×

সম্পাদকীয়

হুন্ডি বন্ধে সরকারকেই পথ বের করতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৩, ১২:১৯ এএম

হুন্ডি বন্ধে সরকারকেই পথ বের করতে হবে

ডলার সংকট ভয়াবহতায় হুন্ডি এখন অর্থ পাচারের প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন হচ্ছে। কিন্তু সুরাহা হচ্ছে না। এমনিতেই হুন্ডি একটি ভয়ংকর রূপ ও মাধ্যম। অভিযোগ আছে, হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। এই অভিযোগ যে অমূলক নয়, তা স্পষ্ট হয় হুন্ডি ব্যবসায়ীদের প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা থেকে। মুহূর্তের মধ্যে তারা বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তরের ক্ষমতা রাখে। হুন্ডির মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিদেশে অর্থ পাচার করে বাড়ি বানাচ্ছেন, জমি কিনছেন, কারখানা গড়ছেন। বিদেশে অর্থ পাচার হলে দেশের অর্থনীতির ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তাতে কারো কোনো সন্দেহ নেই। গত বছর এক কর্মশালায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, অফিসিয়াল চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ৫১ শতাংশ। হুন্ডিতে এসেছে ৪৯ শতাংশ। এ তথ্য প্রমাণ করে অর্থ পাচার কত ভয়াবহতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সদ্য সমাপ্ত এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ১৬৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের মাসের চেয়ে ১৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ কম। আর বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। গতকাল ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সদ্য সমাপ্ত এপ্রিলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ১৬৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের মাসের চেয়ে ১৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ কম। ২০২২ সালের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি ডলার। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত অর্থ পাচার রোধে যত কথা হয়েছে, সে অনুপাতে কি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? হয়নি। অর্থ পাচার রোধ কঠিন বিষয় নয়। সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সব বিভাগেরই যদি সমতৎপরতা থাকে এটি রোধ করা সম্ভব। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্বজুড়ে চলছে ডলার সংকট। এই পরিস্থিতির শিকার হয়ে যখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে আর ব্যাংক ও খোলাবাজারেও চলছে ডলারের সংকট; তখন জানা গেল, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অর্থ পাচারের পরিমাণ বাড়ছে। বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আলাপ-আলোচনার কথাও শোনা যায় জোরেশোরে। কিন্তু কার্যত সেই উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। মাত্র একবার ২০০৭ সালে আমরা একটি ঘটনায় মাত্র ২১ কোটি টাকা ফেরত আনার কথা জেনেছি। এর পর এ ধরনের উদ্যোগ আর নেয়া হয়নি বা হলেও তার সফলতার খবর আমরা জানতে পারিনি। আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবো এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার আশা করছি। দেশে যে হারে দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে এবং এর মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, তাতে এসব লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App