকুলার) পেয়েছিল ৩৭টি আসন। প্রথমে বিজেপি সরকার গড়েছিল, কিন্তু আস্থা ভোটে তারা হেরে যায়, যৌথভাবে সরকার গড়ে কংগ্রেস এবং জনতা দল (সেকুলার)। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন জনতা দলের এইচডি দেবগৌড়া।

১৪ মাস পরে ক্ষমতাসীন দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন ১৭ জন বিধায়ক, যার ফলে বিজেপি আবারো সরকার গড়তে সক্ষম হয়। কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো বলে থাকে ওই ১৭ জনকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে দল ভাঙিয়ে নিয়ে গিয়েছিল বিজেপি।

এবার কর্ণাটকে কংগ্রেস একাই সরকার গড়তে চলেছে। এখন বড় হয়ে উঠেছে একটাই প্রশ্ন- কে হতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী? কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব এতদিন ধরে এ বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। বারবার বলেছে, ভোটের পরেই পরিষদীয় দলের সদস্যদের বৈঠকে তা নির্ধারিত হবে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আজ রবিবার সব জয়ী বিধায়ককে বেঙ্গালুরুতে আসতে বলেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App