×

সারাদেশ

আজমতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রয়োগে তৎপর ২ স্বতন্ত্র প্রার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩, ১১:১৩ এএম

আজমতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রয়োগে তৎপর ২ স্বতন্ত্র প্রার্থী

ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা জমে উঠেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে টানার জন্য নানা কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে দলবদ্ধভাবে হেঁটে গণসংযোগকালে লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি চলছে মাইকিংও। আবার বিভিন্ন পথসভায় বক্তৃতাকালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও তুলে ধরছেন। বহুল আলোচিত দুই স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুন ও হাতি প্রতীকের প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব তুলে ধরছেন।

একইভাবে আজমত উল্লা খান প্রতিদ্বন্দ্বী জায়েদা খাতুনের ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরছেন এবং অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রনিকেও নির্বাচনী মাঠে বিভিন্নভাবে ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে শাহনূর ইসলাম রনির কিছু বক্তব্যে মা জায়েদা খাতুনকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তবে রনি সরাসরি আজমত উল্লার বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য না দিলেও তার সমর্থকরা আজমত উল্লাকে ষড়যন্ত্রকারী আখ্যা দিয়ে সমালোচনায় সরগরম রয়েছেন। রনি বারবার গত সিটি নির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভোটারদের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন। ওই নির্বাচনে পুলিশ দিয়ে কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের তুলে নিয়ে নৌকায় একতরফা সিল মেরে তার বড় চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের সুনিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার কথা বারবার ভোটারদের স্মরণ করিয়ে দেয়ায় নির্বাচনী মাঠে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী জায়েদা খাতুন।

অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী পথসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে একজন ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আখ্যা দিয়ে বক্তব্য বিবৃতি অব্যাহত রেখেছেন। আজমত উল্লা খানের ষড়যন্ত্রের কারণেই জাহাঙ্গীরকে দল ও মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে তারা বারবার অভিযোগ করে আসছেন। এমনকি নগরীর সীমানা সংক্রান্ত ইস্যু দাঁড় করিয়ে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে গত ২০১৮ সালের গাজীপুর সিটি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের জন্যও আজমত উল্লা খানকে দায়ী করা হয়। তবে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি আজমত উল্লা খানকে বরাবরই পিতৃতুল্য উল্লেখ করে সম্মানসূচক সম্বোধন করতে দেখা গেছে। তার মুখে কখনই আজমত উল্লা খানের সমালোচনা শোনা না গেলেও তার সমর্থকরা আজমত উল্লার সমালোচনায় জাহাঙ্গীর আলমের চেয়েও একধাপ এগিয়ে রয়েছেন।

তারা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে কারা নির্যাতনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া ও মেয়রের চেয়ারে বসতে না দেয়ার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আজমত উল্লা খানকেই দায়ী করে থাকেন। প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনির বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম সরকারকে আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্রকারী হিসেবেও আজমত উল্লা খানকে দায়ী করে তাদের বক্তব্য দিতে দেখা যায়। আজমত উল্লা খান ওই মামলার সাক্ষীদের রিহার্সেল করে নূরুল ইসলাম সরকারকে হুকুমের আসামি হিসেবে ফাঁসান বলেও তারা অভিযোগ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাহাঙ্গীর সমর্থক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছার কারণেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। আজমত উল্লা খান স্থানীয় সরকারে (সাবেক টঙ্গী পৌরসভায়) দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করায় গাজীপুর সিটির রূপরেখা প্রণয়নে মন্ত্রণালয় থেকে তার পরামর্শ নেয়া হয়। ফলে নতুন সিটি করপোরেশনের দায়িত্বও তিনিই পাচ্ছেন বলে অনেকটা নিশ্চিত ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু বিশাল ব্যবধানে বিএনপি নেতা অধ্যাপক এম এ মান্নানের কাছে পরাজিত হয়ে গাসিকের প্রথম মেয়র হওয়ার ইচ্ছা পূরণ না হওয়ায় তিনি নির্বাচিত মেয়রের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেন। একই কারণে একইভাবে গাসিকের দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে পরবর্তী মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকেও মেয়রের চেয়ার থেকে হটানোর ষড়যন্ত্র শুরু করেন। আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনে আজমত উল্লা খানের আলোচিত উক্ত দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জায়েদা ও রনি নির্বাচনী মাঠে এখন ষড়যন্ত্রের এসব তথ্য ও তত্ত্ব তুলে ধরে ভোটারদের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এসব আলোচনা সমালোচনা ও বিষোদগারের মধ্য দিয়েই চলছে নির্বাচনী প্রচারণা।

