×

মুক্তচিন্তা

বাঙালির চাকরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৩, ১২:৫৪ এএম

বাঙালির চাকরি

১৯৩১ সালে বাংলার গভর্নর স্যার ফ্রান্সিস স্ট্যানলি জ্যাকসন (১৮৭০-১৯৪৭)। বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট (স্পিকার) মহারাজা মন্মথ রায় চৌধুরী। বাংলায় অসন্তোষ বিরাজ করছে- সর্বভারতীয় চাকরিতে বাঙালির ঠাঁই নেই, এমনকি বাংলা প্রদেশে চাকরির যেসব শূন্য পদ, সেখানেও বাঙালির কদর নেই। ৩০ জুলাই অপরাহ্নে মণিন্দ্র দেব রায় মহাশয় প্রস্তাব রাখলেন, ভবিষ্যতে বাংলা সরকারের অধীনে সরকারি চাকরিতে সব শূন্যপদে কেবল বাঙালি এবং বাংলায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে যাতে নিয়োগ দেয়া না হয় কাউন্সিল সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক। রায় মহাশয় বললেন, এটি কেবল তার নির্বাচনী এলাকার দাবি নয়, সারা বাংলার মানুষের কণ্ঠস্বর এই প্রস্তাবে ধ্বনিত হয়েছে। প্রস্তাবের পক্ষে তার ইংরেজি বক্তব্যের সারসংক্ষেপ ভাষান্তর করে উপস্থাপন করা হলো : দয়া করে আমাকে ক্ষুদ্র প্রাদেশিকতা দোষে দুষ্ট মনে করবেন না। আমার দেশের বাঙালি নিজ বাসভূমে পরবাসী হয়ে আছে। চাকরির দরজা তাদের জন্য বন্ধ। বিহারের সরকারি চাকরি কেবল বিহারিদের জন্য, পাঞ্জাবের চাকরি পাঞ্জাবিদের, উত্তর প্রদেশের চাকরি কেবল সেখানকার লোকদের। কিন্তু বাংলার সরকারি চাকরির দরজা খোলা সবার জন্য। ব্যবসা-বাণিজ্য তো বহিরাগতদের হাতে গিয়েছেই, চাকরিতেও বাংলার অধিকার আর নেই। রাজপুতনার মরুভূমি থেকে কেবল লোটা আর কম্বল নিয়ে বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঢুকে পড়া বেনিয়ারা আমাদের প্রভু হয়ে বসেছে। পরিশ্রমী অবাঙালিরা তাদের উদ্যম ও শ্রমের ফল ভোগ করুক। এতে আমরা ঈর্ষান্বিত নই। বাংলার বর্তমান অবস্থার জন্য আমরাও কম দায়ী নই। বহিরাগতরা যখনই এসেছে চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য একের পর এক কব্জা করেছে, আমরা চুপচাপ মেনে নিয়েছি, বাধা দিইনি। ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা তরুণ বাঙালিদের কেবল কেরানি হওয়ার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পাছে ব্রিটিশের বাণিজ্যিক শোষণে বাধা পড়ে সেজন্য কোনো শিল্প-প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য পেশাগত শিক্ষা দেয়া হয়নি। আমি ভারতের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখে এসেছি। মাদ্রাজে সেখানকার প্রাদেশিক সরকারের চাকরিতে একজন বাঙালিও খুঁজে পাইনি। বোম্বে আর সিন্ধুতেও তাই। পাঞ্জাব, যুক্তপ্রদেশ আর বিহারে বাঙালিদের থাকারও জায়গা হচ্ছে না। বাংলার বাইরে অন্য প্রদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বাঙালিরা সেখানে পরদেশী। লর্ড সিনহা ঠিকই বলেছেন : ঊাবৎুড়হব পধহ ভরহফ ড়ভ লড়ন রহ ইবহমধষ বীপবঢ়ঃ ইবহমধষরং. বিশ্ববিদ্যালয় আর মহাবিদ্যালয় থেকে হাজার হাজার তরুণ বাঙালি স্নাতক শেষ করে বাংলার সরকারি অফিসগুলোর দরজায় মাথা ঠুকে মরছে। এমনকি সর্বভারতীয় চাকরিতেও অন্যান্য প্রদেশের লোকজন অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলার স্বার্থ রক্ষায় বাংলা সরকার যদি এগিয়ে আসে তাতে দোষের কিছু নেই। এমনকি যেসব ছোট পদে কায়িক পরিশ্রমই মুখ্য সেখানেও বাংলা সরকারের কর্মকর্তারা বিভিন্ন অজুহাতে বাঙালিদের বাদ দিয়ে অবাঙালিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিচ্ছেন। সেনাবাহিনীতে