×

জাতীয়

ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ মোকাবিলায় চট্টগ্রামে ব্যাপক প্রস্তুতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৩, ০৩:৩০ পিএম

https://www.youtube.com/watch?v=DZBhi9S3adk

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ মোকাবিলায় চট্টগ্রামে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জানমাল রক্ষায় প্রস্তুত রয়েছে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ১ হাজার ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র ও প্রায় ১৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ছয় লাখের অধিক মানুষকে দুর্যোগকালীন আশ্রয় দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও রেড ক্রিসেন্ট নানা প্রস্তুতি নিয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত সরঞ্জামসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, সিভিল সার্জন কার্যালয়, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের রেসকিউ বোট ও মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলার সম্ভাব্য প্রাথমিক চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলায় ত্রাণ কার্য হিসেবে চাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বন্দরে অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ : এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব অ্যালার্ট-৪ জারি করেছে। ফলে বন্দরের ইয়ার্ড ও জেটির সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, বর্তমানে পণ্যবাহী জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামা বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি বন্দরের জেটিতে অবস্থানরত মাদারভেসেল নিরাপদ স্থানে চলে গেছে। ১৮টি জাহাজ সরিয়ে নেওয়া হয় বিভিন্ন জেটি থেকে। বন্দর চ্যানেল থেকে সব লাইটার জাহাজও কালুরঘাট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত এলাকায় নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বন্দরের জেটিতে অপারেশনাল ইকুইপমেন্ট ভালো করে বেঁধে নিরাপদে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’র সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বন্দর কর্তৃপক্ষ চারটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষগুলো ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে।

বিমানবন্দরে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ : অন্যদিকে শুক্রবার রাত থেকে পরবর্তী নিদের্শ না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের বিমান ওঠা-নামা বন্ধ রেখেছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরে সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শাহ আমানত বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার তাসলিম আহমেদ বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার সকাল ৬টা থেকে রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট উঠানামা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রানওয়েতে কোনো কার্যক্রম চলবে না। রানওয়েসহ সংশ্লিষ্ট স্থানে আমাদের যেসব ইক্যুইপমেন্ট আছে, সেগুলো সুরক্ষিত করা হয়েছে। মোটা রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী আবহাওয়া অধিদফতরের বার্তা মেনে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ফায়ার সার্ভিস প্রস্তুত, স্পেশাল টিম গঠন : ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ মোকাবিলায় চট্টগ্রামে ২৫টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম সদর দপ্তরে ২৫ জনের একটি স্পেশাল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া এসব ফায়ার স্টেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল ও ছুটিতে যারা ছিলেন তারা স্টেশনে যোগদান করেছেন। সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক এম ডি আবদুল মালেক জানান, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি ফায়ার স্টেশনে সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী দল এবং একটি করে ওয়াটার রেসকিউ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামে ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত হাজারও ভলান্টিয়ার প্রস্তুত রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া ও সতর্কতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্স, জেমিনি বোট, চেইন স, হ্যান্ড স, রোটারি রেসকিউ স, স্প্রেডার, মেগাফোন, র‌্যামজ্যাক বা এয়ার লিফটিং ব্যাগ, ফাস্ট এইড বক্স ইত্যাদি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজসহ রাস্তাঘাট যান চলাচল উপযোগী করার জন্য ফায়ার সার্ভিস প্রস্তুত রয়েছে। তিন জনের ডুবুরি দল কক্সবাজার পাঠানো হয়েছে জানিয়ে এম ডি আবদুল মালেক বলেন, চট্টগ্রাম সদর দপ্তরে দুইটি ডুবুরি দল ছিল। তাদের একটি কক্সবাজারে পাঠানো হয়েছে। কারণ কক্সবাজারে উপকূলীয় অঞ্চলে তল্লাশি চালানোর জন্য ডুবুরি দলের প্রয়োজন পড়তে পারে। আরেকটি দল চট্টগ্রাম সদর দপ্তরে রাখা হয়েছে। তারা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন।

২৮৪ টি মেডিকেল টিম, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ : শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’র আঘাতে প্রাণহানি ঠেকাতে চট্টগ্রামে ২৮৪ টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। শনিবার (১৩ মে) সকালে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় মোট ২৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ১৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে ৫টি করে মোট ৭০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া জেলার ২০০ ইউনিয়নে জন্য একটি করে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ৯টি আরবান ডিসপেনসারিতে ৯টি ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫টি মেডিকেল টিম রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি খোলা হয়েছে জরুরি কন্ট্রোল রুম।

এদিকে দুর্যোগ পরিস্থিতিতে প্রাণহানি ঠেকিয়ে রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান জানিয়েছেন, হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. অংসুই প্রু মারমাকে প্রধান করে আরও ছয় সদস্যকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন- হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাজিব পালিত, সহকারী পরিচালক ডা. শাহীদা আক্তার, সহকারী পরিচালক ডা. আব্দুল মান্নান, সেবা (নার্সিং) তত্ত্বাবধায়ক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এবং ওয়ার্ড মাস্টার। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ও সার্জারি বিভাগের ডাক্তার-নার্সদের সমন্বয়ে কুইক রেসপন্স টিম এবং সকল বিভাগীয় প্রধানদের সমন্বয়ে চিকিৎসা মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে লজিস্টিক সাপ্লাই টিমও।

উপকূল ও পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাররতদের সরাতে মাইকিং : জানমালের ক্ষতি কমাতে উপকূলীয় এলাকা, সাগর তীরবর্তী জেলে পাড়া এবং নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ স্থানে চলে যেতে মাইকিং করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা হোছাইন মোহাম্মদ জানান, পতেঙ্গা, আকমল আলী রোডের বেড়িবাঁধসংলগ্ন জেলে পাড়া ও রাণী রাসমনিঘাটসহ নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে মাইকিং করে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনেকেই জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছেন। যারা সরিয়ে নেননি তাদের অতিদ্রুত স্থান ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় উপজেলা যেমন- সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড, মিররসরাইয়েও মাইকিং করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App