অপরদিকে প্রচার মাইকের শব্দ দূষণের যন্ত্রণায় বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। মাইকের উচ্চ শব্দে তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিভাবকরা অভিযোগ করেন।

প্রার্থীদের গণসংযোগ : নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খান টঙ্গী তথা গাজীপুর সিটির প্রত্যন্ত ভাদাম এলাকার একটি জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেন। মুসল্লিদের দোয়া ও সমর্থন কামনা করে বক্তব্য রাখেন। এর পর ৫১, ৫২ ও ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও নির্ধারিত পথসভায় বক্তব্য দেন।

বক্তব্যে তিনি সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাপক দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। এসব টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার হলে নগরীর কোনো সমস্যা থাকত না। তিনি বলেন, আমি টানা ১৮ বছর টঙ্গী পৌরসভার দায়িত্বে ছিলাম। এরপর আরো দশ বছর অতিবাহিত হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে এতো দিনে আঠারো টাকারও দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারে নাই। অথচ বিগত দিনে এই সিটি করপোরেশনের দুর্নীতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, উচ্চ আদালতও এসব দুর্নীতি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন নগরীর সালনা কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে প্রচারণা শুরু করেন। এর আগে তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মসজিদে বক্তৃতায় মায়ের প্রতি সমর্থন ও দোয়া কামনা করেন। পরে তারা মা-ছেলে গাড়িযোগে তেলিপাড়া ও গাছাসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে গণসংযোগ ও পথসভা করেন।

পথসভায়, জায়েদা খাতুনের ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি গত তিন বছর সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালন করেছি। বাকি সময়টুকু আমাকে দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয়নি। আমার মা দেখেছে, ১৮ মাস তার সন্তানের ওপর কী নির্যাতন চালিয়েছে, সেজন্য মা সন্তানের পক্ষ নিয়েছেন, এই শহরের পক্ষ নিয়েছেন। এই গাজীপুরকে যাতে কেউ কলঙ্কিত করতে না পারে সেজন্য মা বলেছে আমি নির্বাচন করি, গাজীপুরের মানুষের কাছে যাই, যেহেতু সারাজীবন মানুষের সেবা করেছি, সেহেতু বাকি জীবনটুকুও মানুষের সেবা করতে চাই সেজন্য মেয়র প্রার্থী হয়েছি।’ তিনি বলেন, সন্তানের অসমাপ্ত কাজগুলো করার জন্য মা যেহেতু ঘর থেকে বের হয়েছেন সেহেতু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে মাকে আপনাদের মূল্যবান ভোটটা দিয়ে জয়যুক্ত করে নগরবাসীর সেবা করার সুযোগ দিবেন।

এদিকে হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি সকাল ১০টা থেকে টঙ্গী পূর্ব থানার স্টেশন রোড, নতুন বাজার, ব্যাংকের মাঠ, রেলওয়ে জংশন গোল চত্বর, নোয়াগাঁও, তিস্তার গেট, ফাইসন্স রোড ও চেরাগ আলী এলাকায় গণসংযোগ করেন। এরপর তিনি নগরীর বোর্ড বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং জামাতপূর্ব বক্তৃতায় মুসল্লিদের দোয়া ও সমর্থন কামনা করেন। এর পর বোর্ড বাজারে গণসংযোগ শেষে টঙ্গী পূর্ব থানার মিরাশপাড়ায় একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে রনি সরকার পৌঁছালে ওই সামাজিক অনুষ্ঠান নির্বাচনী সভায় রূপ নেয়। এসময় হাতি প্রতীকের স্লোগানে এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। পরে তিনি স্থানীয় আরিচপুর মধুমিতা রোডে গণসংযোগ শেষে বিকেল ৫টা থেকে কাশিমপুর অঞ্চলের ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ ও পথসভা করেন। এ সময় রনি এলাকার উন্নয়নে তার পরিবারের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভোটারদের সমর্থন কামনা করেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেন এবং মসুল্লিদের সমর্থন ও দোয়া কামনায় বক্তব্য রাখেন। পরে তিনি টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকায় গণসংযাগ ও স্থানীয় সাতাইশ চৌরাস্তায় পথ সভা করেন।

জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন দোয়া ও সমর্থন কামনা করেন। এর পর তিনি কাশিমপুর এলাকায় গণসংযোগ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App