সুযোগতো আগে থেকেই কম, পুলিশের পদগুলোও দখল করে নিয়েছে অবাঙালি ভারতীয়রা। এই বাংলার কলকাতাই একসময় ভারতের রাজধানী ছিল। অন্যান্য প্রদেশ শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি করেছে। বাংলা কেবলই পিছিয়েছে। বাংলার হিন্দু-মুসলমান, নির্যাতিত-শোষিত, স্থায়ী নিবাসী, অ্যাঙ্গলো-ইন্ডিয়ান সবাই সুবিচার চায়- বাংলা সরকারের চাকরি কেবল আমাদেরই হোক। হাউস এ বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক। (বক্তব্যের এই পর্যায়ে স্পিকার মহারাজা মন্মথ রায় চৌধুরী চেম্বার ত্যাগ করলে ডেপুটি প্রেসিডেন্ট রেজাউর রহমান আসন গ্রহণ করেন।) সদস্য পি ব্যানার্জি এই প্রস্তাবে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে বাংলায় ডমিসাইলড কথাটি বাদ দেয়ার পরামর্শ দিলেন। তিনি আরো বললেন, বাংলার মানুষ পুলিশের চাকরি নিতে এগিয়ে আসে না- এ রকম একটা অপপ্রচার আছে। সাম্প্রতিক আইন অমান্য আন্দোলনের সময় বিহার ও অন্যান্য অঞ্চলের পুলিশ যখন বাংলার জনতার সঙ্গে পেরে উঠছিল না, বাধ্য হয়ে তখন অস্থায়ী ভিত্তিতে অল্পসংখ্যক বাঙালি মুসলমানকে পুলিশের চাকরি দেয়। সরাসরি কৃষিজমি থেকে উঠে আসা এই পুলিশ সদস্যরা দক্ষতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অল্পদিন পরই আবার তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। এই অবস্থায় রায় মহাশয়ের প্রস্তাবে তিনি দ্বিধাহীন সমর্থন ব্যক্ত করেন। বাবু ক্ষেত্র মোহন রায় প্রস্তাবে সায় দিয়ে বললেন, আমরা চিৎকার শুনে আসছি ‘বিহারিদের জন্য বিহার’, ‘বোম্বাইয়াদের জন্য বোম্বে’ আর ‘পাঞ্জাবিদের জন্য পাঞ্জাব’। কিন্তু বাঙালির জন্য বাংলা- এ কথা আামাদের মুখে আসছে না। চাকরি না পেয়ে কয়েকদিন আগে হতাশ এক বাঙালি যুবক পরিবারের ব্যয়ভার বহনে অক্ষম হয়ে নিজের ছেলেকে ছুরিকাঘাত করে স্ত্রীকে হত্যা করতে যায়। নিজেও বেছে নিতে চায় আত্মহননের পথ। ম্যানচেস্টার থেকে পড়াশোনা করে আসা দক্ষ ও উচ্চশিক্ষিত বি সি ভট্টাচার্য কাক্সিক্ষত পদ পেলেন না সিরামপুর উইভিং ইনস্টিটিউটে। অনেক দক্ষ ও মেধাবী বাঙালি প্রার্থীকে উপেক্ষা করে কলকাতা টেকনিক্যাল স্কুলে লেকচারারের পদ দেয়া হলো একজন পাঞ্জাবি আবেদনকারীকে। প্রস্তাবের সমর্থনে রায় বাহাদুর কেশবচন্দ্র ব্যানার্জিও বললেন, বিহার, আসাম, বার্মা যদি সেই অঞ্চলের জনগণের জন্যই হয়ে থাকে, তা হলে বাংলাও হবে কেবল বাঙালির। অন্য রাজ্যের তুলনামূলকভাবে কম যোগ্য লোককে বাংলায় পাঠিয়ে বাংলার যোগ্য প্রার্থীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। গাঁটের পয়সা খরচ করে কোনো বাঙালি আসামের শিলংয়ে একখণ্ড জমি কিনতে পারছে না। কেবল আসামেই নয়, অন্যান্য প্রদেশেও বাংলার মানুষের অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে। শান্তি শেখরেশ্বর রায় প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়ে বললেন, একটি মহল এই ধারণাটিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে যে, পুলিশ সার্ভিসে ওপরের দিকে পদগুলোতে নিয়োগ হবে ইংল্যান্ডের মানুষ আর নিচের দিকের পদে বাংলা ছাড়া অন্যান্য রাজ্যের। বাংলার সন্তান যদি যুক্তপ্রদেশ বিহার কিংবা প্রদেশে অন্য কোনো প্রদেশে প্রবেশাধিকার না পায়, তা হলে তাদের সন্তানদের জন্য বাংলার দরজা খোলা রাখার কোনো যুক্তি নেই। আনন্দ মোহন পোদ্দার প্রস্তাবের সমর্থনে বললেন, এখনি ব্যবস্থা না নিলে কেরানি বানানোর যে শিক্ষা