×

সারাদেশ

পাইকগাছার বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, আতঙ্কে এলাকাবাসী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৩, ০৪:২৯ পিএম

পাইকগাছার বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ছবি: ভোরের কাগজ

পাইকগাছার বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, আতঙ্কে এলাকাবাসী
পাইকগাছার বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, আতঙ্কে এলাকাবাসী

মেরামতের কাজ চললেও শঙ্কা মুক্ত নয় পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টারের অভাব

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি, গড়ইখালী ও সোলাদানা ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াপদার বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ দ্রুত মেরামতের নির্দেশনা দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। নির্দেশনা অনুযায়ী বাঁধ মেরামত নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ। কিন্তু সেগুলি শঙ্কামুক্ত নহে। অপরদিকে ইউনিয়ন দুটিতে পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টারেরও মারাত্মক অভাব রয়েছে। দেলুটি ইউনিয়নে ৪টি দ্বীপে একটি মাত্র সাইক্লোন সেল্টার এবং গড়ইখালী ইউনিয়নের সবথেকে ঝুকি পূর্ণ শিবসা নদীর ধারে কোনো সাইক্লোন সেল্টার নেই।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোকা উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে এমন আশঙ্কায় একদিকে যেমন উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে, তেমনি যে সব এলাকার ওয়াপদার বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে সেসব এলাকার মানুষ রয়েছেন আতঙ্কে। উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নটি ৪টি দ্বীপ বেষ্টিত। এখানকার ৪টি পোল্ডারই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।

২২ নং পোল্ডারের কালিনগর, তেলিখালী ও দারুণ মল্লিক এলাকার বেড়িবাঁধ নদীভাঙ্গনে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ সেটি মেরামতের কাজ চলছে। ২১ নং পোল্ডারের জিরবৃনিয়া. চৌমোহনী খেয়াঘাটের ওয়াপদার বেড়িবাঁধ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ। এছাড়া ২০ ও ২০/১ পোল্ডারের চকরিবকরি এলাকার বাঁধ দুটিও ক্ষতিগ্রস্থ। জলমহল ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বাঁধগুলি মেরামতের কাজ হচ্ছে। ৪টি দ্বীপ বেষ্টিত দেলুটি ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার লোকের বসবাস। অথচ ইউনিয়নে মাত্র ১টি সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না।

ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানিয়েছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় কর্মসৃজনের লোক দিয়ে পরিষদের পক্ষ থেকে বাঁধগুলি মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। তবে বাঁধ মেরামত করা হলেও সেগুলি শঙ্কামুক্ত নহে। মারাত্মক ঘুর্ণিঝড় হলে এসকল বাঁধ রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে যাবে। এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ খুবই প্রয়োজন। অপরদিকে ইউনিয়নটি ৪টি দ্বীপ বেষ্টিত। অথচ মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ এই এলাকায় মাত্র ১টি সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান এলাকায় আরো সাইক্লোন সেল্টারসহ আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।

অপরদিকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের মধ্যে সুন্দরবন সংলগ্ন গড়ইখালী ইউনিয়নের ১০-১২ নং পোল্ডারের খুদখালী এলাকার ওয়াপদার বেড়িবাঁধটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোপূর্বে ফনি, বুলবুল ও আম্ফানসহ প্রায় প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে খুদখালী এলাকার বাঁধ ভেঙে যায়। এ জন্য ঘূর্ণিঝড় মোকা যত ঘনিভূত হচ্ছে এলাকার মানুষের মধ্যে ততবেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। মফিজুল সানার বাড়ি হতে মিজানুর গাজীর বাড়ি পর্যন্ত কয়েক’শ ফুট এলাকা জুড়ে বাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ। দুর্যোগ আঘাত হানলে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধটি ভেঙ্গে পাইকগাছার গড়ইখালী ও চাঁদখালী এবং কয়রার আমাদী ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধটি পরিদর্শনকালে গড়ইখালী ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আব্দুস সালাম কেরু এ আশঙ্কার কথা জানান।

স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল শেখ জানান, আমরা প্রতিটা মুহূর্ত উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি। এদিকে খুদখালী, বাইনতলা ও আলমতলার ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধের উন্নয়নে ৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী আরাফাত হোসেন জানান, আমরা প্রাথমিক কাজ শুরু করেছি, মূল কাজ শুরু করতে একটু দেরি হবে, তবে দুর্যোগ আঘাত হানার সম্ভাবনা দেখলে আমরা দ্রুত বস্তা ডাম্পিং করে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ রক্ষা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার জানান, ইতোমধ্যে আমার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ চিহ্নিত করে সেগুলো মেরামতের কাজ শুরু করেছি। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হবে। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম কেরু জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার লোকের বসবাস। অথচ ইউনিয়নে মাত্র ৩টি সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে। তার এলাকার দক্ষিণ কুমখালী ও উত্তর কুমখালী এলাকার শিবসা নদীর ধারে কোন সাইক্লোন সেল্টার নেই। অথচ এই এলাকাটি অনেক বেশি ঝুকিপুর্ণ। তিনি তার এলাকায় আরো সাইক্লোন সেল্টার কিংবা আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।

এছাড়া সোলাদানা ইউনিয়নের পাটকেলপোতা এলাকার শিবসা মোহনার ওয়াপদার বেড়িবাঁধটি অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা পঞ্চানন সানান জানান, বাঁধটি দ্রুত মোরামত করা না হলে যে কোন সময় সেটি ভেঙে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি সভা করে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সকল ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়েছি। নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্টরা এলাকার বাঁধ মেরামত কাজ করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App