আমাদের সন্তানরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রহণ করছে, সেই কেরানির পদও তাদের জন্য থাকবে না। স্যার ল্যান্সলট ট্রেভার্স বললেন, প্রস্তাবটি কতকাংশে গ্রহণযোগ্য। এখনো বাঙালি না বলে ‘বাংলার নাগরিক’ বলা সমীচীন হবে। গত ১৬৫ বছর ধরে আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যবর্গ এই দেশকে সেবা প্রদান করে আসছি। যেহেতু আমার মধ্যে বাঙালি রক্তের প্রবাহ নেই, কেবল সে অপরাধেই আমাকে চাকরির সুযোগ থেকে সরিয়ে রাখা সমীচীন হবে না। চাকরির বিষয়টিকে কেবল প্রাদেশিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করা উচিত। মৌলভি সৈয়দ জালালউদ্দিন হাসেমী প্রস্তাবটি সমর্থন করে বললেন, ব্যক্তিগতভাবে জেল খাটার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছেন ৯৯ ভাগ জেল ওয়ার্ডেনই অবাঙালি। বিশেষ করে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে যেসব দীর্ঘ সাজার কয়েদি রয়েছে তাদের অনেকেই ওয়ার্ডেনদের সঙ্গে তাদের ভাষায় কথা বলতে বাধ্য হয়ে নিজ মাতৃভাষা ভুলে গেছে। অতএব তার দাবি- বাংলার জেলখানা ওয়ার্ডেন বাঙালিই হতে হবে। কলকাতার পুলিশ সম্পর্কে সবাই জানে। অবাধ্য জনতা যত না গোলমাল করে, তার চেয়ে বেশি করে অবাঙালি পুলিশ। যখন নিয়োগের জন্য পাঠানো হয় সেখানেও শতকরা ৭৫ ভাগ নেয়া হয় অবাঙালি। বাবু সত্যেন্দ্র কুমার দাস হাউসে প্রশ্ন রাখলেন, কলকাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি এতটাই পচে গেছে চাকরির যোগ্য কোনো স্নাতক তৈরি করতে পারছে না? হাতেগোনা যে দু-চারজন বাঙালি সরকারি চাকরিজীবী রয়েছে, তাদের যোগ্যতা অন্যদের চেয়ে কম নয়। সুতরাং প্রস্তাবটি অবশ্যই গৃহীত হওয়া উচিত। খান বাহাদুর আবদুল মমিন বাঙালি বেকারদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেন বটে, বিরোধিতা করলেন প্রস্তাবটির। তিনি মনে করছেন চাকরির ব্যাপারে বাঙালি মোটেও বঞ্চিত হচ্ছে না। তাছাড়া ভদ্রলোক শ্রেণির বাঙালিই হোন বা সাধারণ বাঙালিই হোন- অনেক ধরনের চাকরিতে তারা যেতে চান না। তাদের মানসম্মান এতে ক্ষুণ্ন হয়। তিনি শান্তি শেখরেশ্বর রায়কে জিজ্ঞেস করলেন, তার জমিদারিতে যখন লোক নিয়োগ হয় তিনি বাঙালি না নিয়ে অন্য প্রদেশের লোক কেন নেন। দারোয়ান হতে হবে পশ্চিমের। বাবুর্চি হতে হবে উড়িয়া। পুলিশের চাকরি বাঙালিদের জন্য খোলা থাকলেও কেবল নোয়াখালী এবং চট্টগ্রামের লোক আবেদন করেছে, খুলনা ও বরিশাল থেকে অল্পসংখ্যক। হিন্দু হোক মুসলমান হোক জেল ওয়ার্ডেন পদের জন্য বর্ধমান বা রাজশাহীর কেউ আগ্রহী হবে না। বাবু কিশোরী মোহন চৌধুরী প্রস্তাবটিকে অযৌক্তিক মনে করে বললেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাম্প্রদায়িকতাকে উৎসাহিত করবে। বাংলাতে যদি কোনো যোগ্য মাড়োওয়ারি বসতি স্থাপন করতে চায় এবং তার যোগ্যতাবলে ভালো চাকরি পেয়ে যায় তাতে সমস্যা কোথায়। তাকে সে সুযোগ দেয়া উচিত। স্যার যদুনাথ সরকারও প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেন। বাঙালিদের অন্য রাজ্যে ঠাঁই না পাওয়ার অভিযোগটি যথার্থ নয় বলে মন্তব্য করলেন। তিনি নিজেও বাংলার বাইরে দুটি প্রদেশে চাকরি করেছেন। বাংলার বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে স্থানকাল নির্বিশেষে সব ধরনের মেধাবী লোকের জন্য দরজা খুলে রাখা। জোর দিয়ে যদুনাথ সরকার বললেন, হীনতা ও অন্ধত্ব নিয়ে এই সংকীর্ণ দেশপ্রেম বা ‘চধৎড়পযরধষ চধঃৎরড়ঃরংস’ প্রতিষ্ঠা করলে আমরা নিজেরাই নিজেদের কবর খুঁড়ব। মৌলভি সৈয়দ নওশের আলী ঘোর বিরোধিতা করলেন। বাংলার সংসদে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত হলে অন্যত্র বাঙালি খেদানো শুরু হয়ে যাবে। বাংলায় ডমিসাইলড কেউ যদি বাংলায় চাকরির না পায় সেটিও কম দুর্ভাগ্যজনক হবে না। স্যার ল্যান্সলট ট্র্যাভার্সের পরিবার ১৬৫ বছর ধরে ভারতে সেবা করার পরও যদি বাংলায় চাকরিপ্রার্থী হতে না পারে সেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ঐতিহাসিকভাবেই বাংলা বহিরাগত সবাইকে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বরণ করেছে। আর ১৭ টাকা/১৯ টাকা বেতনে চাকরিতে বাঙালিদের আগ্রহী না হওয়ার কারণও রয়েছে। তাদের ঘরে ভাত ও দুধের কোনো অভাব নেই। এখন যদি অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে থাকে তা হলে আতিথ্য একটু কমিয়ে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু এভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। স্যার ডব্লিউ ডি আর প্রেনটিস, ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বললেন, চাকরির নীতিমালা প্রণয়ন বিশেষ করে সর্বভারতীয় চাকরির ক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় সরকারই দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রাদেশিক সরকারের বলার কিছু নেই। তাছাড়া প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যোগ্য বাঙালি প্রার্থীর অভাবও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গতবারের সর্বভারতীয় আইসিএস পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ২২তম স্থান পেয়েছে বাঙালি প্রার্থী। প্রকৃতপক্ষে বড় পদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বাঙালি প্রার্থী টিকতে পারছে না। এর দায় বাঙালিদের। সরকার এর জন্য দায়ী হতে পারে না। স্যার প্রেনটিস প্রাদেশিক চাকরিবিধিও ব্যাখ্যা করলেন। বাঙালির শারীরিক অযোগ্যতা ও চাকরিতে অনীহার প্রসঙ্গটি তুলে ধরলেন। উপযুক্ত বাঙালি পাওয়া যায়নি সে অজুহাতে কোনো পদ বছরের পর বছর শূন্য রাখা যায় না। সুতরাং তিনি কাউন্সিলে আনতে প্রস্তাব প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালেন। সার্বিকভাবে হাউসে প্রস্তাবের প্রতিকূল একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। প্রস্তাবক মনিন্দ্র দেব রায় মহাশয় কাউন্সিলের অনুমতিক্রমে প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের আবেদন জানালেন। আবেদন গৃহীত হলো। বাঙালির দাবি আর একবার প্রত্যাখ্যাত হলো। একটি পাদটীকা : স্যার ফ্রান্সিস স্ট্যানলি জ্যাকসন ১৯২৭ থেকে ১৯৩২ বাংলার গভর্নর ছিলেন। ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে তার খ্যাতি ছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন হলে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে গুলি করেন ২১ বছর বয়সি বাঙালি নারী বীনা দাস। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, তিনি অক্ষত রয়ে যান। হত্যা প্রচেষ্টার দায়ে বীনা দাস ৯ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করে মুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে রিভলবার সরবরাহকারী ঢাকার বিক্রমপুরের মেয়ে কল্পনা দাসগুপ্তা ১৯৩৬ পর্যন্ত কারাবাস করে পরে গৃহবন্দি থাকেন, ২০০০ সালে তিনি প্রয়াত হন।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App